ত্বকের যত্ন ছাড়াও যেসব কাজে লাগনো যায় ল্যাভেন্ডার তেল।
Published : 24 Apr 2025, 04:01 PM
ল্যাভেন্ডার— বেগুনি রংয়ের ছোট ফুলটি শুধু যে ঘ্রাণে মন মাতানো, তা নয়; হাজার বছর ধরেই এই ফুল ও তেল ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন রোগের উপশমের জন্য।
প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা ল্যাভেন্ডার ফুল ব্যবহার করতেন ইনসমনিয়া (অনিদ্রা রোগ), ব্যথা এবং ত্বকের যত্নে।
এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অ্যারোমাথেরাপিস্ট কাভিতা সাহাই বলেন, “রোমানরা তো নিজেদের স্নানজলে ল্যাভেন্ডার মিশিয়ে ব্যবহার করতেন।”
লাতিন শব্দ ‘লাভারে’ মানে ধোয়া, সেখান থেকেই ‘ল্যাভেন্ডার’ নামটির উৎপত্তি।
তবে ল্যাভেন্ডার তেলের আধুনিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে পথচলা শুরু হয় ১৯১০ সালে। ফরাসি রসায়নবিদ রেনে-মরিস গেতফোস্সে একটি দুর্ঘটনায় নিজের পুড়ে যাওয়া হাতে ল্যাভেন্ডার তেল প্রয়োগ করে দ্রুত নিরাময়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
এরপর থেকে তিনি ‘অ্যারোমাথেরাপি’ শব্দটির প্রচলন করেন এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতির ভিত্তি গড়ে তোলেন- জানান কাভিতা সাহাই।
বর্তমানে ঘুমের সহায়ক হিসেবে ল্যাভেন্ডার তেল বেশি পরিচিত। তবে আরও অনেক কাজেই ব্যবহার করা যায়।
কাভিতা সাহাই বলেন, “ল্যাভেন্ডার শুধু ঘ্রাণের জন্য নয়, এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফলে চাপ কমায়, মানসিক ভারসাম্য আনে এবং প্রশান্তি তৈরি করে।”
স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে: কাভিতা সাহাই বলেন, “ল্যাভেন্ডার তেল স্নায়ুতন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্কে স্বচ্ছতা আনে।”
তাই যদি কখনও নিজেকে অতিরিক্ত চাপে বা উদ্বিগ্ন মনে হয়, ঘাড়ের পেছনে বা কবজিতে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করলে বেশ উপকার মিলবে।
ব্যথা ও অস্বস্তি উপশমে সহায়ক: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেশ কয়েকটি ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডার তেল প্রাকৃতিক অ্যানালজেসিক (ব্যথানাশক ওষুধ বা উপাদান) এবং প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
যারা পেশিতে অতিরিক্ত চাপ, সংকোচন বা টান লাগা, মাসিকের সময় ব্যথা বা ‘অটোইমিউন’ রোগে ভোগেন, তাদের জন্য এটি একটি সহায়ক প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে।
মাইগ্রেইন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর: ইরানের ‘মাশহাদ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেস’য়ের করা ‘এ প্লাসিবো-কন্ট্রোল্ড ক্লিনিকাল ট্রায়াল’য়ে দেখা যায়, মাত্র ১৫ মিনিট ল্যাভেন্ডার তেলের গন্ধ শুঁকে মাইগ্রেইনের তীব্রতা ও বার বার হওয়ার হার কমে গেছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় না থাকায় এটি একটি নিরাপদ বিকল্প।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: ২০২১ সালে ইতালির ‘ইউনিভার্সিটি অফ পিসা’র গবেষকদের পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাভেন্ডার তেল মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তি ও অন্যান্য স্নায়বিক কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে।
যারা পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো উপস্থাপনার আগে স্মৃতিশক্তি ঝালিয়ে নিতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সহায়ক উপাদান হতে পারে।
জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে: ল্যাভেন্ডার তেল শুধুমাত্র ঘ্রাণের জন্য নয়, এটি জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে।
‘ল্যাভেন্ডুলা করোনোপিফোলি’ প্রজাতির তেলে এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধেও কার্যকারিতা দেখা গেছে। চর্মরোগ বা ক্ষত নিরাময়ের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে।
দুপুরে মানসিক সতেজতায় সহায়ক: মাঝে মাঝে দুপুরে মানসিকভাবে ক্লান্ত লাগে?
কাভিতা সাহাই পরামর্শ দেন, “হালকা ঘ্রাণে নিজেকে সতেজ করতে কবজিতে বা কানের পেছনে ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করুন।”
শরীরচর্চার পর পুনরুদ্ধারে সহায়ক: ভারী ব্যায়ামের পর পেশি ব্যথা? ল্যাভেন্ডার তেল ও মিন্ট তেল মিশিয়ে পেশিতে মালিশ করলে আরাম মিলবে।
কাভিতা বলেন, “ল্যাভেন্ডার প্রদাহ বা ইনফ্লামেইশন কমায় এবং পেশি পুনরুদ্ধার দ্রুত করে।”
মঞ্চভীতি বা নার্ভাসনেস কমায়: যারা নিয়মিত প্রেজেন্টেশন দেন বা পারফর্ম করেন, তাদের মধ্যে অনেকের মঞ্চভীতি বা নার্ভাসনেসে ভোগেন।
এমন অবস্থায় কাভিতা বলেন, “তেল হাতে নিয়ে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিন। এটি করটিসল হরমোন কমায় এবং মানসিকভাবে পরিষ্কার ভাবনা বাড়ায়।”
ব্যবহারের পরামর্শ
সতর্কতা
আরও পড়ুন