মানসিক চাপে পানি পান না করার পরিণতি

যখন মানসিক চাপে ভুগছেন তখন পানিতে চুমুক দেওয়াটা আরও জরুরি।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2022, 05:47 AM
Updated : 27 July 2022, 05:47 AM

পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরে নানান জটিলতা দেখা দেয়। তবে মানসিক চাপের সময় পানি কম গ্রহণে মনের অস্বস্তি আরও বাড়তে থাকবে।

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যথা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ‘ফিজিশিয়ান’ লরা লুয়েস ম্যানটেল বলেন, “কোনো বিপদ, হুমকি, অনিশ্চয়তায় থাকলে মানুষ মানসিক চাপ অনুভব করেন। এই পরিস্থিতির প্রতি শরীরে বিভিন্নভাবে সাড়া দেয় যেমন- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ‘অ্যাড্রেনালিন’ হরমোনের প্লাবন, পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা ইত্যাদি। শরীরের এই প্রতিক্রিয়াগুলো ক্রমাগত চলতে থাকলে তা ক্ষতি করে শরীরেরই।”

মানসিক চাপে আর্দ্র থাকার সঙ্গে সম্পর্ক

একই প্রতিবেদনে ‘জার্নাল অফ নিউরোসাইন্স’য়ে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটি’র গবেষণায় বরাত দিয়ে জানানো হয়, “শরীর কতটুকু আর্দ্র আছে তার ওপর নির্ভর করবে মানসিক চাপের প্রতি শরীর কতটা কার্যকরভাবে সাড়া দিতে পারবে।”

‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অফ সায়কায়াট্রি’তে প্রকাশিত গবেষণা বলে, “পর্যাপ্ত পানি পান করলে হতাশাগ্রস্ততা, মানসিক অস্বস্তি ইত্যাদি মানসিক চাপজনিত অসুখ কম হয়।”

‘আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ স্ট্রেস’য়ের ‘ফেলো’ এবং ‘এআইএস’স কনটেন্টমেন্ট ম্যাগাজিন’য়ের সম্পাদক ডা. সিনথিয়া অ্যাক্রিল বলেন, “সঠিকভাবে কাজ করার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে পানি প্রয়োজন। মস্তিষ্কের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পানি। আর মাত্র ২ শতাংশ পানিশূন্যতাই সৃষ্টি করে অবসাদ, দুর্বল হয় স্মৃতিশক্তি, কমে মনযোগ, খিটখিটে হয় মেজাজ।”

শরীরে আধা লিটার পানি কমে গেলে বাড়ে স্ট্রেস হরমোন ‘কর্টিসল’য়ের মাত্রা। লম্বা সময় ‘কর্টিসল’ নিঃসৃত হতে থাকলে দেখা দেবে ‘অ্যাড্রেনাল ফ্যাটিগ’ বা মূত্রসংক্রান্ত জটিলতা।

আবার মানসিক চাপ ও পানিশূন্যতার চক্রে প্রচণ্ড হতাশা ও মানসিক অস্বস্তি কাজ করে, যা শরীরের ওপর আরও চাপ বাড়ায়।

‘ট্রিপ্টোফান’ থেকে ‘সেরোটনিন’ তৈরি করতে পানি প্রয়োজন। ‘সেরোটনিন’ হল মন ভালো করার হরমোন। আবার খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে, বিপাক ঘটাতেও পানি দরকার।

তাই গড়ে তুলতে হবে পানি পানের সঠিক অভ্যাস।

সঠিক মাত্রা: ডা. ম্যানটেল বলেন, “শরীরের প্রতি পাউন্ড ওজনের জন্য পান করতে হবে আধা থেকে এক আউন্স পানি। যেখানেই যান না কেনো হাতের কাছে সবসময় পানির বোতল রাখুন আর কিছুক্ষণ পরপরই চুমুক দিন।”

প্রতি খাবারের আগে পানি: ডা. ম্যানটেল পরামর্শ দেন, “প্রতিবেলার খাবার খাওয়ার আগে বড় এক গ্লাস পানি পান করে নিন। খাওয়া ফাঁকেও চুমুক দিয়ে পানি পান করতে পারেন।”

ঝাল খাওয়া: ঝাল ধরনের খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. ম্যানটেল।

তার মতে, “এতে পানি পান করার ইচ্ছা বাড়বে। ঝাল সহ্য না হলে অল্প ঝাল দিন, যাতে খাওয়ার মাঝে পানি পান করার ইচ্ছা জাগে।”

নে রাখা: কলোরাডো’র ‘খুজে ফিটনেস’য়ের ‘এডুকেশন অ্যান্ড কালচার’ বিভাগের পরিচালক ফারেল রুশকা বলেন, “ফোনে প্রতি এক ঘণ্টা পর পর পানি পানের কথা মনে করিয়ে দেওয়া ব্যবস্থা করুন। ফোনটাও দূরে রাখুন, যাতে ‘অ্যালার্ম’ বন্ধ করার জন্য আপনাকে উঠতেই হয়। এতে সেই সঙ্গে পানি পানও হয়ে যাবে।”

পানির স্বাদ বাড়ান: রুশকা বলেন, “পানিতে ভিন্ন স্বাদ আনলে তা পান করা ইচ্ছা বাড়বে। এজন্য পানিতে মেশানো যেতে পারে লেবু, স্ট্রবেরি, শসা, মিন্ট ইত্যাদি। ফলের রস মেশালেও সমস্যা নেই।”