অস্বাস্থ্যকর নাস্তায় ওজন বৃদ্ধি

নাস্তা হিসেবে কি খাচ্ছেন, ওজন কমাতে চাইলে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2020, 11:52 AM
Updated : 15 Dec 2020, 11:52 AM

শরীরচর্চা না করে শরীরের বাড়তি ওজন ঝরানোর কথা চিন্তা করা অযৌক্তিক, বরং আগে যতটুকু করতেন তার চাইতে বেশি শরীরচর্চার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আবার সেই সঙ্গে শরীর পর্যাপ্ত জ্বালানি পাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে কঠোরভাবে।

খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ‘স্ন্যাকস’ বা নাস্তার বিষয়টা অনেকসময় অবহেলিত থেকে যায়, আর দিনশেষে ওই অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস’য়ের কারণেই ওজন কমানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

মহামারীর এই সময়ে নানান দুশ্চিন্তা আর ঘরবন্দি জীবনে স্ন্যাকস’য়ের অভ্যাস আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় সবচাইতে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসগুলো। সেই প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল বিস্তারিত।

আলুর চিপস: এই খাবার পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে যেমন কঠিন তেমনি কঠিন এর উপকারী দিক খুঁজে পাওয়া। আর অপকারী দিকের যেন শেষ নেই।

সুস্বাদু এই খাবার প্রচণ্ড আসক্তি সৃষ্টি করে। ফলে কয়েক টুকরা খেয়ে রেখে দেবেন সেটা যেমন প্রায় অসম্ভব তেমনি দ্রুত তা প্রতিদিনের অভ্যাস পরিণত হয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা দেখা যায়, যাদের খাদ্যাভ্যাসে আলুর চিপস আছে তাদের প্রতি বছর ওজন নির্ণয়ে ওজন বাড়তে দেখা গেছে। তাই ওজন কমাতে চাইতে আলুর চিপস ত্যাগ করতেই হবে। 

চকলেট: মানবজাতির প্রিয় খাবারের তালিকা করলে চকলেট প্রথম সারিতে থাকবে একথা নিশ্চিত। প্রতিদিনই যদি এক টুকরা চকলেট খান তবে তা আসলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

বিশেষজ্ঞরা বলেন দিনে সর্বোচ্চ ৩.৫ আউন্স চকলেট খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে সমস্যা হল তা সব চকলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

‘মিল্ক চকলেট’ যতটুকুই খান না কেনো তাতে শুধুই ওজন বাড়বে। কারণ এতে ক্যালরি ও চিনি দুটোই থাকে অতিমাত্রায়।

‘আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ের মতে, চকলেট হল সেই খাবার যাতে ‘এনার্জি ডেনসিটি’ সবচাইতে বেশি। তাই বেছে নিন ডার্ক চকলেট, খান পরিমাণ মতো।

ভাজা পোড়া: রাস্তার ভাজা পোড়া খেতে বেশ মুখরোচক। তবে এসব খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। কারণ একেই তো রয়েছে বাড়তি তেল গ্রহণের বিষয়। পাশাপাশি ময়দা-আলুর পুড়ি কিংবা বেগুন ভাজার জন্য বেসন এসবে মাখানো হয় লবণ, যা অতিরিক্ত হিসেবে দেহে জমা হতেই থাকে।

ইয়োগার্ট পারফেইটস: ‘ইয়োগার্ট’ বা টক দই শরীরের জন্য উপকারী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সেই টক দইতে যখন বিভিন্ন খাবার যোগ করা হয় তখন কি যোগ করছেন তার ওপর নির্ভর করতে সেটা স্বাস্থ্যকর থাকছে কি-না!

প্রায় সকল ‘ফ্লেইভারড ইয়োগার্ট’ চিনিতে ভরপুর। ‘ইয়োগার্ট পারফেইটস’ বানাতে তার সঙ্গে ‘টপিং’ হিসেবে হয়ত যোগ করলেন ‘গ্রানোলা বার’, এখানেই আপনার সারাদিনের চিনির কোটা পূরণ হয়ে গেল।

এরপর এক চামচ চিনি খেলেও তা অতিরিক্ত হবে। আবার এই মাত্রাতিরিক্ত চিনি অন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ডেকে আনবে। তাই শুধু টক দই খান কোনোরকম ‘ফ্লেইভার’ বাদে। 

চিনিযুক্ত সিরিয়াল: সিরিয়ালকে স্বাস্থ্যকর মনে করে নিশ্চিতে তা স্ন্যাকস হিসেবে খান অনেকেই। তবে সমস্যা হল অনেক সিরিয়ালে অতিরিক্ত চিনি থাকে, যা স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া আস্ত একটি ক্যান্ডি বার খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর। আর দিনের শুরুতে সিরিয়াল খাওয়ার ক্ষতিও কম নয়।

স্বাস্থ্যকর উপায় হল ওটমিল। এতে লম্বা সময় পেট ভরা থাকবে, ফলে উল্টাপাল্টা খাওয়া ও ক্যালরি গ্রহণ দুটোই কমবে। 

ক্যানড ফ্রুট ককটেল: সরাসরি দোকান থেকে কাটা অবস্থায় এক কৌটা ফল পাওয়া গেলে আর কি চাই? আর এটা তো ফল, সেটা তো স্বাস্থ্যকর। মজার ব্যাপার হল অধিকাংশ ‘ক্যানড ফ্রুট ককটেইল’য়ে থাকে ‘কর্ন সিরাপ’য়ে ভরপুর, যা চিনিতে টইটম্বুর। আর চিনির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। চিনি যত বেশি খাবেন, বিশেষজ্ঞরা বলেন, ততই আপনার হতাশা বাড়বে।

বাদামের টুকরা দেওয়া টুকরা: ইংরেজিতে ‘গ্রানোলা বার্স’ হিসেবে পরিচিত। খাটি বাংলা ভাষায় যাকে বলে কটকটি, চিনি মিশ্রিত বাদাম দেওয়া টুকরা।

আবার বেশিরভাগ ‘গ্রানোলা বার’ হয় চকলেট কিংবা সিরাপ’য়ে মাখানো, যা যোগ করে আরও চিনি। আর যে প্রোটিন আর ফাইবারের জন্য গ্রানোলা বার বেছে নিয়েছেন তা সরসরাহ করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ উপকরণ মেলে না অধিকাংশ বারেই। হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে হলে চিনি খাওয়া পরিমাণ যথাসম্ভব কমাতে হবে। তাই ওজন কমাতে চাইলে সবার আগে নজর দিতে হবে কতটা চিনি খাচ্ছেন সেদিকে।

আরও পড়ুন