‘কেনো যে এরকম করলাম’- এই ধরনের ভাবনা মাথায় আসা মানেই অতীতের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামাচ্ছেন।
Published : 25 Nov 2019, 02:23 PM
আর এই অতিরিক্ত চিন্তার বাজে প্রভাব পড়ে শরীরে।
অতীতের কোনো ঘটনা নিয়ে আক্ষেপ, ওমনটা না করে এমনটা করলে কেমন হত কিংবা পূর্বের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও হিসেব কষে যাওয়াকেই এক কথায় অতিচিন্তা কিংবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের করা এক গবেষণা অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ এই কাজ করে থাকেন। ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা কমে আসে ৫২ শতাংশে।
মজার ব্যাপার হলো এদের অনেকেই মনে করেন অতীত হাতড়ে বেড়ানোর মাধ্যমে তারা নিজের জন্য ভালো কিছু করছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটা উল্টো।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ার’য়ের ‘সেন্টার ফর স্ট্রেস অ্যান্ড হেলথ’ বিভাগের পরিচালক ডেভিড স্পিগেইল বলেন, “অনেকসময় একটি সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার ক্ষতি খোদ ওই সমস্যার কারণে হওয়া ক্ষতির মাত্রাকে ছাপিয়ে যায়।”
অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে শরীরে নানান প্রভাব পড়ে।
ভেবেই দিন গেলো, করা আর হল না: কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার করার কারণে অসংখ্য সম্ভাব্য করণীয় মাথায় আসে। তবে সমস্যা হল সিদ্ধান্ত স্থির করাই তখন মুশকিল হয়ে যায়।
ইয়েল স্ট্রেস সেন্টারের পরিচালক রাজিতা সিনহা বলেন, “এমন কোনো সম্ভাব্য ফলাফলে আটকে যেতে হয়, যা হয়ত বাস্তবে কখনই হবে না। আর এখানেই মানুষ আটকে যায়, ফলে কিছুই আর করা হয়না। আপনি যদি কোনো পদক্ষেপ না নেন তবে বিফল হবেন না, আবার সফলও কিন্তু হবেন না। আর এসময় ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কাই বাড়ে। কারণ অনেকগুলো সম্ভাব্য পদক্ষেপ থেকে একটি বেছে নিতেই বেশি মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন।”
এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গন হেলথ’য়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লরা প্রাইস বলেন, “অতিরিক্ত চিন্তার করার কারণে একজন মানুষের ইন্দ্রিয় ভোঁতা হয়ে যায় এবং তার ফলাফল হয় এমন একটি সিদ্ধান্ত যা হয়ত আপাতদৃষ্টিতে ভালো ছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ধ্বংসাত্বক।”
সৃজনশীলতার অবক্ষয়: মস্তিষ্কের কিছু অংশ নিষ্ক্রিয় থাকলে মানুষের সৃজনশীলতা বাড়ে। অতিরিক্ত চিন্তায় মগ্ন থাকলে মস্তিষ্কে জং ধরে, সৃষ্টিশীল চিন্তাগুলো ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকে। এটা ঠিক যে কিছু বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলে নতুন পন্থা বেরিয়ে আসে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা মানসিকভাবে আপনাকে বদ্ধ করে ফেলে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে ‘এমআরআই’ যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকাবস্থায় কঠিন সহজ মিলিয়ে কিছু ছবি আঁকতে বলেন। যে ছবি আঁকা যত কঠিন, তাতে অংশগ্রহণকারীদের ততই বেশি চিন্তা করতে হয় এবং ছবি আঁকায় তাদের সৃজনশীলতা ততই কমতে থাকে।
কর্মশক্তি হ্রাস: চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা, দুটোতেই মস্তিষ্কের উপর দিয়ে ধকল যায়, খরচ হয় কর্মশক্তি।
লরা প্রাইস বলেন, “শারীরিক পরিশ্রম নেই কিন্তু মাথায় চিন্তার ঝড় নিয়ে দিন কাটানো মানুষকে দ্রুত অবসাদগ্রস্ত করে তুলবে।”
স্পিগেইলের মতে, “অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার করে আমরা নিজেদের মানসিক চাপ নিজেই বাড়াচ্ছি, তৈরি হচ্ছে ‘কর্টিসল’ হরমোন। ফলে ক্লান্ত হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু ফলাফল আসছে না। এ যেন ভুল গিয়ারে গাড়ি চালানো, ইঞ্জিন পুরোদমে কাজ করছে ঠিকই কিন্তু গাড়ি খুব একটা গতি পাচ্ছেনা।”
ঘুমের সমস্যা: মাথায় রাজ্যের চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকলে ঘুম হবে না এটাই স্বাভাবিক। ঘুমানোর জন্য শরীর শান্ত হতে হবে, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমতে হবে। কিন্তু মাথায় চিন্তার ঝড় বইলে এমনটা হবে না ফলে ঘুমাতে পারবেন না। আর ঘুম পূরণ না হলে পরদিন কাজ করা স্পৃহা হারাবেন, শরীরচর্চা কমে যাবে। জীবনযাত্রায় সব স্বাস্থ্যকর দিকই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে।
খাওয়া রুচি: মানুষ ভেদে এক্ষেত্রে প্রভাব ভিন্ন। দুশ্চিন্তায় কারও খাওয়া বন্ধ হয়, কারও আবার লাগামহীন হয়ে যায়। খাওয়ার ব্যাপারটা দুশ্চিন্তা থেকে সামান্য অন্যমনস্ক করে যা স্বস্তিদায়ক। আর এসময় মানুষ বেছে নেয় সবচাইতে সুস্বাদু কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবারটাই। প্রক্রিয়াজাত চর্বি, চিনি ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর উপাদানে ভরপুর খাবারগুলো ‘কমফোর্ট ফুড’ হিসেবে হয়ত একারণেই খ্যাত।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন