“সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ থামানো বা অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং নিম্ন অববাহিকার জনগণের অধিকার হরণ যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বিবেচনা করা হবে,” সতর্ক করে বলেছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।
Published : 24 Apr 2025, 06:53 PM
পেহেলগামে হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে নয়া দিল্লি সিন্ধু পানিবন্টন চুক্তি স্থগিতসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পর এবার পাল্টা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত এবং ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে পাকিস্তান এসব সিদ্ধান্ত জানায়, বলছে ডন।
ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সশস্ত্র বাহিনীগুলোর প্রধান ও উচ্চপদস্থ সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিতিরা পেহেলগামে হামলা পরবর্তী জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বলে শাহবাজ শরিফের কার্যালয়ের দেওয়ার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
ভারতের নেওয়া পদক্ষেপের পাল্টায় ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত এবং ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধের কথাও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
“কেবল সিমলাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সকল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার প্রয়োগ করবে, যতক্ষণ না ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস উসকে দেওয়া, সীমান্ত পেরিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহ লঙ্ঘনের মতো স্পষ্ট আচরণ থেকে বিরত হয়,” বলা হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে।
ভারত যে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সমালোচনা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক এ চুক্তির কোথাও একতরফা চুক্তি স্থগিতের বিধান নেই।
“পানি পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ, এর ২৪ কোটি লোকের লাইফলাইন। যে কোনো মূল্যে এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে।
“সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানির প্রবাহ বন্ধ বা অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো চেষ্টা এবং নিম্ন অববাহিকার জনগণের অধিকার হরণ যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বিবেচনা করা হবে এবং জাতীয় শক্তির সর্বস্তরের পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দিয়ে এর মোকাবেলা করা হবে,” সতর্ক করেছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।
বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণায় তারা বলেছে, ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের পাশাপাশি নয়া দিল্লিকে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য করতে দেওয়া হবে না।
পেহেলগামে হামলার পর ভারত সার্ক ভিসা এক্সেমপশন স্কিমের (এসভিইএস) অধীনে পাকিস্তানিদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের দ্রুত ভারত ছাড়তে যে নির্দেশনা দিয়েছে, পাকিস্তানও পাল্টা একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ছাড় দিয়েছে তীর্থযাত্রায় পাকিস্তান যাওয়া শিখদের।
নয়া দিল্লি পাল্টায় ইসলামাবাদও দেশটিতে থাকা ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে নির্দেশনা দিয়েছে।
পেহেলগামে মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ডজনের বেশি আহতের ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র করেছে। এই ঘটনায় ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামে একটি সংগঠন দায় স্বীকার করেছে।
এই সংগঠনটি পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। টিআরএফ এর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সমর্থন আছে বলে ধারণা করা হয়।
লস্কর ই তৈয়বার প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের মুম্বাইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার হোতা হাফিজ মহম্মদ সাঈদ সেই সময় যে সব ‘ছায়া সংগঠন’ গড়ে তুলেছিলেন, সেই সূত্রেই গড়ে উঠেছিল ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) -এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো।
এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালাতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সার্ক ভিসা স্কিমের অধীনেও ভারতে ভিসা পাবে না পাকিস্তানিরা, একাধিক সিদ্ধান্ত দিল্লির