দিন শেষে সুখী হতে সবাই চায়। আর সেটা খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমও আছে।
Published : 18 Sep 2024, 04:59 PM
সুখের সঙ্গা একেক জনের কাছে একেক রকম। আর জীবনের প্রতি ধাপে এই সঙ্গায় পরিবর্তনও আসে।
অনেকেই মনে করেন তারা সুখী, তবে অনেক সময় সেটা ভুলও হয়।
আনন্দ, ভালোবাসা, উদ্দেশ্য, অর্থ, স্বাস্থ্য, প্রেম, বন্ধুত্ব, সফলতা- এসবের বাইরে একটি বিষয় সুখের প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে; সেটা হল ‘সম্পর্ক’।
এখানে কোনো রোমান্টিক সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে না। বরং একজন মানুষের অন্তত দু’চারজন থাকা দরকার যাদের পাশে পাওয়া যায় সব সময়।
সিএনএন ডটকম’য়ের একটি পডকাস্ট’য়ে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন ডা. রবার্ট ওয়াল্ডিংগার।
‘হার্ভার্ড স্টাডি অফ অ্যাডাল্ট ডেভেলপমেন্ট’য়ের এই পরিচালক- এলাকা ভিত্তিক এবং সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা গবেষণার ফলাফল থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন।
১৯৩৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই গবেষণায় প্রথমে শুধু পুরুষদের পর্যবেক্ষণ করা হলেও, সাম্প্রতিক যুগ থেকে নারীদেরও যুক্ত করা হয়।
সুখী জীবনের নানান উপাদান পাওয়া গেলেও, প্রধান প্রভাবক হিসেবে এসেছে, ‘ভালো মানের সম্পর্ক’য়ের কথা।
ওয়াল্ডডিংগার বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমরা খুঁজে পেয়েছি, সেটা হল অন্তত কিছু মানুষের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ বা সম্পর্ক থাকা দরকারী। কারণ জীবনের পথচলায় সবারই কারও না কারও স্পর্শের প্রয়োজন হয়।”
“আর নিজেকে আলাদা করে রাখে এমন মানুষের চাইতে যারা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে জীবন চালায়, তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, দীর্ঘায়ু হয়। আর এই বিষয়টাই আমাদের অবাক করেছে”- মন্তব্য করেন তিনি।
স্নায়ুবিজ্ঞান জানায়- যারা নিজেদের একা করে রাখে বা একাকী বোধ করে, তাদের মাঝে উচ্চ মাত্রায় মানসিক চাপের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। আর সেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় দুর্বল করে দেয়। ফলে রোগে ভোগার সম্ভাবনা বাড়ে।
“আর দীর্ঘমেয়াদী রোগ শরীরকে ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়”- বলেন ডা. ওয়াল্ডিংগার।
পাশাপাশি যাদের দেখাশোনার কেউ নেই, তাদেরকে ভালো খাবার দেওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং অন্যান্যদের সঙ্গ পাওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়।
তারমানে এই নয় যে, যারা আত্মকেন্দ্রিক বা যাদের সঙ্গী নেই তারা অসুখী। দুয়েক জন বন্ধু থাকাই যথেষ্ট।
তাহলে সুখী জীবন কীভাবে গড়বেন? ডা. ওয়াল্ডিংগার দিয়েছেন পাঁচ পন্থা।
মৌলিক বিষয় অবহেলা করা যাবে না
‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’- এটা শুধু কথার কথা নয়।
ওয়াল্ডিংগার দাবি করেন, “আমাদের গবেষণায় দেখেছি যারা নিজেদের যত্ন নিয়েছেন তাদের স্বাস্থ্যকর দীর্ঘ জীবন পার করছেন। আর বৃদ্ধ হওয়ার পথেও রোগ মুক্ত থেকেছেন।”
মানে প্রতিদিন ব্যায়াম করা, প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে নজর দিতে হবে। অ্যালকোহল ও মাদকের অপব্যবহার করা যাবে না।
সামাজিক জীবন উন্নত করা
ব্যক্তিগত সম্পর্কে বিনিয়োগ করতে হবে।
“স্বাস্থ্যকর সামাজিক সম্পর্কের বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজন। যদি মনে হয় আরও মানুষের সাথে মেশা দরকার তাহলে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে” বলেন ডা. ওয়াল্ডিংগার।
এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন পন্থা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রথমত হল পরিমাণ বা মানুষের সংখ্যা।
“যদি মনে হয় জীবনে বেশি মানুষ নেই, তবে অন্যদের সঙ্গে পরিচিত হতে নিজেকে পথে নামতে হবে” পরামর্শ দেন এই গবেষক।
সেটা হতে পারে সামাজিক কোনো কার্যক্রমে অংশ নেওয়া, কোনো ক্লাবে যুক্ত হওয়া বা কোনো শখ পূরণের কোর্সে ভর্তি হওয়া।
একদল মানুষের মাঝে বারবার যাতায়াত করলে কথাবার্তা চালিয়ে গেলে সেখান থেকে কয়েকজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বর্তমান সম্পর্কগুলো উন্নত করা
মান সম্মত সম্পর্ক হল স্বাস্থ্যকর সামাজিকতার দ্বিতীয় পন্থা।
“এমন যদি হয় আমার অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় আছে তবে তাদের সঙ্গে নিজেকে তেমন ভাবে যুক্ত করতে পারছি না, তখন হয়ত বন্ধুত্বগুলো ছুটে যাবে”- বলেন ডা. ওয়াল্ডিংগার।
তিনি আরও বলেন, “গবেষণায় আমরা দেখেছি, সম্পর্ক রক্ষার্থে যারা দিনের পর দিন যোগাযোগ রাখে, ছোট ছোট পদক্ষেপ নেয় সেই সম্পর্কগুলোই জোড়ালো হয়।”
এজন্য বড় কোনো কাজ করতে হয় না, ছোট তবে নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন পড়ে।
দূরত্ব তৈরি না করে নিয়মিত যত্নে সম্পর্কের উন্নতি করা সম্ভব।
নিজেকে প্রকাশ করা
নিজের কাছে যেটা সবচেয়ে মূল্যবান সেটার প্রকাশ ঘটাতে হবে।
“হতে আপনার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান হল সত্যতা- এখন জীবনে সেটা এমন জায়গায় প্রকাশ করতে হবে যেখানে মূল্য পাওয়া যাবে- হতে পারে সেটা পরিবার”- ব্যাখ্যা করেন ডা. ওয়াল্ডিংগার।
প্রথমেই বের করতে হবে জীবনের কোন বিষয়গুলো মূল্য বেশি, তারপর সেটা প্রকাশের সঠিক জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে মূল্য পাওয়া যাবে।
“কারণ দেখা গেছে যারা জীবনের সঠিক মূল্য পেয়েছে তারাই বেশি সুখী জীবন কাটিয়েছে বা কাটাচ্ছেন”- মন্তব্য করেন তিনি।
পরিবর্তনকে মেনে নিন
মানুষ বদলায়, যে কারণে সম্পর্কে পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন মেনে নেওয়া শিখতে হবে।
“প্রশ্ন হল, নিজে যখন বদলে যাই তখন কি আমরা লক্ষ করি অন্যরা এই পরিবর্তনটা কীভাবে আত্মস্ত করছে, এমনকি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে” ওয়াল্ডিংগার বলেন, “সম্পর্কে একে অন্যকে থামিয়ে দিতে গেলেই সমস্যা তৈরি হয়।”
যখন সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসে তখন আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে, কেনো এমন হচ্ছে। তখন সঙ্গী বা অপর পক্ষ অন্তত বুঝবে, এখনও অনাগ্রহ তৈরি হয়নি।
ওয়াল্ডিংগার পরামর্শ দেন, “প্রথমত, অন্যকে বোঝাতে হবে আপনার মধ্যে সত্যিই জানার আগ্রহ আছে। তাকে বুঝতে চেষ্টা করা মাঝে দূরত্ব তৈরি হওয়া কমাবে।”
আর পরিবর্তন যেটাই হোক, সেটা উপলব্ধি করে পরিবারের সদস্য বা সঙ্গীর সঙ্গে সহানুভূতি নিয়ে থাকার মাঝে সম্পর্কের উন্নতিতে সুখ মিলবে।
আরও পড়ুন
বিবাহিত জীবনে সুখে থাকার পন্থা