“তার বিরুদ্ধে আরো মামলা হবে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করব,” বলেন ডিবি কর্মকর্তা হারুন।
Published : 02 May 2024, 04:08 PM
সিটি করপোরেশনের সিল ও স্বাক্ষর নকল করে মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে মিরপুরের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের কথাও জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের সনদ ছাড়াই রাতে মরদেহ দাফন করতেন মিল্টন। এক্ষেত্রে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সিটি করপোরেশনের নকল সিল দিয়ে মৃত্যু সনদ তৈরি করে রাখতেন।”
সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করার ছবি-ভিডিও শেয়ার করে আলোচনায় আসা মিল্টন সমাদ্দারকে বুধবার সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গত কয়েকদিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের নামে তার অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকলে ফের তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপরই তৎপর হয় পুলিশ।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
জালিয়াতির মামলা ছাড়াও অন্য অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা হবে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তার হাতে নির্যাতিত, প্রতারিত হয়েছেন এমন অভিযোগ নিয়ে দুই ব্যক্তি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রিমান্ডে এলে আমরা তাকে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করব।
“মিল্টন সমাদ্দার রাতে মরদেহ দাফন করতেন। লাশ দাফন করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কোনো সনদ না নিয়ে নিজেই লিখে স্বাক্ষর করতেন এবং সিটি করপোরেশনের সিল নিজেই মারতেন। সেই কাগজগুলো আমরা উদ্ধার করেছি।”
মিল্টনের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যক্তিদের মারধরের অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, “মিল্টন রিমান্ডে এলে তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। তবে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে সে ক্ষেত্রে আইনানুযায়ী তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে।”
মিল্টন তার ফেইসবুক পাতায় তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। এগুলো হল- চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন ও মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড। এর মধ্যে প্রথম দুটো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং পরেরটি কোম্পানি।
বরিশাল থেকে আসা মিল্টন রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন বলে দাবি করেন। রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটিকে তিনি বলেন আশ্রম।
তার পেইজগুলোতে সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের অনেক ছবি-ভিডিও শেয়ার করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দুস্থদের থাকার এ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। অনেক ভিডিওতে আশ্রমের বাসিন্দা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাবা-মা ও শিশুদের সন্তান সম্বোধন করেন মিল্টন।
এসব ভিডিওর পাশাপাশি তার ফেইসবুক পেইজে ১০টির বেশি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করেন তিনি। তার দাবি, ওই অনুদানেই চলে এসব কেন্দ্র।
গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসব কেন্দ্র ঘিরে অনিয়ম, বৃদ্ধদের চিকিৎসা না দেওয়াসহ নানান অভিযোগের খবর আসছিল। এরপর তৎপর হয় ডিবি। বুধবার সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে মিল্টনকে গ্রেপ্তারের পর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
পরে তিনি বলেন, “মিল্টন তার বাবাকে পেটানোর পর এলাকাবাসী তাকে পিটিয়ে এলাকা থেকে বের করে দেয়। এরপরে সে শাহবাগে ওষুধের দোকানে কাজ করত। পরে ওষুধ চুরি করার অভিযোগে কাজ হারায়। পরে কিছু লেখাপড়াও করে।
“গণমাধ্যমে এসেছে তার ওখানে অপারেশন থিয়েটার আছে। সে বেশিরভাগ লাশ রাতে দাফন করে। আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না বলে গণমাধ্যমে এসেছে। নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে ডাক্তারের সিল ছাপ্পড় জাল করে। সে ৯০০ লাশ দাফন করলেও ৮০০ লাশের ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। যারা লাশের গোসল দিয়েছে তারা কিডনির পাশে রক্তের দাগও পেয়েছে। তাকে আমরা ডিজজ্ঞাসাবাদ করব তিনি ডেথ সার্টিফিকেট নেন না কেন।”
আরো পড়ুন-
গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দার, 'অনিয়ম-অভিযোগ' নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি