‘দরকার কী এত নিখুঁত হওয়ার!’ এমন কথা বলা যাবে না যারা খুঁতখুঁতে।
Published : 31 Oct 2023, 11:26 AM
আশপাশে অনেক মানুষই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা প্রচণ্ড মাত্রায় নিখুঁত থাকতে পছন্দ করেন।
হতে পারে সে সহকর্মী, জীবনসঙ্গী, বন্ধু। তবে ‘পারফেকশনিজম’ থেকে উৎকণ্ঠায় ভোগার পরিমাণও বাড়ে।
মার্কিন মনোবিজ্ঞানি ড. এলিজাবেথ লম্বার্ডো বলেন, “ব্যর্থতার ভয়ে ভীত হওয়া থেকে সব বা কিছুই না করার মানসিকতা থাকে ‘পারফক্টশনিস্ট’দের।”
হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “তাদের মধ্যে যে অবস্থা কাজ করে তা হল ‘নিজের যোগ্যতা’, অর্থাৎ মনে করে- আমি যদি এটাতে সাফল্য অর্জন করতে পারি, তবে আমিই হব উৎকৃষ্ট।”
যদিও একদিম নিখুঁত হওয়া সম্ভব না। তবে এই চিন্তায় আটকে থেকে অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে একজন মানুষ।
‘পারফেকশনিজম’ বলতে যা বোঝায়
‘আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন’য়ের ব্যাখ্যা অনুসারে, “পরিস্থিতিতে প্রয়োজনের তুলনায় অন্যদের বা নিজের কাছে অত্যন্ত উচ্চ বা ত্রুটিহীন-ভাবে কাজ করার প্রবণতা হল ‘পারফেকশনিজম’।
অন্যভাবে বললে এটা কোনো মানসিক রোগ নয়, বরং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মেডিকেল এডুকেশন’য়ে ২০২০ সালের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, ‘এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই রয়েছে। কিছু মানুষ নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করলেও ছোটখাট ভুল মেনে নেয়। আবার অনেকে ব্যর্থতার ভয়ে ভীত হয়, আর এরাই ভোগে দুশ্চিন্তায়। যেখান থেকে দেখা দেয় বিষণ্নতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা।’
নিখুঁত হওয়ার প্রবণতা থেকে উৎকণ্ঠায় ভোগা
নিখুঁত হওয়ার প্রবণতা থেকে দুশ্চিন্তায় ভোগার সম্পর্ক রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ‘স্কুল অফ সাইকোলজি অ্যান্ড স্পিচ প্যাথোলজি অ্যান্ড কার্টিন হেল্থ ইনোভেইশন রিসার্চ ইন্সটিটিউট’য়ের করা ‘ক্লিনিকাল সাইকোলজি রিভিউ’তে ২০১১ সালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়- এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ উৎকণ্ঠা, সামাজিক চাপ, ভয় এবং ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)।
‘অ্যাংক্সাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা’ জানাচ্ছে- যারা সামাজিক চাপে ভোগেন তারা অন্যদের সমালোচনার শিকার হওয়ার ভয়ে থাকেন। ফলে তাদের জন্য সামাজিকভাবে মেলামেশার বিষয়টা মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।
খুব উচ্চ মান ধরে রাখতে গিয়ে উদ্বেগের কারণে মানুষ তার নিজস্বতা হারাতে পারে।
খুঁতখুঁতে হওয়ার বিপদ
কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে ঘন ঘন নিখুঁত হওয়ার চিন্তা থেকে উৎকণ্ঠায় ভোগার মতো মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়।
যেমন ধরা যাক ‘ইউনিভার্সিটি অফ পেনসালভিনিয়া’র মনস্তত্ত্ব বিভাগের করা গবেষণার কথা। ‘কগনেটিভ বিহেইভিয়র থেরাপি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার জন্য ৩৫৬ জনকে তাদের নিখুঁতবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক চাপে ভোগার বিষয়ে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।
যাতে উল্লেখ ছিল ‘আমাকে সেরা হতেই হবে’, ‘যাই করি না কেনো, যথেষ্ট মনে হয় না’, ‘আমার কাজ হবে ঝামেলা মুক্ত’।
সার্বিকভাবে গবেষকরা দেখতে পান, যারা ঘনঘন নিখুঁত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন তাদের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ‘জেনারালাইজড অ্যাংক্সাইটি ডিজঅর্ডার (জিএডি)’ এবং পিটিএসডি’র লক্ষণ রয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে ‘রিভিউ অফ জেনারেল সাইকোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় বলায় হয় এই ধরনের সমস্যায় যারা আছেন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা গেছে।
যেভাবে অভ্যস্ত হওয়া উচিত
যারা নিখুঁত হতে পছন্দ করেন তাদের সাথে মেশার উপায়ও রয়েছে। আর সে যদি প্রিয় মানুষ হয় তবে তার উদ্বিগ্ন চিন্তা শান্ত করার দায়িত্ব নেওয়াই উচিত হবে। তাই যা করা উচিত তা হল-
‘এতটা নিখুঁত হতে হবে না’- এমন কথা তাদের বলা যাবে না। বরং এভাবে বললে, তাদের জন্য সবচেয়ে বাজে বিষয় হবে।
তাই ড. লম্বার্ডো পরামর্শ দেন, “বরং তার প্রবলতাকে নির্দিষ্ট করে, তার মাঝে কোনো বিষয়টা পছন্দ করছেন সেটা জানান।”
ধরা যাক- আপনার কোনো পরিবারের সদস্য যদি নিখুঁতবাদী হয় এবং কাজে গড়বড় করে কোনো কারণে তবে যাই হোক না কেনো তাকে নিয়ে আপনি কতটা গর্বিত সেটা জানান। আর নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা ‘বন্ধ কর’ কথাটা বলা যাবে না।
‘অবশ্যই’ ব্যাপার থেকে বের হয়ে আসা: ‘পারফেক্টশনিস্ট’রা প্রায় সময় ‘অবশ্যই’ কথাটার গুরুত্ব দেয়। যদি নিজেকে এই কথার মাঝে খুঁজে পান তবে একটু অন্যভাবে চেষ্টা করে দেখতে হবে।
যেমন- বাসায় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কিন্তু ভাবুন একবার- আপনি কি অনুষ্ঠানটা করছেন ভালো সময় কাটানোর জন্য, নাকি কী কী বিষয় ভুল হতে পারে সেটার জন্য।
কার্যকর সমাধান খোঁজা: বিফলতা নিয়ে সাধারণ ভয় কাজ করে ‘পারফেক্টশনিস্ট’দের। এটা যদি ঠিক মতো না-ই হয়, তবে কেনো এতকিছু করবো- এরকম একটা বিষয় কাজ করে।
ধরা যাক- আপনার কোনো বন্ধু বললো, “আমি ব্যায়ামাগারে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সময় পাচ্ছি না বলে যাওয়া হচ্ছে না। তাই ব্যায়াম করাও হচ্ছে না।”
এই ক্ষেত্রে বন্ধুর এই সমস্যাকে নির্দিষ্ট করে না দেখিয়ে তাকে সমাধান দেওয়া যেতে পারে এভাবে- ব্যায়াম করার সময় না পেলেও অন্তত অফিসে কাজের ফাঁকে কিছু ‘স্ট্রেচিং’ করাই যায়। অথবা সপ্তাহের ছুটির দিনে হাঁটাও যেতে পারে।
আরও পড়ুন