তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
Published : 01 May 2024, 10:58 PM
মিরপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বুধবার সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তারের পর তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন।
সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করার ছবি-ভিডিও শেয়ার করে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসেন মিল্টন সমাদ্দার।
গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের নামে তার অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকলে আবারও তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরমধ্যেই তাকে গ্রেপ্তারের খবর দিল ডিবি।
ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, মূলত সংবাদমাধ্যমে মিল্টনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর রিমান্ডে এনে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তার ভাষ্য, “তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আমরা সব অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খু তদন্ত করব।”
মিল্টনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। এগুলো হল- চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশন ও মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড। এর মধ্যে প্রথম দুটো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এবং পরেরটি কোম্পানি।
বরিশাল থেকে আসা মিল্টন রাঙ্গামাটির চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন বলে নিজের পরিচয়ে তুলে ধরেন।
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়ায় অবস্থিত যেটিকে তিনি আশ্রম বলে তুলে ধরেছেন।
তার পেইজগুলোতে সড়কে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধ কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের অনেক ছবি-ভিডিও শেয়ার করা রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দুস্থদের থাকার এ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। অনেক ভিডিওতে তার আশ্রমের অধিবাসী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাবা-মা ও শিশুদের সন্তান সম্বোধন করেন মিল্টন।
এসব ভিডিওর পাশাপাশি তার ফেইসবুক পেইজে ১০টির বেশি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করেন তিনি। এই অনুদানেই চলে এসব কেন্দ্র বলে দাবি তার।
তবে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসব কেন্দ্রকে ঘিরে অনিয়ম, বৃদ্ধদের চিকিৎসা না দেওয়াসহ নানান অভিযোগের খবর আসে।
বুধবার রাত সোয়া ৯টায় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, মিল্টন তার বাবাকে পেটানোর পর এলাকাবাসী তাকে পিটিয়ে এলাকা থেকে বের করে দেয়। এরপরে সে শাহবাগে ওষুধের দোকানে কাজ করত। পরে ওষুধ চুরি করার অভিযোগে কাজ হারায়। পরে কিছু লেখাপড়াও করে।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “গণমাধ্যমে এসেছে তার ওখানে অপারেশন থিয়েটার আছে। সে বেশির ভাগ লাশ রাতে দাফন করে। আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না বলে গণমাধ্যমে এসেছে। নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে ডাক্তারের সিল ছাপ্পড় জাল করে।
”সে ৯০০ লাশ দাফন করলেও ৮০০ লাশের ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। যারা লাশের গোসল দিয়েছে তারা কিডনির পাশে রক্তের দাগও পেয়েছে। তাকে আমরা ডিজজ্ঞাসাবাদ করব তিনি ডেথ সার্টিফিকেট নেন না কেন।”
সাভার ও মিরপুরে মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্র থাকার তথ্য তুলে ধরে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “সে বলে ৬-৭শ লোক সেখানে থাকে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে ৩০-৪০ জেনের বেশি নেই। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চাইব কত সংখ্যক মানুষ তার ওখানে ছিল, মারা গেল কতজন। তিনি কিডনি বিক্রি করেন কি না- এসব আমরা তদন্ত করব।
”এই ধরনের প্রশ্নগুলো আসার পরেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি।”
তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, বাচ্চা শিশুদের ওপর হামলা, স্বজনরা গেলে মারপিট এসব বিভিন্ন জায়গায় যে টর্চার সেল বানিয়েছে…সবই তদন্তে হবে।”