প্রতিদিন সালাদ খেলে যা হবে

তারুণ্য ধরে রাখতে সবুজ ও রঙিন শাক-সবজি খাওয়ার বিকল্প নেই।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2023, 12:36 PM
Updated : 11 Jan 2023, 12:36 PM

নিয়মিত সালাদ খাওয়ার ভালো খারাপ দুই দিকই রয়েছে।

ওজন কমাতে ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে সালাদ ভালো। ফল ও সবজি খাওয়ার পাশাপাশি পেটভরা অবস্থাতেও কিছু খাওয়ার ইচ্ছে মেটাতে সালাদ বেছে নেওয়া যায়।

কাঁচা সবজির সঙ্গে নানান মসলা মিশিয়ে তৈরি করা সালাদ যদি প্রতিদিন খাওয়াতে ‍উপকারের সংখ্যাই বেশি। তবে খেতে হবে বিভিন্ন রংয়ের সবজির সংমিশ্রণে।

‘ডায়াটেরি গাইডলাইন্স ফর অ্যামেরিকান ২০২০-২০২৫ অনুযায়ী’ প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক কমপক্ষে ২.৫ কাপ সবজি খাওয়া উচিত। তবে সবসময় সেটা করা সম্ভব হয় না।

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিষয়ে নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ও নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘কিটলি মেডিকেল নিউট্রিশন থেরাপি’র জিনা কিটলি বলেন, “প্রতিদিন সালাদ খাওয়া এই চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে ‘রংধনু’র মতো রঙিন ফল ও সবজির খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা উপকারী।”

‘ক্রিটিকেল রিভিউস ইন ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নানান ধরনের খাবার ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি উপাদান সরবারহ করে।

যেমন- গাঢ় রংয়ের বেরি, সবুজ ক্রুসিফেরাস বা কপিজাতীয় শাকসবজি ও সিট্রাস বা টক ফল অন্যান্য প্রকার খাবারের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে প্রভাব রাখে।

একাধিক উপদান একসঙ্গে খাওয়া বেশি পুষ্টি সরবারহ করে। এক্ষেত্রে অনেক উপাদান দিয়ে সালাদ তৈরি করে খাওয়া ভালো পন্থা।

কিটলি বলেন, “সালাদ সাধারণত কম স্টার্চ ধরনের খাবার যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সব সালাদই সমান নয়। অনেক সালাদে ২০০০ এর বেশি ক্যালরি থাকে যা সারাদিনের চাহিদার সমান।”

তিনি আরও বলেন, “সবুজ মানেই তা আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর, এমনটা নয়। এতে কী যোগ করা হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।”

প্রতিদিন সালাদ খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ এবং এতে কোনো ড্রেসিং ব্যবহার করা হচ্ছে কি-না সেটাও বিবেচ্য বিষয়।

ভিটামিন শোষণ

বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল, মটর, ডাল, বাদাম, বীজ ইত্যাদি দিয়ে সালাদ তৈরি করে নিয়মিত খেলে শরীর পুষ্টি পাবে। ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ হবে।

সালাদ ড্রেসিংয়ে থাকা তেলের কারণে ফল ও সবজিতে থাকা চর্বিতে দ্রবণীয় পুষ্টি উপাদান – বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেইন, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন এ আরও কার্যকরভাবে শোষিত হতে সহায়তা করে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পালংশাক, কপি, স্যামন মাছ, ভিটামিন সি ও অন্যান্য উপাদান যেমন- বাদাম, ভিটামিন ই যুক্ত সূর্যমুখির বীজ যোগ করা যায়।

ওজন কমা

সালাদ খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমে।

২০০৪ সালে ‘জার্নাল অফ আমেরিকান ডায়েটিকস অ্যাসোসিয়েশন’য়ে প্রকাশিত ‘পেনসালভেনিয়া স্টেইট ইউনিভার্সিটি’র করা এক পর্যবেক্ষণের ফলাফলে দেখা গেছে, খাবারের প্রথমে সালাদ খাওয়ার কারণে অংশগ্রহণকারীরা ৭ শতাংশ কম ক্যালরি গ্রহণ করেছে। আর বড় বাটিতে করে সালাদ খাওয়ার কারণে ক্যালরি গ্রহণ করছে ১২ শতাংশ কম।

এছাড়া সবজিতে থাকা আঁশ পেটভরা অনুভূতি দেয় অনেকক্ষণ। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে। আর অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও দমে।

মস্তিষ্ক তরুণ থাকে

২০১৮ সালে শিকাগো’র ‘রাশ ইউনিভার্সিটি’র করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একবার সালাদ খাওয়ার ফলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১১ বছর বয়সের মতো স্মৃতিশক্তি উন্নত হতে দেখা গেছে। প্রতিদিন আধা কাপ সালাদ জ্ঞানীয় দক্ষতা হ্রাস কমাতে ভূমিকা রাখে।

পাবমেড ডটগভ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণা অনুযায়ী, যারা প্রতিদিন সবুজ শাক সবজি খান তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা তরুণ থাকে। তাই সালাদে কপি, পালংশাক-সহ সবুজ সবজি খাওয়া উপকারী।

বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে

ভিনিগার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

এটা কেবল ক্যালরি দ্রুত বাড়ায় না বরং এতে থাকা অ্যাসিড বুক জ্বালাপড়া সৃষ্টি করতে পারে, জানান কিটলি।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “বেশি সালাদ খাওয়া মানেই ড্রেসিংও বেশি ব্যবহার করা। যে কারণে হতে পারে বুক জ্বালাপোড়ার অনুভূতি।”

ফোলাভাব

অনেকের সালাদ খাওয়ার পরে পেট ফোলার সমস্যা দেখা দিতে পারে, এর কারণ হয় সালাদের পরিমাণ।

সালাদে কপির মতো কয়েকটি উপাদান থাকা অদ্রবণীয় আঁশের মাত্রা বাড়ায় যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এছাড়াও এতে থাকা ব্যাক্টেরিয়া পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। ফলে পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেয়।

কিটলির মতে, “এক্ষেত্রে অন্ত্রের পেশিকে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।”

নতুন আঁশ ধরনের খাবারের সঙ্গে দেহকে পরিচিত করতে ধীরে ধীরে এবং নিয়মিত খাওয়া শুরু করতে হবে।

সালাদ খেতে চাইলে প্রথমে সপ্তাহে কয়েকবার এবং ধীরে ধীরে এর মাত্রা ও দিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

পেট নিয়মিত পরিষ্কার হওয়া

কিটলি বলেন, “অদ্রবণীয় আঁশ পানি আকর্ষণ করে এবং তা পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে গিয়ে মল নরম করে। ফলে অপসারণ সহজ হয়।”

নিয়মিত সালাদ খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কমায়।

“প্রতিদিন সালাদ খাওয়ার আদর্শ মাপ হল ৭০ গ্রাম। এর বেশি খাওয়া অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। বেশি মানেই সবসময় ভালো নয়”, বলেন এই পুষ্টিবিদ।

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, অদ্রবণীয় আঁশ কেবল অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক করে না বরং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার পায়ূপথে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।

হয়ত দীর্ঘায়ূ লাভ হতে পারে

হার্ভার্ড হেল্থ’য়ের মতে, “এককভাবে কোনো ফল বা সবজি দেহের সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই একাধিক উপাদনে তৈরি সালাদ খাওয়া সুস্থ জীবনের জন্য উপকারী।”

২০১৬ সালে ‘জেআরএসএম কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ’য়ে প্রকাশিত টেক্সাসের ‘লামার স্টেইট কলেজ পোর্ট আর্থার’য়ের মেটা-বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সবুজ পত্রল শাক-সবজি খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

এছাড়া নরওয়ের ‘নওরোজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ করা গবেষণার ফলাফল অনুসাররে, প্রতিদিন শাক সবজি খাওয়া অকাল মৃত্যু ঝুঁকি কমায়।

২০১৭ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি’তে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরও জানানো হয়, দেখা গেছে প্রতিদিন ১০ পরিবেশন সালাদ খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ, স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ, ‘কার্ডিওভাস্কুলার’ রোগ ২৮ শতাংশ এবং সকল ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১৩ শতাংশ কমাতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন

Also Read: যেভাবে সালাদ খেলে ত্বক হবে উজ্জ্বল

Also Read: ফল নাকি ফলের সালাদ