নিজের ছবি বার বার দেখলেও হতাশা জাগতে পারে।
Published : 07 Apr 2023, 02:59 PM
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যের ছবি দেখে হা-হুতাশের কিছু নেই।
তবে ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রামে অন্যের রিল্স, সেলফি, ভিডিও, ছবি দেখতে দেখতে যদি মনে হয়, তাদের জীবন কত আনন্দের, আর আমার জীবন দুঃসহ- তাহলেই সমস্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’র করা সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাজে প্রভাব বেশি পড়ছে বয়সে কিশারীদের ওপর।
২০২১ সালে শরতের সময়ে সংগ্রহ করা তথ্য নিয়ে, এই বছর মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে অঙ্কিত হয়েছে উচ্চবিদ্যালয় পড়ুয়াদের মানসিক অস্থিরতার চিত্র। কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর সময় থেকে এই জরিপের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়।
প্রকাশিত ফলাফলের বরাত দিয়ে সিএনএন ডটকম জানায়, ২০২১ সালে ৫৭ শতাংশ তরুণী বেশিরভাগ সময় হতাশায় অথবা বিষাদে ভুগেছেন। এই তুলনায় তরুণদের সংখ্যা অর্ধেক হলেও আশঙ্কাজনক অবস্থানে রয়েছে, যা কিনা ২৯ শতাংশ। আর পাঁচজনের মধ্যে একজনকে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
ফলাফলে আরও জানানো হয়, অন্তত তিনজন কিশোরীর মধ্যে একজন আত্মহত্যার জন্য জোড়ালো ভাবে চেষ্টা করেছে। তাদের এই আচরণের জন্য পূর্ববর্তী জরিপে উঠে আসা তরুণীদের যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা ও তরুণদের ইন্টারনেট মিডিয়াতে বাজে মন্তব্য পাওয়ার মতো বিষয়গুলো প্রভাব ফেলছে।
পারস্পারিক সম্পর্ক থাকলেই এই ধরনের ঘটনা সবসময় ঘটবে তা নয়। তবে সম্ভাবনাগুলো ফেলেও দেওয়া যায় না।
এই বিষয়ে সিএনএন’কে ‘বস্টন চিল্ড্রেন হসপিটাল’য়ের ‘সাইকিয়েট্রি অ্যান্ড বিহেইভিয়োরাল সায়েন্স’ বিভাগের মনোবিজ্ঞানী কেনিশিয়া সিনক্লেয়ার-ম্যাকব্রাইড বলেন, “এটা সুস্পষ্ট যে গড়ে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল মিডিয়াতে সময় কাটাচ্ছে আর সেসবের প্রভাব পড়ছে তাদের মানসিক অবস্থায়।”
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি এই সমস্যার নাম দিয়েছেন, ‘একাকিত্ব ও পরাভূত হওয়ার মহামারী’।
তিনি আরও বলেন, “এটা হয়ত খুবই সাধারণভাবে শুরু হয়। প্রথমে তেমন কিছুই মনে হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনে হয়ত দেখা যাচ্ছে, সে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছে পুষ্টিকর খাবার বানাচ্ছে। তাকে দেখে অনুসরণ করতে ইচ্ছে হল; যা কি-না স্বাভাবিক আর মজারও হতে পারে। তবে এই ধরনের জিনিস বারবার দেখতে দেখতে গর্তে পড়ে যেতেই পারে। বিশেষ করে সাজসজ্জার বিষয়ে এরকম হয়।”
তিনি আরও বলেন, “ডিজিটাল মিডিয়াতে মানুষ নিজেকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। অথচ কেউ ক্রুটিহীন নয়। নানান ধরনের ফিল্টার, ফটোশপ, প্রসাধনী ও মেইকাপের সমন্বয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের যেভাবে দেখা যায়, সেগুলো দেখে বয়ঃসন্ধিকাল পার করা কিশোর-কিশোরীর মনে হতেই পারে, ‘আমি তো দেখতে ওর মতো নিখুঁত না’।
“তবে বিষয় হচ্ছে, যাকে দেখা যাচ্ছে সেও নিখুঁত না। কিন্তু আপনি সেটা জানতে পারছেন না। কারণ আপনি তার ‘সোশাল মিডিয়া ফিড’ দেখছেন বাস্তব জীবনযাত্রা দেখছেন না।”
সেলফির প্রভাব
আর একেই বলা হচ্ছে ‘সেলফি ইফেক্ট’।
কানাডা’র ‘ইয়োর্ক ইউনিভার্সিটি’ ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ‘ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে- ফিল্টার করা অপরিসিম ছবির ভাণ্ডার দেখতে দেখতে, অর্থাৎ ‘স্ক্রল’ করতে করতে একসময় নিজের ব্যক্তিগত জীবন, মনমেজাজ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
এমনকি ঘষামাজা করা নিজের ছবি বা সেলফি বারবার দেখলেও মনের মধ্যে একসময় অসুখীভাব জেগে উঠতে শুরু করে। শুধু তাই নয় স্মার্ট ফোনের ক্যামেরাগুলোও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কারণ এসবে ভালো ছবি এমনিতেই ওঠে।
ফলে নিজের ছবি দেখতে দেখতে একসময় মনে হয়, ‘আমিতো আসলে দেখতে এরকম না’।
আরও পড়ুন