“জনগণ যে মতামতের ওপর ভরসা রাখবেন, যাদের বিজয়ী করবেন, তারাই আসলে জনগণের মতামতের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।”
Published : 27 Apr 2025, 02:58 PM
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে জাতীয় সনদ হবে, তাতে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও নতুন বন্দোবস্তে’ যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেছেন, যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, তার ভিত্তিতেই হবে জাতীয় সনদ। আর যেসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচনে জনগণের মতামত নেওয়ার মাধ্যমে।
রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী।
তিনি বলেন, "১৯৭১ সালের মধ্য দিয়ে প্রথম সংবিধানে আমরা যে একটা ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করলাম, তাকেই একভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সেটা এমনকি সংবিধানে স্থান পায়নি।
"১৯৭২ সাল থেকে রাষ্ট্র পরিগঠন একদল লুটেরার হাতে বন্দি হয়ে ছিল। সেই লুটপাটের শাসনকে জায়েজ করার জন্য জনগণের মধ্যে নানা বিভাজন তৈরির চেষ্টা আমরা দেখেছি, যেখানে জনগণের ঐক্য তৈরি করা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।”
জোনায়েদ সাকির নেতৃত্ব দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এদিন সংলাপে অংশগ্রহণ করে।
তিনি বলেন, “যতগুলো (সংস্কার) প্রস্তাব এসেছে, সেখানে অংশীজনদের ঐকমত্য যেটাতে তৈরি হবে, সেটাই জাতীয় সনদ; এটা জুলাই সনদ আকারে হাজির হবে। যেসব বিষয়ে দ্বিমত আছে সেগুলো সমাধানের রাস্তা কী? সে পদ্ধতি নিয়ে ভেবেছি।
“আমরা মনে করি, দ্বিমত (বিষয়গুলো) নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। সেটা একটা নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। জনগণ যে মতামতের ওপর ভরসা রাখবেন, যাদের বিজয়ী করবেন, তারাই আসলে জনগণের মতামতের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। যতটু্কুতে আমরা একমত হয়েছি, সেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে যাতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও নতুন বন্দোবস্তে যাওয়া সম্ভব হয়, সেজন্য ঐকমত্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন।"
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বৈঠকের শুরুতে বলেন, "বাংলাদেশে যে পুঞ্জীভূত সংকট… শুধু সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন যথেষ্ট নয়, সেজন্য দরকার দরকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করা, গণতন্ত্রের চর্চা করা, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একত্রিত করা।
"জনসাধারণের ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়নে বাধ্য করেছে। এ ঐক্য বজায় রেখে, ঐক্যের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। এটা শুধুমাত্র আমাদের অঙ্গীকার নয়, এটা আমাদের দায়।"
তিনি বলেন, "গত ৫৩ বছর ধরে যারা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র, সকলের অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্র, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার মত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, তাদের সকলের কাছে আমাদের দায়।
"আমরা সামান্য হলেও অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছি। সেটা ধরে রাখতে না পারলে, বিকশিত করতে না পারলে সমস্ত সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। সেটা যেন না হয়, সে জন্য সকলের প্রচেষ্টা। আমরা একত্রিতভাবে অর্জনের চেষ্টা করছি। যে অর্জন শুধু আমাদের জন্য নয়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন গণতান্ত্রিক জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য।"
সকলে একমত হয়ে দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে।