বরফ শীতল পানি পানের প্রভাব

কেউ বলে ঠাণ্ডা পানি হজমের জন্য ভালো, কেউ বলে বুকে জমে কফ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2021, 05:52 PM
Updated : 1 Sept 2021, 05:39 AM

ঠাণ্ডা বা হিমশীতল পানি যে শরীরের ক্ষতি করে এর কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তবে এটা ঠিক যে ঠাণ্ডা পানি শরীরের আর্দ্রতা বাড়ানোর জন্য ভালো।

আর্দ্রতা ধরে রাখতে যেভাবে সাহায্য করে

প্রথম কথা হল, যেই তাপমাত্রার পানিই পান করুন না কেনো, শরীর তা থেকে আর্দ্রতা পাবে। তবে ঠাণ্ডা পানির সেই ক্ষমতাটা বেশি।

‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় ছয়জন পুরুষকে বিভিন্ন তাপমাত্রার পানি পান করানো হয়। দেখা যায়, ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানি বেশি পরিমাণে পান করায় ঘাম হতে দেখা যায় সবচাইতে কম।

এই গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ইটদিস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, শরীরে আর্দ্রতা যোগানো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পানি হতে পারে কক্ষ তাপমাত্রার পানি। বিশেষ করে যখন প্রচণ্ড গরমে কেউ কাজ করছেন সেই সময়।

শরীরচর্চা থেকে শরীরের পেশির ক্ষতি হয়। তা পূরণ করতেও ঠাণ্ডা পানি সবচাইতে উপকারী।

শরীরচর্চার ২০ মিনিট পর ১০ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য উপকারী।

‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ অ্যাপ্লাইড ফিজিওলজি’য়ের মতে, ‘কোল্ড ওয়াটার থেরাপি’ যেখানে বরফশীতল পানিতে ডুবে থাকা হয় সেটাও পেশির ক্ষয়পূরণের জন্য কার্যকর।”

ঠাণ্ডা পানি নিয়ে ভুল ধারণা

আয়ূর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্র দাবি করে, হিমশীতল পানি পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে হজমক্রিয়ার জন্য। কারণ হিমশীলত পানি রক্তনালী সংকুচিত করে দেয়, যে কারণে খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা যায় না।

আবার কুসুম গরম পানি পান করাকে অনেকেই উপকারী মনে করেন বিভিন্ন কারণে। যার একটি কারণ হল তা হজমে সহায়ক এবং অন্ত্রের জন্য উপকারী।

১৯৮৩ সালের ‘জেনারেল ফার্মাকোলজি’র এক গবেষণা উদ্ধৃত করা হয় এই দাবির স্বপক্ষে।

রক্তনালী, রক্তপ্রবাহ এবং শরীরের তাপমাত্রার ওপর ঠাণ্ডার প্রভাব নিয়ে কাজ করা হয় ওই গবেষণায়। ঠাণ্ডা আবহাওয়া রক্তপ্রবাহের ওপর প্রভাব ফেলে একথা সত্য, তবে ঠাণ্ডা পানি পান করার কারণে রক্তনালী সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে এমনটা সেই গবেষণায় সরাসরি বলা হয়নি কোথাও।

রক্তনালী হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে ঠাণ্ডা পানি পান করার কারণে হজমক্রিয়ার গতি কমতে পারে এমন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। 

হিমশীতল পানি নিয়ে আরেকটি ভুল ধারণা যা সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা তা হল এই পানি পান করা থেকে বুকে কফ জমে।

এই ধারণার সুত্রপাত ১৯৭৮ সালের এক গবেষণা থেকে যা প্রকাশিত হয় ‘চেস্ট’ সাময়িকীতে।

এই গবেষণায় নাক দিয়ে ‘মিউকাস’ বা কফ নিঃসরণের গতি, নাক বন্ধ হয়ে থাকা এই দুই বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হয়েছিল। তাতে ফলাফল আসে এমন যে, নাক দিয়ে জৈবিক কোনো উপাদান নিঃসরনের ব্যাপারটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ঠাণ্ডা তরলের তুলনায় কুসুম গরম তরল বেশি ‍কার্যকর ও উপকারী।

তবে একটা জানা জরুরি যে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ গবেষণাটি ‘আর্কাইভ’ করে ফেলে। আর ‘চেস্ট’ সাময়িকী থেকে গবেষণার প্রতিবেদন পুনরায় যাচাই করার সুযোগ আর নেই।

আরেকটি দাবি হল, ঠাণ্ডা পানি পান করলে ক্ষুধা বাড়ে। যার সুত্রপাত হল ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা’র একটি গবেষণা। এই গবেষণায় ঠাণ্ডা পানি আর কুসুম গরম পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ব্যায়াম করলে খাওয়ার রুচি কতটুকু তৈরি হয় তার মধ্যে তুলনা করা হয়।

ফলাফলে বলা হয়, যারা ঠাণ্ডা পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ব্যায়াম করেছেন তাদের পরে ক্ষুধা বেশি অনুভূত হতে ও বেশি খেতে দেখা গেছে।

বেশি করে পানি পান করুন

এমনকি শীত ঋতুতে মানুষের মাঝে ক্ষুধার অনুভূতি বেশি দেখা যায়, এমনটাও দাবি করে একাধিক গবেষণা। তবে তা থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, ঠাণ্ডা পানি পান করলেই ক্ষুধা বেশি লাগে।

ঠাণ্ডা পানি, কক্ষ তাপমাত্রার পানি, কুসুম গরম পানি- এগুলো নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ ও মতবিরোধ থাকলেও একটা বিষয়ে সবাই একমত। আর তা হলো শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে হলে পানি পান করতে হবে।

কেমন তাপমাত্রার পানি পান করছেন তা মুখ্য নয়, প্রধান লক্ষ্য হবে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা।

আরও পড়ুন