সুখী থাকার অভ্যাস রপ্ত করার পন্থা

পাগলের সুখ মনে মনে হলেও, নিজেকে সুখী রাখতে মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 07:29 AM
Updated : 22 May 2023, 07:29 AM

কোনো কিছুর অভ্যাস গড়তে চাইলে সেটা প্রতিনিয়ত করতে হয়। খুশি থাকা বা সুখ অনুভব করার বিষয়টাও সেরকম।

অনেকে আবার এমনিতেই হাসিখুশি থাকতে পারেন। এটা তাদের জন্মগত বিষয়।

২০২২ সালের ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট’ অনুসারে কিছু মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই সুখী, তারা ভাগ্যবান। এটা অনেকটা বংশগতির ওপর নির্ভরশীল।

“সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়, সুখের জন্য আমাদের নির্দিষ্ট কোনো বিষয় প্রয়োজন। এটা খেলে ভালো লাগবে, ওটা পেলে খুশি হব- এরকম আর-কি।” এভাবেই মন্তব্য করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র মনরোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. এলিসা এপেল।

‘দি স্ট্রেস প্রিসক্রিপশন: সেভেন ডেজ টু মোর জয় অ্যান্ড ইজ’ বইয়ের এই লেখক রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলেন, “আমরা একদিন ভালো বোধ করবো, এই আশা করে বসে থাকতে পারি না। ভাবনার চাইতেও আমরা নিজেদেরকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ইচ্ছা করলেই আমরা এই মুহূর্তে ভেবে নিতে পারি কী করলে আমাদের ভালো লাগবে। ছোট ছোট বিষয় মনের আনন্দ বাড়াতে সাহায্য করে।”

সুখী হওয়ার অভ্যস্ততার শক্তি

কোনো জাদুকরী মন্ত্র ছাড়াই ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সুখী থাকা যায। তবে বিষয়টা আবার অত সোজাও না।

সুখী হওয়ার জন্য সুখকে বেছে নিতে হবে। তবে এরজন্য চাই অভ্যস্ততা।

এপেল ব্যাখ্যা করেন, “কোনো জিনিস বার বার করলে অভ্যাসে পরিণত হয়। আবার যখন কোনো অভ্যাসের কারণে মানসিকভাবে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় তখন সেটা আমরা বার বার করার চেষ্টা করি। তাই যদি ইতিবাচক অভ্যাস গড়া যায় তবে মন আনন্দ থাকার পরিমাণও বাড়বে।”

এপেল’য়ের নিজস্ব গবেষণা ‘দি বিগ জয় প্রোজেক্ট’য়ে দেখা গেছে, খুবই ছোট অভ্যাস রপ্ত করার মাধ্যমে আনন্দের অনুভূতি বাড়ানো যায়।

তিনি বলেন, “স্নায়ু-বিজ্ঞান, সাইকোলজি, ওষুধ, জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য মাধ্যমসহ জীবনের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি থেকে আমরা হাজার বছর ধরে একটাই বিষয় বুঝতে পারি- যদি বেছে নিতে পারি তবে আনন্দের উৎস আমাদের মধ্য থেকেই আসবে। এমনকি ছোটখাট বিষয়গুলো সুখের দিকে ধাবিত করবে, ফলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হবে।” 

তাই ‘পাগলের সুখ মনে মনে হলেও’ নিজের মধ্যে সুখ অনুভব করতে কিছু বিষয় রপ্ত করার চেষ্টা করা যেতেই পারে।

প্রতিদিন অন্যের প্রতি ৫টি সদয় ব্যবহার

কাউকে ছোটখাট জিনিস উপহার দিতে পারেন, তাদের ভালোলাগাতে আপনারও ভালোলাগবে। পাঠাতে পারেন বন্ধুতে মজার কোনো ‘টেক্সট’, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের ফোন দিয়ে কথা বলতে পারেন, ফেইসবুক বা ইন্সটাগ্রামে দিতে পারেন ইতিবাচক ‘পোস্ট’, কোথাও পড়ে থাকা ময়লা নিদিষ্ট জায়গায় ফেললেন, বাড়িতে ডেলিভারি দিতে আসা মানুষটাকে চা কিংবা এক গ্লাস পানি দিতে পারেন।

এপেল বলেন, “বড় কিছু করার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন এরকম অন্তত পাঁচটি কাজ করার চেষ্টা করে যান।

কৃতজ্ঞতা বোধ

যে কোনো বিষয়ে কৃতজ্ঞ থাকার অভ্যাস গড়তে হবে। কীভাবে?

এপেল বলেন, “ছোট থেকে বড়- যেসব বিষয়ে কৃতজ্ঞ সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন লিখে। মানসিক চাপের ওষুধ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা বোধ। আমারা যদি সকালটা শুরু করি কৃতজ্ঞ থাকা দিয়ে তবে আমাদের মধ্যে আরও ইতিবাচক অনুভূতি জাগবে। তাই যখনই জেগে উঠবেন তখন কৃতজ্ঞ থাকার অন্তত একটা বিষয় নিয়ে ভাবুন।”

প্রতিদিন প্রকৃতি অনুভব করা

যেভাবেই হোক প্রতিদিন প্রকৃতির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আশপাশে পার্কে গিয়ে সবুজ উপভোগ করার চেষ্টা করুন।

এপেল বলেন, “এটা আপনার অনুভূতি উন্মুক্ত করে মন ভরাবে।”

খারাপ কিছুর মধ্যে ভালোটা খোঁজা

খারাপ জিনিস ঘটবে, আর ঘটতেই থাকবে। বরং সেই ক্ষতি কষ্ট স্বীকার করে নিন। রাগও হতে পারে তবে সেটাতে থাকতে হবে ইতিবাচক দিক। প্রতিদিনের ঝামেলা থেকেও লাভবান হওয়ার চেষ্টা করুন, পরামর্শ দেন এপেল।

তিনি বলেন, “ছোট একটি সমন্বয় এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। প্রথমেই চেষ্টা করুন যে ঝামেলাটা যাচ্ছে সেটা সহ্য করতে। তারপর সেটাতে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করে দেখুন, বিষয়টা কি আগের মতো ঝামেলাকর লাগছে কিনা। বিষয়টা কঠিন, কারণ মস্তিষ্কে সেটা অভ্যস্ত হতে সময় নেবে।”

অন্যের জন্য ইতিবাচক কিছু করা

একটা অনেকটা আরেকজনের প্রতি দয়ালু হওয়ার মতোই। তবে এক্ষেত্রে ভালোবাসার যে কোনো মানুষের জন্য নিজেকে সপে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সেটা হতে পারে তার কথা শোনা।

মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া

যদি আমাদের কাজ আর সিদ্ধান্তের সঙ্গে মনের গভীরের থাকা মূলবোধের সমন্বয় না ঘটে তবে অসুখী হওয়ার বিষয়টা বেশি দূরে থাকবে না।

এই পৃথিবীতে নিজের মূল্যবোধ সম্পর্কে বার বার সচেতন করতে হবে। তারপর দেখুন, সেগুলো ছাড়া থাকতে পারবেন নাকি পারবেন না।

এপেল বলেন, “চারটি প্রধান মূল্যবোধের তালিকা করে ক্রমিক অনুসারে সাজান। সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ লিখুন। তারপর দেখুন সেগুলো কীভাবে জীবনে ফিরে আসছে। এই তালিকার দিকে বার বার তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন কোনটা, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে সাহায্য করেছে। আর সেটা বেছে নিয়ে জীবনের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করুন। আর সেটাই আপনার প্রতিদিনের জীবনে সুখ নিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন

Also Read: 'সুখী হওয়ার কোনো যন্ত্র নেই'

Also Read: গড়ে নিন আনন্দময় জীবন