যেভাবে পানি পান করলে উপকার মিলবে বেশি

পানির অপর নাম জীবন হলেও অতিরিক্ত কম বা বেশি পানি গ্রহণ করলেও হতে পারে সমস্যা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2022, 10:16 AM
Updated : 9 March 2022, 10:16 AM

১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্যা ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড অব দ্যা ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স’ দাবি করে যে, শরীর ভালো রাখতে দৈনিক দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা জরুরি।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলা হয় যে, অধিকাংশ পানি গ্রহণের পরিমাণ রান্না করা খাবার থেকে আসে, যা অনেকেই সঠিকভাবে খেয়াল করা না।

দেহের আর্দ্রতা রক্ষা করতে দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার কথা বলা হয়। তবে ভুলভাবে পানি পান অনেক সময় স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

কঠিন খাবারের জলীয় অংশ বিবেচনা না করা

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দৈনিক পানি পানের ২০ শতাংশ আসে কঠিন খাবার থেকে। দেহের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ফল, সবজি ইত্যাদি বেশ উপকারী। কারণ এগুলো জলীয় উপাদান সমৃদ্ধ।  শসাতে ৯৬.৭ শতাংশ পানি। লেটুস, টমেটো, তরমুজ, আঙুর ও সবুজ মরিচের প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি পানি। এই ধরনের পুষ্টি ও ভিটামিন সমৃদ্ধ সবজি খাওয়া সুসাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন’য়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, “অধিকাংশ সুস্থ মানুষই তৃষ্ণা মিটাতে পর্যাপ্ত পানি পান করেন। তবে জোর করে পানি পান হয়ত অতিরিক্ত পানি পানকে নির্দেশ করছে।”

অতিরিক্ত পানি পান শরীরের জন্য বাড়তি কোনো উপকার করে না।

অতিরিক্ত পানি পান ‘হাইপোনেট্রেমিয়া’র জন্য দায়ী। এটা এমন একটা অবস্থা যা রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা গুরুতরভাবে কমায়। ফলে মস্তিষ্কের ফোলাভাব এবং ‘কমা’ বা অজ্ঞান হওয়ার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে পারে।

সাধারণ অবস্থায়, প্রচুর পানি পানের ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। শারীরিক পরিশ্রম করেন, বা খুব ঘাম হয় এমন ব্যক্তিদের দ্রুত পানি পান না করে বরং ধীরে পান করা উচিত।

অকারণে ক্যাফেইন বাদ দেওয়া

ক্যাফেইন মনোযোগ ও বিপাক বাড়াতে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত কফি পান দেহে পানিশূন্যতা বাড়ায়।

“গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫০ থেকে ৩০০ মি.গ্রা. যা প্রায় দুই কাপ কফির সমান ক্যাফেইন গ্রহণ তিন ঘণ্টা পর মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়” বলে জানান, ‘ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনা’র স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সুসান ইয়ারজিন।

সুতরাং, কফি পান মানেই যে পানিশূন্যতা সৃষ্টি এটা ভুল ধারণা।

‘পিএলওএস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, পরিমিত কফি পান পানি শূন্যতা সৃষ্টি করে বলে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই অকারণেই কফি পান বাদ দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

আমেরিকার খাদ্যাভাসে কফি পান প্রদাহ হ্রাসকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

ঘুমের আগে পরিমিত পানি পান

রাতে ঘুমের আগে খুব বেশি পানি পান বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এরিন প্যালেন্সকি ওয়েড বলেন, “রাতে ঘুমাতে যাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে পানি পান কিছু কমানো উচিত। এতে করে শরীর তা প্রক্রিয়াজাত কর সুযোগ পাবে।”

প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান

প্লাটিকের বোতলে পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ অনুযায়ী, কম মাত্রার ‘বিসফেনল এ’ (বিপিএ) নিরাপদ। তবে এটা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও রক্তচাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাই পানি পানের ক্ষেত্রে বিপিএ মুক্ত বোতল ব্যবহার করা উচিত।

পানি ও লেবুর রস এক সঙ্গে

পানি ও লেবুর রস একসঙ্গে গ্রহণ করা কেবল মজাদারই না বরং তা ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে।

‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ অনুযায়ী, লেবুর খোসায় থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহের দুষিত পদার্থ দূরকারী যকৃতের এনজাইম তৈরিতে সহায়তা করে। এর ভিটামিন সি কর্টিসোলের মাত্রা বাড়ায়। আর চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমায়। দেহের মেদ কমাতেও সহায়তা করে।  

ঘুম থেকে উঠে পানি পান

সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করা বিপাক বাড়াতে সহায়তা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ লিসা জুবলির মতে, “বিপাক বাড়ানোর সহজ উপায় হল ঘুম থেকে উঠে ২০ থেকে ৩০ আউন্স পানি পান করা। কেননা রাতে ঘুমের মধ্যে লম্বা সময় পানি শূন্য থাকায় বিপাক ক্রিয়া ধীর থাকে। তাই সকালে কিছু খাওয়া বা পানের আগে পর্যাপ্ত পানি পান করে নেওয়া ভালো। এর ফলে পেট ফোলাভাব কমা, বেশি শক্তি অনুভব করা এবং ক্ষধা হ্রাস পায়।”

ক্ষুধা ও তৃষ্ণার পার্থক্য করতে না পারা

‘সাইকোলজি অ্যান্ড বিহেইভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাননো হয়, অধিকাংশ মানুষই তৃষ্ণা লাগলেও ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে পানির বদলে খাবার গ্রহণ করে থাকেন। এর ফলে দেহে বাড়তি ক্যালরি যোগ হয়। তাই ক্ষুধা অনুভব হলেও প্রথমে পানি পান করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করা উচিত। যদি এর পরেও ক্ষুধা না মিটে তাহলে খাবার খেতে হবে।

গ্রিন টি পান করা

পানিতে চা পাতা যোগ করলেও তা পানিই থাকে। বাড়তি স্বাস্থ্যপোকারিতা পেতে পানি পানের সময় তাতে গ্রিন টি যোগ করা বিপাক বাড়াতে, কোষ পুনুরুজ্জীবনে ও বিশেষত পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে।  

বরফ ঠাণ্ডা পানি পান করা

আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র অনুযায়ী, ঠাণ্ডা পানির তুলনায় গরম পানি পান পাকস্থলীর জন্য বেশি আরামদায়ক।

২০০৩ সালের করা এক গবেষণা অনুযায়ী, বরফ ঠাণ্ডা পানি পান ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বিপাক বাড়াতে সক্ষম। কিন্তু গরম পানি পান যে তা করে না এই বিষয়েও কোন প্রমাণ মিলেনি। এছাড়াও তাপমাত্রার পার্থক্যের চেয়েও পানি পান ও সময় সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে।

তাই ঠাণ্ডা পানি পাওয়া না গেলেও সাধারণ পানিও গ্রহণ করা ভালো।

‘স্বাস্থ্যকর’ বোতলের পানি

‘স্বাস্থ্যকর’ পানীয়র নামের আড়ালে অনেক বোতলজাত পানীয়তে বাড়তি ক্যালরি ও শর্করা যোগ করা থাকে। ২০ আউন্স ভিটামিন পানীয়তে প্রায় ২৬ গ্রাম মিষ্টি উপাদান থাকে।

খাবার পানীয়র স্বাদ ও মান বাড়াতে চাইলে এতে টুকরা লেবু, স্ট্রবেরি বা পুদিনা যোগ করা যেতে পারে।

কৃত্রিম স্বাদ যোগ করা

বাড়তি স্বাদ যুক্ত পানীয় পান করা মানে হল বাড়তি ক্যালরি যোগ করা। গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা কৃত্রিম রঙ, স্বাদ ও মিষ্টি দেহের জন্য ক্ষতিকারক। কৃত্রিম মিষ্টির সুক্রালোজ প্রায় ১০০০ গুণ বেশি চিনির সমপরিমাণ। তাই খাবারে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক মিষ্টি ও স্বাদ রাখা উচিত।

ক্লান্ত অবস্থা পানি পান না করা

নিজেকে সতেজ রাখতে সবসময় চা বা কফি পান নয় বরং পানি পান উপকারী। তাই কাগজের ফাঁকে ক্লান্তি অনুভব করলে পানি পান করা উচিত।

প্যালিনস্কি ওয়েড বলেন, “অনেক সময় দেহে সামান্য পানির স্বল্পতা ক্লান্তি সৃষ্টি করে। কারণ মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ পানি দিয়ে তৈরি। তাই পানি অভাবে এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়।”

পর্যাপ্ত পানি পান না করা

অধিকাংশ মানুষই পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। ফলে নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ক্ষুধাভাব অনুভব করা, মুখ শুকিয়ে আসা, মূত্রের রংয়ের পরিবর্তন ইত্যাদি কম পানি পানের লক্ষণ। দেহের পানির চাহিদা মেটাতে সঙ্গে পানির বোতল রাখা ও কিছুক্ষণ পর পর পানি পান উপকারী।

আরও পড়ুন