অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “সরকারের যে পরিসংখ্যান আছে, সেখানে হাত দেওয়া দরকার। সঠিকভাবে উৎপাদন, সরবরাহ, চাহিদা নির্ণয় করা দরকার। শুধু পেঁয়াজ না, আলু, চালসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রও এটা জরুরি।”
Published : 24 Apr 2025, 01:48 AM
প্রতিবছর রোজার সময় পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা দেখা গেলেও এবার দেখা গেল ব্যতিক্রম। পুরো রোজার মাস পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্রেতারা স্বস্তিতে ছিলেন; কিন্তু বাজার চড়ছে রোজার পর।
চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। অন্যদিকে চাষিদের কেউ-কেউ লোকসানের কথা বলছেন। প্রশ্ন উঠছে, পেঁয়াজ ব্যবসার মুনাফায় পকেট ভরছে কোন পক্ষের?
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের বিক্রেতা সবুজের ভাষ্য, “পেঁয়াজ এখন কৃষকের খেত থেকে গেছে হিমাগারে। খেতে যতদিন ছিল, দাম কম ছিল। আর এখন ধরে রেখে দাম বাড়ানো হচ্ছে।”
একই কথা মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আল আমীনের। তিনি বললেন, “পেঁয়াজ কৃষকের খেত থেকে উঠে গেছে। এখন কৃষক আর বড় মজুদদারদের কোল্ড স্টোরেজে আছে মজুদ করা। ভারতীয় পেঁয়াজ না ঢুকলে দাম আরও বাড়তে পারে।”
দাম বাড়ার পেছনে মজুদদারি
মাঠ থেকে ওঠার পর কৃষক থেকে শুরু করে পাইকার বা মজুদদার- সবাই পেঁয়াজ মজুদ করছে। মজুদ পেঁয়াজ বাজারে কম আসায় মূলত দাম বাড়ছে, এমনটাই বলছেন মাঠপর্যায়ের কৃষকরা।
সরেজমিন রাজবাড়ীর বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা পেঁয়াজ জমি থেকে তোলার পর পাট, তিলসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন। মাঠে না থাকলেও চাষিদের ঘরে রয়েছে পেঁয়াজ। যাদের ফলন খুব ভালো হয়েছে, তারাই হাট-বাজারে বিক্রি করছেন।
বুধবার জেলার সদর উপজেলার চন্দনী পেঁয়াজ হাটে চাষিদের মাথা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়, ঘোড়ার গাড়িতে করে পেঁয়াজ আনতে দেখা গেছে। এসব পেঁয়াজ মান ভেদে প্রতি মণ ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মণ প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা বাড়ায় খুশি চাষিরা।
পেঁয়াজের মৌসুম শেষ না হতেই কেন বাড়ছে দাম- এমন প্রশ্নে চন্দনী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আফজাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের আগে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। তখন পেঁয়াজ ছিল কাঁচা। অল্পতেই এক মণ হয়ে যেত। এখন পেঁয়াজ শুকিয়ে গেছে যে কারণে পরিমাণে বেশি লাগছে।
“তাছাড়া আমরা যারা চাষি আছি, তারা যার যতটুকু জায়গা ঘরে আছে, সেখানে সংরক্ষণ করে রাখছি। যেন সুবিধা মত সময়ে বেশি দামে বিক্রি করতে পারি। যে কারণে বাজারে আমদানি কম হচ্ছে। আরেকটি কারণ হল ‘মজুদ পার্টি’ নেমে পড়েছে। তারা যে দাম পাচ্ছে সেই দামেই কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যে কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।”
সুলাইমান প্রামাণিক নামের আরেকজনও বললেন একই কথা।
তিনি বলেন, “দাম বাড়ার প্রধান কারণ হল কাঁচা পেঁয়াজ এখন বাজারে নাই। কৃষকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে তাদের বাড়িতে পেঁয়াজ মজুত করে রেখেছে। যে কারণে বাজারে আমদানি কম হচ্ছে। তাছাড়া বড়-বড় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে স্টক করে রাখার জন্য নামছে। বাজারে আমদানি কম হওয়ায় তারা বাজারে যে দামে পাচ্ছে সেই দামেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে।”
চন্দনী বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মুন্না বললেন, “মাঠে এখন পেঁয়াজ নেই। চাষিরা পেঁয়াজ সবাই বাড়িতে রাখছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হচ্ছে। যেখানে পাঁচশ মণ পেঁয়াজ দরকার সেখানে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে তিনশ মণ। যে কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে।”
দাম বাড়ার তথ্য মিলেছে ঝিনাইদহ জেলা থেকেও। জেলার শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের চাষি মো. নুরুজ্জামান পাপ্পু বলেন, এবার ১৫ বিঘাতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। প্রথম দিকে ১৪৫০ টাকা মণ দরে ১০০ মণ বিক্রি করেছেন। বাকি পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছেন; পরে বিক্রি করবেন।
শৈলকুপা উপজেলার ভাটবাড়িয়া গ্রামের শামসুল ইসলাম বলেন, “আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। প্রায় দুইশ মন পেঁয়াজ হয়েছে। একশ মণ মজুদ করেছি। পরে বিক্রি করব।”
আবাদে খরচ কেমন
কৃষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বিঘা জমিতে জায়গা ভেদে পেঁয়াজ চাষে গড়ে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে, জমি ইজারা নিয়ে চাষ করলে খরচ বেশি পড়ে।
নাটোরের নলডাঙ্গার পাটুল এলাকার কৃষক রুবেল আহমেদ বলেন, “পুকার (পোকা) যে উৎপাদন, পিঁয়াজে দুই দিন পরপরই ওষুধ দেওয়া লাগে। জমি লিজ লিতেই (নিতে) এখন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টেকা লাগবে। ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার জমিও আছে। এক বিঘা মাটিত ৯ থেকে ১০ কেজি বিচি লাগে। ৫ হাজার টেকা কেজি এখন (অন্য সময় দুই আড়াই হাজার টাকা কেজি)।
“লিজের ৫০ হাজার টাকা প্রথম চান্সে দিলেন। এরপর চারা, চাষবাষ হাবিজাবি (সার ও কীটনাশাক) ৩০-৪০ হাজার ধরেন। চারা লাগাতে ধরেন ১২ হাজার টাকার কামলা ল্যাগবি। এক বিঘা মাটিত যদি ৬০ মুণ (মণ) পিঁয়াজ হয়, প্রতি মুণে খরচ হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টেকা। পিঁয়াজ উটার (ওঠা) পরে দাম গেছে হাজার ১২ শ টেকা। মুড়িকাটা ৫ থেকে ৬০০ টাকায়ও বিক্রি হই। এখন বাজার একটু বেশি (১৫০০-২০০০), কিন্তু দাম হওয়া লাগবি ৪-৫ হাজার টেকা মুণ।”
নলডাঙ্গার ঠাকুর লক্ষ্মীকুল এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, “এক বিঘা জমি (পেঁয়াজ) লাগাতে-তুলতে ২৩ হাজার টাকা ল্যাগবি। ওষুধে ২০ হাজার টাকা খরচ যায়। ৪৩ হাজার; আর খায় খালাসি জমি যদি ৩০ হাজার টাকা বিঘা জমি লিচ্চে। এক আবাদে সেটি ১৫ হাজার ধরেন। তাইলে দুই কম ৬০ হচ্চে। এরকমই ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ যায়।”
চাষে লোকসান, ঋণের জালে অনেকেই পলাতক
রাজশাহীর এক বৃদ্ধ পেঁয়াজচাষি ট্রেনের নিচে মাথা দিয়েছেন। তার আত্মহত্যার ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ঘটনার পেছনে নানা কারণ উঠে এলেও জানা যাচ্ছে, তিনি পেঁয়াজ চাষ করে লোকসানের শিকার হয়েছিলেন, সে হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করতে পারেন।
পেঁয়াজ চাষ হয়, এমন কয়েকটি জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে লাভ-লোকসানের দুই রকম তথ্য উঠে এসেছে। কোথাও চাষ পদ্ধতি না জানায়, কোথাও আবার ঋণের ফাঁদে পড়ে লোকসান গুণেছে চাষি।
ভালো দাম না পেয়ে চাষিদের ক্ষোভের পরে নাটোরে দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। নাটোরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হোসেন বলেন, এক মাস আগেও নলডাঙ্গা, ঠাকুর লক্ষ্মীকুলসহ অন্যান্য বাজারে পেঁয়াজ আকারভেদে প্রতি মণ ৭০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে; এখন ১৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ না এলে দাম আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
তবে চাষির লাভের পাল্লা প্রায় শূন্যই থেকে যাচ্ছে।
লাভের আশায় কীভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছেন সে তথ্য তুলে ধরে নলডাঙ্গার ঠাকুর লক্ষ্মীকুল এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, “এবার ল্যাইলা (মুড়িকাটা) পিঁয়াজে মানুষ বেশি লস খাচে (খেয়েছে)। বিলের যে জমি, অনলি দুইটা আবাদ হয়, পুঞ্চাশ-ষাট হাজার টিকা দিয়্যা ডাক লিচে। পিঁয়াজের যে দাম ল্যাগান্যের টিকাও হয়নি। যে জমি ২০-৩০ হাজার টাকা ছিল, সেই জমি ৬০ হাজার টিকা ডাক দিয়্যা লিচে। গেল বছর পিঁয়াজ গেছে ৪ হাজার ৫ হাজার টিকা (টাকা) মণ।
“মানুষ লাভের আশায় এই কাজডা করছে। বেশিরভাগ গরিব মানুষই করছে। বড় লোকেরা তো জমি ড্যাকে লেয় না, গরিব মানুষেরাই লেয়। গরিব মানুষই বেশি মরিছে। একজনের কাছে জমি আছে, আরেকজন বেশি দামে লিছে। জেদাজেদি করি লিছে।”
তিনি বলেন, “এত দাম আবাদের! এক বিগা জমি ৪ লাক (লাখ), ৫ লাক টিকা বেঁচচে। মানুষের একটা লোব (লোভ)। এবার জিনিসের দাম কম, এজন্যই লস হচে, না হলে লস যায় না। যে রিকশা চালায় খায়, এবার ওই যায়ে দুই বিঘা জমি লিচে, লোবে।”
অভিজ্ঞতা না থাকলেও অনেকে এভাবে পেঁয়াজ আবাদে লগ্নি করেছে বলে জানান জহুরুল।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমার মামাত ভাই মিন্টু ঢাকাত থেকি হট করে আচচে, চার বিঘা জমি লিচে। চারার দাম বেশি ছিল, ৪০০ টাকা কেজিও কিনছে। লোবে, ওই যে বেচপি বেশি দামে। পরে খরচও উটেনি। জমি সাবাবিক দামে লিতে হবি। আবাদ বুজতে হবি।”
সুদে টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে টেনে এই কৃষক বলেন, “আমাদের গেরাম সুদে ভরে গেছে। লোন করি টেকা লেওয়ার মানুষের অভাব নাই। এনজিওত থেকে লেয় আবার লাকে ২০ হাজার। এডা ১ বছরের জন্য, যে সময় লিবি পরের বছর ওই দিনে দিবি। যারা লেয় দিতে পারে। আর যারা পারে না, ঢাকা পুলায় (পালিয়ে) যায়।”
একই সুরে কথা বলেন নলডাঙ্গার আরেক চাষি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কৃষকের মদ্যেই যাদের টাকা আছে তারা সুদে দেয়। কেউ আবার আছে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে জমি লিজ লিয়ে ৪০ হাজার টাকায় আবার আরেকজনের কাছে লিজ দেয়। লিজের উপর লিজ, লাবের জন্য। যারা লস খাচ্চে, ডস খাচ্চে ঢাকাত চলে যাচ্চে।”
অসুবিধা কোথায়- এমন প্রশ্নে তার উত্তর, “বীজ, সার ও ওষুধের দামটা বেশি। এগলার দাম কমলে, পিঁয়াজের দাম একটু বাড়তি হলে কৃষকের লাব আসপি।”
ক্ষোভ জানিয়ে আরেক চাষি মো. হজরত আলী বলেন, “পেয়াজের ফলন কম (৪০-৫০ মণ বিঘায়), দামও কম। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ করে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হইছে। ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। যারা টাকা-পয়সা ঋণ করে নিছে, বাড়ি-ঘর থুয়ে পুলাইছে।”
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, এবছর নাটোর জেলাজুড়ে ৪ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় পেঁয়াজের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়েছে।
কৃষকদের ফসলের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে করণীয় কী, জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “সরবরাহ কত আর চাহিদা কত, সেটা নির্ণয়ে আমাদের বহুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছে। এটা না জানার কারণে, বেশি বা কম নির্ণয় করলে অফ সিজনে উৎপাদন বেশি হলেও দেখা যায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরবরাহ সংকট হচ্ছে।
“আমার মনে হয়, সরকারের যে পরিসংখ্যান আছে, সেখানে হাত দেওয়া দরকার। সঠিকভাবে উৎপাদন, সরবরাহ, চাহিদা নির্ণয় করা দরকার। শুধু পেঁয়াজ না, আলু, চালসহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রও এটা জরুরি। সঠিক পরিসংখ্যান থাকলে সরকারের পরিকল্পনাতেও সুবিধা হয়। এতে দামের সমস্যাটা অনেকাংশেই কমে আসবে।”
মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা একটা গবেষণা করে দেখেছি, সরাসরি পণ্য পরিবহন করলে দাম বরং বেশিই পড়ে। সরবরাহ চেইনে মধ্যস্বত্বভোগীদেরও দরকার হয়। তবে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, এই চেইনটা যেন খুব লম্বা না হয়।
“আর বাজারটা সরকারের তদারকি করা উচিত, যাতে বাজার বাজারের মত ফাংশনাল বা প্রতিযোগিতামূলক থাকে। মনোপলি মার্কেট যাতে না হয়, বাজারে যেন যথাযথ প্রতিযোগিতা থাকে। আমার মনে হয়, এটা কাজে দেবে।”
কোনো-কোনো জেলায় লাভ হলেও সীমিত
নাটোরের কৃষকেরা লাভের মুখ না দেখলেও রাজবাড়ী জেলার কৃষকরা বলছেন, লাভ সীমিত হলেও তাদের লোকসান হচ্ছে না।
জেলার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল কেজি ৩৫ টাকা।
কালুখালী উপজেলার চরশ্রীপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি ইমরান খান বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ লাগে ২০ হাজার টাকার। শ্রমিক ১০ হাজার টাকা। জমি চাষ, সার, ওষুধ, কীটনাশক, সেচ সব মিলিয়ে ২০ আরও হাজার। সবমিলিয়ে এক বিঘায় খরচ ৫০ হাজার টাকা। জমি লিজ নিলে এর সঙ্গে আর ৩০ হাজার টাকা যোগ করতে হবে।
“যদি ফলন ভালো হয় তাহলে ৭০ থেকে ৭৫ মণ (বিঘায়) পেঁয়াজ হবে। আর ফলন কম হলে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। গড়ে ১৫ টাকা মণ ধরলে ৬০ মণে টাকা আসে ৯০ হাজার। আর ৭০ মণে আসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। তাহলে তো কোনোভাবেই কৃষকের লোকসান হয় না। হয়ত উৎপাদন খরচ বাদে কোনো বছর লাভ থাকে সামান্য কিন্তু লোকসান তো হয় না।”
ইমরানের ভাষ্য, রাজবাড়ী দাদন প্রথা নেই। পেঁয়াজ চাষের জন্য এনজিও থেকে ঋণও দেওয়া হয় না। চাষিরা যখন পেঁয়াজ চাষ শুরু করে তখন বাকিতে সার, ওষুধ, কীটনাশক নিয়ে আসেন। সেক্ষেত্রে শর্তই থাকে পেঁয়াজ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবেন।
তাহলে চাষিরা বলে তাদের প্রচুর খরচ হয়েছে, লোকসান হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার তিন বিঘার বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষের খরচ তিনি লিখে রেখেছেন।
“আমার মনে হয় অধিকাংশ চাষি হিসাব লিখে রাখে না যে কারণে তারা মনে করে অনেক খরচ হয়েছে,” দাবি তার।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বলেছেন, সারাদেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ রাজবাড়ী জেলায় আবাদ হয়। এবছর জেলায় ৩৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা, ৩১ হাজার ২৭১ হেক্টর জমিতে হালি ও ১৪২ হেক্টর জমিতে কদম বা দানা পেঁয়াজ রয়েছে।
“৫ লাখ ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বর্তমানে যে বাজারদর রয়েছে তাতে কৃষকেরা লোকসানে নেই।”
চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলাতেও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, এ বছর ঝিনাইদহের ১৩ হাজার ৭১২ হেক্টরে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
জেলার শৈলকূপা বাজারে দেশি জাতের পেঁয়াজ প্রতি মণ ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় জাত ‘সুখ সাগর’ ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, এবার ৮০ ভাগ জমির পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। ২০ ভাগের ফলন কম হয়েছে। যারা নাবি করে চাষ করেছে, তাদের ফলন কম হয়েছে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন ঝিনাইদহ প্রতিনিধি বিমল সাহা, নাটোর প্রতিনিধি তারিকুল হাসান ও রাজবাড়ী প্রতিনিধি শামীম রেজা]