ক্লান্তি, মাড়িতে সমস্যা, রাতে খিদা লাগা বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে বুঝতে হবে পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে।
Published : 28 Mar 2022, 04:52 PM
রাস্তায় বের হলেই মুখরোচক খাবারের হাতছানি। দাওয়াত কিংবা আড্ডায় মজাদার খাবার। বাসায় হয়ত তেল-চর্বি খাওয়া হচ্ছে বেশি।
তাই বর্তমান সময়ে দৈনিক খাদ্যাভ্যাস থেকে সঠিক পুষ্টি দেহ পাচ্ছে কিনা তা বোঝার লক্ষণও রয়েছে।
‘রিয়েল লাইফ নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা কানাডা’র পুষ্টিবিদ জেনিন লাফোর্ট ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে দেহে পুষ্টি ও আনন্দ দুটোরই প্রয়োজন রয়েছে। তাই খাদ্যাভাসে পেট ভরে, পুষ্টির চাহিদা মেটায় এমন খাবার যোগ করতে হবে এবং ক্ষতি করে এমন খাবার বাদ দিতে হবে। এই দুয়ের ভারসাম্য রক্ষার মধ্য দিয়ে দেহ সুস্থ রাখা সম্ভব।”
মুখের স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা
‘দ্য ন্যরিশড ব্রেইন’য়ের লেখক ক্যানসাস’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টি শেরল মুসাত্তো মনে করেন, মাড়ি এবং মুখগহ্বর থেকে রক্তপাত শুধুমাত্র ফ্লসিং এবং ব্রাশ করার অভাবে নয় বরং খাদ্যাভ্যাস ভালো না হওয়ার লক্ষণও হতে পারে।
একই প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্তপাতের কারণ হল পর্যাপ্ত ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন- সিট্রাস বা টক ফল, টমেটো এবং শাকসবজি না খাওয়া। এছাড়াও বেশি চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার খাওয়া মুখের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে।”
রাতে সারাক্ষণ ক্ষুধা লাগা
অনেকেরই রাতের খাবারের পরে ক্ষুধা লাগতে পারে। তাই মাঝে মধ্যে নাস্তা খাওয়া যায়। তবে সবসময়ই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধা লাগতে থাকে তাহলে তা সুষম খাবারের ঘাটতি নির্দেশ করে।
‘নিউট্রিকম’য়ের পরামর্শক ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইটিং হ্যাবিট ল্যাব’য়ের প্রতিষ্ঠাতা কিটি ব্রোহিয়ার বলেন, “এর অর্থ হল দেহ পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান পাচ্ছে না।”
“প্রচুর পরিমাণে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের কারণে পরে খিদা লাগতে পারে। দিনে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও আঁশ-জাতীয় খাবার খাওয়া পেট ভরা রাখে। সন্ধ্যার নাস্তায় হালকা খাবার খাওয়া, রাতের খাবারের দুয়েক ঘন্টা পরে প্রয়োজনে হালকা নাস্তা করা দেহের জন্য যথেষ্ট,” বলেন তিনি।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা
অনেক কারনেই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা খাবারে পর্যাপ্ত আঁশের অভাবে হয়ে থাকে।
টরন্টো’র পুষ্টিবিদ ক্রিস্টিনা ইবোনি বলেন, “ফল, শাকসবজি, মটরশুঁটি এবং পূর্ণ-শস্যে আঁশ পাওয়া যায়। সুস্থ থাকতে এসব খাবার খাওয়া জরুরি।”
ক্লান্ত ও দুর্বলতা অনুভব করা
খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টির অভাব থাকা ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেবেই।
এই সমস্যা দূর করতে পুষ্টিবিদ ইবোনি, প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় হালকা নাস্তা করার পরামর্শ দেন। যেমন- কাঠ বাদাম, আপেল, গাজর, শস্যের তৈরি টোস্ট সঙ্গে ডিম বাদামের মাখন ইত্যাদি।”
এই ধরনের খাবার সবসময় সঙ্গে রাখলে যে কোনো সময়ই তা খেয়ে নেওয়া যায়। ফলে দেহে ক্যালরি ও পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় না, বলে জানান তিনি।
ইবোনির মতে, “নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করলে ডাক্তারের কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে কম।”
পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা কমাতে সহায়তা করে।
মনোযোগের ঘাটতি
কর্মক্ষেত্র বা সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক সময় মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পুষ্টিবিদ মুসাত্তো এরজন্য অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকেও দায়ী করেন।
তার মতে, “মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে ও উন্নত করতে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড প্রয়োজন।”
আখরোট, তিসি ও চিয়া বীজ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়া দেহের ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক বলে জানান এই পুষ্টিবিদ।
বরাবার অসুস্থ হওয়া
যখন তখন ঠাণ্ডা, কাশি ও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া পুষ্টি ঘাটতির লক্ষণ। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন মুসাত্তো।
তিনি খাবার তালিকা থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে তাজা ফলমূল, শাকসবজি, মটর ও মাছ, মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এগুলো ভিটামিন এ, সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম, আয়রণ এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও অ্যান্টিবডি বাড়াতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করা বেশ কঠিন। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। কেননা ব্যক্তিভেদে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন