হৃদরোগ-সহ দ্রুত মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়াতে পারে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
Published : 24 Apr 2025, 06:00 PM
হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি কমাতে চাইলে দ্রুত পদক্ষেপে হাঁটার অভ্যাস গড়লে উপকার মিলতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসগো’ পরিচালিত বড় আকারের গবেষণার ফলাফলে এমন দাবি করা হয়।
‘হার্ট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণা-পত্রে বলা হয়- ধীর পদক্ষেপের তুলনায় দ্রুত হাঁটলে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হওয়ার ঝুঁকি ৩৫ থেকে ৪৩ শতাংশ ঝুঁকি কমে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনকে বলা হয় ‘অ্যারিদমিয়াজ’, এর মধ্যে আছে- ‘এইট্রিয়াল ফাইব্রেলেইশন’ বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, ‘ব্রেইডিঅ্যারিদমিয়া’ বা অস্বাভাবিক ধীর হৃদস্পন্দন (মিনিটে ষাটের কম স্পন্দন হয়) এবং ‘ভেন্ট্রিকিউলার অ্যারিদমিয়াস’ বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
জ্যেষ্ঠ গবেষক ‘ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসগো’র জনস্বাস্থ্য-বিষয়ক অধ্যাপক ডা. জিল পেল সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “হাঁটার সবচেয়ে বড় বিষয় হল, এটা সবার জন্যই সহজলভ্য। এর পেছনে জিম’য়ে গিয়ে অর্থ খরচ করতে হয় না, কোনো যন্ত্র কিনতে হয় না। দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে হাঁটলেই হয়।”
২০২৪ সালে নেদারল্যান্ডের ‘মাসট্রিকট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ইন্সটিটিউট’য়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৬ কোটি মানুষ অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনে ভুগছে।
ডা. পেল বলেন, “সাধারণভাবে বলা হয়, যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হওয়ার পাশাপাশি দ্রুত মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও চিকিৎসা এবং ওষুধ রয়েছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হওয়ার বিষয়ে প্রতিরোধ গড়া উচিত।”
এই গবেষণার জন্য ২০০৬ সালে থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৫ লাখেরও বেশি প্রাপ্ত বয়স্কের স্বাস্থ্য ও দৈনিক কার্যকলাপের তথ্য পর্যালোচনা করেন গবেষকরা। ‘ইউকে বায়োব্যাংক স্টাডি’র জন্য সংগ্রহ করা এসব তথ্যের অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে।
অংশগ্রহণকারীদের হাঁটা-বিষয়ক নানান প্রশ্ন করা হয়- যেমন তারা কীভাবে হাঁটে. গড়ে তাদের হাঁটার গতি কেমন ইত্যাদি।
পরের ১৩ বছর ‘ফলো-আপ’ সময়ে দেখা গেছে গড়ে ৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন তৈরি হয়েছে।
হাঁটার সাথে হৃদগতির সম্পর্ক
গবেষকরা জানান, পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা হওয়াতে কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে কিছু প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
ডা. পেল বলেন, “যাদের ইতোমধ্যেই কোনো অসুখ আছে তারা ধীরে হাঁটবে- এই ঝুঁকি থেকেই যায়। তারপরও আমারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সঠিক তথ্য বের করতে।”
গবেষণার শুরুতে কারও হৃদসংক্রান্ত রোগ বা জটিলতা ছিল না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়।
অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন থেকে নানান ধরনের অবস্থা তৈরি হতে পারে। যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতা।
এই তথ্য জানান নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি’র ‘সেন্টার ফর দি প্রিভেনশন অফ কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ’য়ের ‘কার্ডিওভাস্কুলার ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ের পরিচালক ডা. শন হেফরন।
যদিও অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ছিল পুরুষ। বাস করছেন কম বঞ্চিত এলাকায়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেছেন এবং ওজন ছিল কম।
তারপরও গবেষকরা দেখতে পান, দ্রুত হাঁটার ক্ষেত্রে প্রায় এক তৃতীয়াংশের মতো উপকার পাওয়া গেছে। কারণ কমেছে কোলেস্টেরলের মাত্রা। গ্লুকোজ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হওয়াতে ওজন বেড়েছে কম।
“আর এসব কারণেই অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন হওয়ার ঝুঁকি কমেছে”- মন্তব্য করেন ডা. পেল।
আরও পড়ুন