ডায়াবেটিস হওয়ার আগ পর্যন্ত যকৃতের চর্বি জমার বিষয়টা টের পান না অনেকেই।
Published : 25 Feb 2025, 04:41 PM
‘লিভার ড্যামেজ’ হওয়ার বিষয়টা প্রায় সবারই জানা। তবে এই ক্ষতি যে বেশিরভাগ সময় খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে সেটা হয়ত অনেকেই বুঝতে পারেন না।
ফলে যখন রোগ ধরা পরে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন রয়েছে।
এই বিষয়ে সিএনএন ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ডেনাভারের ন্যাশনাল জুইশ হেল্থয়ের কার্ডিওভাস্কুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেসয়ের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, “যে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে মানুষ নানান ধরনের মুখরোচক ভারী খাবার খায়। এছাড়া বিকালের নাস্তায় বা আড্ডা চলে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ধুম, যেমন- সসেজ, পেপেরনি। আরও আছে ধূমপানের মত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অভ্যাস।”
যখনই এই ধরনের অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার, উচ্চ চর্বি, বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া হয় তখন ইন্সুলিনের অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটে। যা থেকে তৈরি হয় ‘ইন্সুলিন রেজিসট্যান্ট’, ফলাফল রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি। আর এর থেকে হয় ‘ফ্যাটি লিভার’ বা যকৃতে চর্বি জমার সমস্যা।
ফ্রিম্যান বলেন, “এসব খাবারের সাথে যদি অ্যালকোহল গ্রহণ করা হয়, তবে ঝুঁকির পরিমাণ আরও বাড়ে।”
সাধারণভাবে নারীর ৩৫ ইঞ্চি এবং পুরুষের ৪০ ইঞ্চির ওপরে কোমরের মাপ হলে, ধরে নেওয়া হয় স্থূলতার সমস্যা রয়েছে। এটা হৃদ-বিপাক সম্পর্কিত ঝুঁকির প্রভাবক, যা রক্তচাপ ও শর্করা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
এই স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে যকৃতে চর্বি জমে, যা থেকে হয় ‘লিভার ফাইব্রোসিস’ বা কোষের ক্ষতির কারণে যকৃতে সুক্ষ্ম দাগের সৃষ্টি হয়।
“বেশিরভাগ মানুষই ডায়াবেটিস হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা টের পায় না। তবে সাধারণত ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই ‘ফ্যাটি লিভার’ হয়”- মন্তব্য করে ডা. ফ্রিম্যান।
তিনি আরও বলেন, “এটা চিনির নিয়ন্ত্রণহীনতার সাথে সম্পর্কিত। রক্তে চিনি বেশি হয়ে গেলে, কমানোর জন্য যকৃত চর্বি হিসেবে জমাতে শুরু করে। এটাই সেই অতিরিক্ত চর্বি যা যকৃতের কার্যকারিতায় বাধা তৈরি করে।”
অন্যদিকে, যকৃতের কোষের ক্ষতি হয় মদ্যপান করলে। সেখান থেকে অতিরিক্ত চর্বি জমে। এর থেকে তৈরি হওয়া প্রদাহ ও ‘ফাইব্রোসিস’ থেকে নিয়ে যায় ‘সিরোসিস’য়ের দিকে। যা যকৃতের কাজ বন্ধ হওয়া বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
আর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন, তাদের এই দুই অভ্যাস থেকে যকৃত ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি তৈরি হয়।
এই তথ্য জানিয়ে সিএনএন’য়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’স কেক স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ক্লিনিকাল মেডিসিনের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক ডা. ব্রায়ান লি বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখেছি- যার উচ্চ রক্তচাপ, বড় পেট বা ডায়াবেটিস নেই, তারমানে এই নয় অতিরিক্ত মদ্যপান করাটা তার জন্য নিরাপদ।”
কারণ মদ মানেই বিষাক্ত।
‘ক্লিনিকাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরলোজি অ্যান্ড হেপাটোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হেল্থ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেইশন জরিপ’য়ের ৪১ হাজার জনের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। যাদের মধ্যে ২,২০০ জন ছিলে অতিরিক্ত মদ্যপানকারী।
গবেষণায় দেখানো হয়, যে নারী দৈনিক ২০ গ্রাম বা এর বেশি এবং যে পুরুষ ৩০ গ্রাম বা এর বেশি অ্যালকোহল পান করেন তারা ‘হেভি ড্রিংকার্স’।
এই বছর জানুয়ারি মাসে ‘ইউএস সার্জন জেনারেল’ ডা. ভিভেক মার্থি জানিয়েছিলেন, যে কোনো পরিমাণ অ্যালকোহল গ্রহণ করা বিপজ্জনক।
তাই সুস্থ থাকতে ও যকৃতের কাজ ঠিকমতো চালিয়ে যেতে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া কমানো পাশাপাশি মদ্যপান ত্যাগ করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন
যে খাদ্যাভ্যাসে যকৃত থাকবে সুস্থ