যদি লক্ষণগুলো মিলে যায় তবে হয়ত খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে।
Published : 23 Apr 2025, 07:08 PM
বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে প্রোটিন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিয়মিত প্রোটিন গ্রহণের লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন, আমিষের উপকারিতা তুলে ধরছেন।
তবে কীভাবে বোঝা যাবে, শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন বা প্রোটিন পাচ্ছে কি না?
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য ও স্পোর্টস নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ অ্যামি গুডসন বলেন, “অনেকেই ন্যূনতম আমিষের চাহিদা পূরণ করলেও, অধিকাংশ মানুষই আরও বেশি প্রোটিন গ্রহণের মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন।”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্রীড়াবিদ, অসুস্থতা বা আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষ, ওজন কমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য বেশি প্রোটিন গ্রহণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রোটিনের ভূমিকা
দেহের কোষ গঠনের পাশাপাশি পেশি বৃদ্ধি, হরমোন এবং উৎসেচক উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ক্ষত নিরাময়ে প্রধান ভূমিকা রাখে।
অ্যামি গুডসন বলেন, “প্রতিদিনের ক্যালরির প্রায় ৩০ শতাংশ যদি প্রোটিন থেকে আসে, তাহলে সেটা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, মনের অজান্তে খাওয়া কমে আসে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।”
প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করার লক্ষণ
দুর্বলতা বা ক্লান্তিভাব: যখন শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন পায় না, তখন পেশিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। ফলে প্রতিদিনকার কাজ করতে গিয়ে অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।
ব্যায়ামের পর দেহ দ্রুত সেরে না ওঠা: প্রোটিন দেহের পেশি মেরামতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে শরীর ব্যায়ামের ক্ষয় পূরণে ধীরগতিতে কাজ করে।
চুল পড়া, নখ ভাঙা বা ত্বকের শুষ্কতা: প্রোটিনের ঘাটতির ফলে কেরাটিন নামক প্রোটিন তৈরি ব্যাহত হয়। এর ফলে চুল পাতলা হয়ে যায়, নখ ভাঙতে থাকে এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া: প্রোটিন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গঠন এবং কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যথেষ্ট প্রোটিন না পেলে দেহ ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে অক্ষম হয়ে পড়ে।
সবসময় খিদা লাগা: প্রোটিন দীর্ঘসময় ধরে তৃপ্ত রাখে। আর না খেলে বারবার খিদে পায়, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব: রক্ত জমাট বাঁধা এবং কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। প্রোটিন না থাকলে কাটা-ছেঁড়ার পর সারে ধীরগতিতে।
হাত-পা ফোলা বা ইডিমা: রক্তে প্রোটিনের ঘাটতি হলে শরীরের কোষে অতিরিক্ত তরল জমে। ফলে হাত, পা, বা পায়ের গোঁড়ালিতে ফোলাভাব দেখা যায়।
মার্কিন পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার এই বিষয়ে একই প্রতিবেদনে বলেন, “এই লক্ষণগুলো অন্যান্য কারণেও হতে পারে। তাই সঠিক পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।”
প্রতিদিন যে পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন
দৈনিক চাহিদা নির্ভর করে বয়স, ওজন, দৈহিক পরিশ্রমের পরিমাণ এবং স্বাস্থ্যগত লক্ষ্য অনুসারে।
গড়পড়তা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের প্রতি কেজি ওজন অনুযায়ী ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন। যেমন- যদি ওজন হয় ৬০ কেজি, তাহলে দৈনিক প্রোটিনের ন্যূনতম প্রয়োজন ৪৮ গ্রাম।
তবে, খেলোয়াড়, গর্ভবতী, ওজন কমাতে আগ্রহী ব্যক্তিদের এই চাহিদা আরও বেশি হতে পারে। তাই সঠিক মাত্রা নির্ধারণে পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা শ্রেয়।
খাবারে সহজে প্রোটিন বাড়ানোর পন্থা
অ্যামি গুডসন পরামর্শ দেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তত তিন বেলার খাবারে ৩০ গ্রাম এবং দুই বেলার নাশতায় ১০ গ্রাম করে প্রোটিন রাখার চেষ্টা করতে হবে।
সকালের খাবারে
নাশতায়
প্রধান খাবার
এক-চতুর্থাংশ প্লেটে রাখতে হবে লিন বা চর্বিহীন প্রোটিন। যেমন- গরুর চর্বিহীন মাংস, মুরগির বুকের মাংস বা মাছ।
বাংলাদেশে আমিষের উৎস হিসেবে ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল, দুধ, চানা, ছোলা, বাদাম এবং সয়াবিন রয়েছে।
আরও পড়ুন