কম্পিউটার, স্মার্টফোন- এই ধরনের মাধ্যমগুলো জ্ঞানীয় ক্ষমতা কমাতে তেমন প্রভাব রাখেনা বলছে গবেষণা।
Published : 23 Apr 2025, 04:19 PM
বিশ্ব জুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা প্রথম প্রজন্ম এখন বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রশ্ন জেগেছে বৃদ্ধ বয়সে এই প্রজন্মের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কতটা ঝুঁকিতে পড়তে পারে?
এর ওপরেই ভিত্তি করে দুটি ‘টেক্সাস ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয় ‘ন্যাচার হিউম্যান বিহেইভিয়র’ সাময়িকীতে। যেখানে ‘ডিজিটাল ডিমেনশা হাইপোথিসস’ বা ডিজিটাল স্মৃতিভ্রংশ নিয়ে বহুদিন ধরে চলে আসা বিতর্কের অবসান ঘটানো হয়ছে।
অনুমান করা হত- সারা জীবন ধরে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাস পায়।
‘মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি’র স্নায়ু ও চক্ষু স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল পরিচালক ডা. অমিত সাচদেভ এই বিষয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “বলা হত- তরুণ ও মধ্য বয়সে অতিসক্রিয় থাকা মস্তিষ্ক বৃদ্ধ বয়সে গিয়ে আরও বেশি থিতু হয়।”
তবে গবেষকরা দেখেছেন, ‘ডিজিটাল ডিমেনশা হাপোথিসিস’টি ধোপে টিকছে না।
৫৭টি গবেষণার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪শ’ ৩০ জন বয়স্কের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে জ্ঞানীয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে ৪২ শতাংশ। যা কিনা অল্প স্মৃতিভ্রংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে ছিল- কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মিশ্র/অধিক ব্যবহার।
“জীবনযা্ত্রার অন্যান্য প্রভাবক, যেমন- শিক্ষা, আয় এবং অন্যান্য বিষয় সংযুক্ত করেও ফলাফল পরিবর্তিত হয়নি। যা ছিল সত্যি উৎসাহিত করার মতো বিষয়”- সিএনএন ডটকম’য়ে বলেন সহ-গবেষক ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’স ডেল মেডিকেল স্কুল’য়ের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জারেড বেনজি।
যদিও প্রযুক্তির ব্যবহারে জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি কম পাওয়া গেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের তথ্যগুলো অসঙ্গত ছিল।
মস্তিষ্ক এবং প্রযুক্তির ব্যবহার
এই গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতা হল- প্রযুক্তির মাধ্যম কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা বিস্তারিত আকারে বলা হয়নি। ফলে অংশগ্রহণকারীরা ফোন নাকি কম্পিউটার ব্যবহার করেছে সেটা পরিষ্কার না।– ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞরা।
ফলে বোঝা যাচ্ছে না, তারা মানগত ব্যবহার করেছে নাকি কেবল সময় পার করার জন্য প্রযুক্তি বেছে নিয়েছে। যে কারণে ক্ষতির বিষয়টাও সেভাবে বলা যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাচদেভ বলেন, “প্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তৃতির কারণে নেতিবাচক প্রভাব বেশি আসার কথা ছিল। আর সম্পূর্ণ প্রযুক্তির বাস্তুতন্ত্র মাপার বিষয়টাও সহজ নয়।”
এই বিষয়ে বস্টনের ‘ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের স্ট্রোক এবং হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. ক্রিস্টোফার অ্যান্ডারসন বলেন, “ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর এর প্রভাব কতটা হবে, তা স্পষ্ট অনুমান করা সম্ভব নয়। কারণ আজকের দিনে প্রযুক্তির যে ব্যপকতা, সে কারণে জন্মের পর থেকেই এর সংস্পর্শে আসছে মানুষ।”
প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে
অ্যান্ডারসন বলেন, “গবেষণাটি অবশ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বাস্থ্যকর দিকটি নির্দেশ করে। তবে অন্যান্য বিষয়ের সাথেও খাপ খাওয়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আসলে প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর বিষয় মেশাতে পারলে উপকারী হবে। আর এই গবেষণা অন্তত এটা নির্দেশ করে যে, মাঝারি মাত্রার ব্যবহারের সাথে জ্ঞাণীয় ক্ষমতা হ্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই।”
ডা. সাচদেভের ভাষায়, “প্রযুক্তির ব্যবহার কোনো না কোনোভাবে উপকারী। কোনও কোনও সময় বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভালো। তবে ডিজিটাল পর্দা ব্যবহার করতে গিয়ে যদি চোখ বা ঘাড়ে চাপ অনুভূত হয় তবে সেটা হল প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের লক্ষণ।”
তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত যে কোনো কিছুই খারাপ। এই বিষয়টা মাথায় নিয়েই সব কাজ করতে হয়।”
আরও পড়ুন
হাঁটাহাঁটির অনুপ্রেরনা বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার