সব মানসিক চাপ খারাপ এক কথা বলা যাবে না।
Published : 16 Nov 2023, 03:39 PM
মানসিক চাপ কমাতে নানান পন্থা অবলম্বন করা হলেও, জেনে রাখা ভালো যে সব মানসিক চাপ খারাপ নয়।
অনেক সময় মানসিক চাপ থেকে ভালো কিছুও হয়।
“সেটা হতে পারে দুর্ঘটনা ঘটার আগ মুহূর্তে গাড়িরে ব্রেক কষা অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কোনো প্রেজেন্টেইশন’য়ের কাজ শেষ করে ফেলা”- এভাবেই উদাহরণ দেন স্নায়ু ও সুস্থতা বিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ ডোর্সি স্ট্যান্ডিশ।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের স্বাস্থ্যকর মানসিক চাপকে বলে ‘ইউস্ট্রেস’, যা আমাদের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিয়ে কার্য সম্পাদনে উৎসাহ দেয়।”
অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর মানসিক চাপ, দীর্ঘমেয়াদে থাকে। ফলে দেখা দেয় বিষ্ণণ্নতা ও তিক্ততা।
“দীর্ঘমেয়াদে চাপে ভোগার কারণে দেহের প্রধান কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে নানান সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- মানসিক সমস্যা”- বলেন স্ট্যান্ডিশ।
তাই এই ধরনের মানসিক চাপ কাটানোর প্রধান চাবিকাঠি হল- শক্তিশালী ইতিবাচক মানসিক চাপকে কাজে লাগি লক্ষ্য আর্জনের উদ্দেশ্যে নেতিবাচক চাপগুলোকে কমানো।
গভীর নিঃশ্বাস নেওয়া
মানসিক চাপে থাকলে গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্ট্যান্ডিশ বলেন, “এমনকি ইচ্ছেকৃতভাবে একবার গভীর শ্বাস প্রশ্বাস ছাড়তে পারলে চাপ অনেকটাই কমে, স্নায়ু বিশ্রাম পায়।”
এই ক্ষেত্রে কার্যকর পদ্ধতি হল, নাঁক দিয়ে পরপর দুবার বড় করে শ্বাস টানা তারপর মুখ দিয়ে পুরো বাতাস বের করে দেওয়া।
বর্তমানে কী আছে সেটা অনুধাবন করা
যখন অস্বাস্থ্যকর চাপ অনুভূত হবে তখন গুরুত্বপূর্ণ হল, বর্তমানটাকে অনুধাবন করা। এর মধ্যে চলতি মানসিক চাপটাকেও ধরতে হবে।
স্ট্যান্ডিশ পরামর্শ দেন, “চাপকে বরং ‘হ্যালো’ বলুন আর স্বাগতম জানান। এর ফলে মস্তিষ্কের যৌক্তিক অংশ চাপ ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠবে।”
নড়াচড়া করা
যেকোনো প্রকার শারীরিক নড়াচড়া করা হল, দ্রুত সময়ে মানসিক চাপ কমানোর একটি পন্থা।
“দ্রুত লয়ের কোনো গানের সাথে নিজে যেমন খুশি নাচতে পারেন। অথবা বাইরে থেকে হেঁটে আসুন। নানানভাবে শরীর ঝাঁকানোর ফলে শরীরে নিরাপত্তা সম্পর্কিত সংকেত আদান প্রদান হয়”- বলেন স্ট্যান্ডিশ।
যেটা ভুল না সেটায় জোড় দেওয়া
মানসিক চাপে থাকলে প্রথমেই ভুল বিষয়গুলো সামনে আসতে থাকে। তবে স্ট্যান্ডিশ, এক্ষেত্রে ‘কোনটা ভুল না’ সেটা খুঁজে বের করাতে জোর দিচ্ছেন।
মনোযোগ দিতে হবে ইতিবাচক দিকে।
তিনি বলেন, “আমাদের মস্তিষ্ক সাধারণত নেতিবাচক বিষয় ধরে রাখতে চায়, যাতে সমস্যার দিকে নজর থাকে। তবে চাপ কমাতে আর নতুন আশা জাগাতে দিনে অন্তত একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন- এখন কোনটা ঠিক আছে!”
সেটা হতে পারে ইন্টারন্টে যোগাযোগ, ঘরে পানি-খাবার থাকা, যারা বর্তমানে কাছে আছে তাদের চিন্তা করা- ইত্যাদি।
ডিজিটাল জগত থেকে পাঁচ মিনিটের বিরতি
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের জীবন যেমন সহজ করেছে তেমনি মোবাইল ল্যাপটপের মতো যন্ত্রগুলো মানসিক চাপের কারণ হয়েও দাঁড়ায়।
তাই দিনে অন্তত পাঁচ মিনিট এসব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন স্ট্যান্ডিশ, তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল ডিটক্স’।
“প্রযুক্তি-নির্ভর পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকলে যোগ্যতা ও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে। এজন্য পোষা প্রাণী থাকলে সেটা নিয়ে বাইরে বের হওয়া, সন্তানের সাথে খেলা, এমনকি জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকাও হতে পারে মনের জন্য আনন্দের”- বলেন তিনি।
সব কিছু বন্ধ রাখা
মানসিক চাপের সাথে যুদ্ধ না করে ‘স্টপ’ কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেন স্ট্যান্ডিশ।
তিনি বলেন, “স্টপ’ মানে এই মুহূর্তে যা করছেন সেটাই বন্ধ করা। তারপর গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখতে হবে কেমন বোধ করছেন। আর এই পদ্ধতিতে কিছু না কিছু বিষয় আপনাকে সমর্থন করবেই।”
হাসি
সবচেয়ে সহজে মানসিক চাপ উড়িয়ে দেওয়ার উপায় হল ‘হাসি’।
এরজন্য দেখতে পারেন ছোট কোনো মজার ভিডিও, কৌতুক আর হাসুন মন খুলে। এতে মস্তিষ্ক সংকেত পায় যে, আপনি নিরাপদ আছেন- পরামর্শ দেন স্ট্যান্ডিশ।
আরও পড়ুন