শরীরের ওপর বি ভিটামিনের প্রভাব

আট ধরনের বি ভিটামিন রয়েছে। আর প্রত্যেকটির কাজ আলাদা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 07:59 AM
Updated : 6 Oct 2022, 07:59 AM

এই ভিটামিনের অভাবে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। দেখা দিতে পারে দুর্বলতা।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্মাডি’র ফার্মাসিস্ট রোজানা সুথার্বি বলেন, “বি ভিটামিন হল মোট আটটি। বি ওয়ান (থায়ামিন), বি টু (রিবোফ্লাভিন), বি থ্রি (নায়াসিন), বি ফাইভ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড), বি সিক্স (পাইরোডক্সিন), বি সেভেন (বায়োটিন), বি নাইন (ফোলাট বা ফলিক অ্যাসিড) এবং বি টুয়েলভ (কোবালামিন)।”

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি বি ভিটামিন’য়ের কাজ শরীরে ভিন্ন। কেউ স্নায়ুর চারপাশে আবরণ তৈরি করে যাতে তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। কেউ খাবার থেকে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। কিছু আবার অন্যান্য ভিটামিন শরীরের শোষণ করতে সাহায্য করে।”

হজমে সহায়ক, পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এই ভিটামিনগুলোই লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে যা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে।

বি নাইন এবং গর্ভাবস্থা

সুস্থ ও স্বাভাবিক গর্ভধারণ ও গর্ভাবস্থার জন্য ভিটামিন বি নাইন বা ফোলাট খুবই জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড অ্যাট দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে ডা. সুথার্বি পরামর্শ দেন, “সন্তান ধারণ করতে পারবেন এমন বয়সে পা দেওয়া পর প্রতিটি নারীর উচিত প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড বা ফোলাট গ্রহণ করা।”

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রতিদিন দরকার ৬০০ থেকে ১০০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড। গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক ও ‘স্পাইনাল কলাম’য়ের সুস্থ গঠনের জন্য এই উপাদান দরকার।

তাই গর্ভধারনের আগে ও পরে এই উপাদান পর্যাপ্ত সরবরাহ শরীরে থাকলে সন্তান প্রসবজনীত অস্বাভাবিকতা থেকে সুরক্ষা মিলবে।

থায়ামিন এবং কর্মশক্তি

খাবার থেকে আসা পুষ্টি উপাদান থেকে কর্মশক্তি উৎপাদনের কাজের আবশ্যক একটি উপাদান হল ‘থায়ামিন’।

নিউ ইয়র্ক’য়ের মাউন্ট সিনাই হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে, “থায়ামিন’কে অনেকসময় ‘অ্যান্টি-স্ট্রেস’ ভিটামিনও বলা হয়। কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং মানসিক চাপ সামাল দেওয়া ক্ষমতা বাড়ায়।”

এই বি ভিটামিন সর্ব প্রথম আবিষ্কৃত হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় বি ওয়ান। উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ দুই উৎস থেকেই এই পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।

‘অ্যাডেনোসাইন ট্রাইফসফেট (এটিপি) তৈরির জন্য এটি প্রয়োজন শরীরের। শরীরের প্রতিটি কোষ সেটি ব্যবহার করে কর্মশক্তি তৈরিতে।

বি টুয়েলভ এবং রক্তকণিকা

স্নায়ুর জন্য দরকার এই ভিটামিন। স্নায়ু আর মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজের কাজি হল ভিটামিন বি টুয়েলভ।

বস্টনের ‘হার্ভার্ড টি. এইচ চ্যান অফ পাবলিক হেল্থ’ জানাচ্ছে, “ভিটামিন বি টুয়েলভ বা কোবালামিন প্রাকৃতিকভাবে মেলে প্রাণিজ খাবার থেকে। ‘সাপ্লিমেন্ট’ হিসেবেও গ্রহণ করা যায় এই উপাদান। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর সকল কাজের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি।”

বি সেভেন এবং বিপাকক্রিয়া

সান্তা মনিকা, ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত ‘প্রভিডেন্স সেইন্ট জন’স হেল্থ সেন্টার’য়ের ‘ওবি/গাইন অ্যান্ড উইমেন’স হেল্থ এক্সপার্ট’ ডা. শেরি রস বলেন, “সুস্থ বিপাকক্রিয়ার জন্য দরকার ‘বায়োটিন’ বা ‘ভিটামিন বি সেভেন’। ত্বক, স্নায়ু, হজমতন্ত্র, বিপাকক্রিয়া এবং কোষ এই উপাদানটি থেকে উপকৃত হয়। শরীরে ‘ফ্যাটি অ্যাসিড’ ও শর্করা তৈরির জন্য ‘বায়োটিন’ প্রয়োজন। এই উপাদানগুলোই শরীরের কর্মশক্তি হিসেবে ব্যবহার হয়।”

বি ফাইভ এবং কর্মশক্তি

খাবারকে কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করে ‘ভিটামিন বি ফাইভ’ বা ‘প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড’।

ডা. রস বলেন, “অন্যান্য বি ভিটামিনের সঙ্গে মিশে ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’ তৈরি করে এই ‘প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড’। ত্বকে ‘রেডিয়েশন থেরাপি’ল প্রতিক্রিয়া সারাতে এবং প্রতিরোধ করতে এটি প্রয়োজন।”

এর আরও অনেক উপকারিতার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।

এদের মধ্যে আছে- ‘এডিএইচডি’, ‘আর্থাইটিস’, ত্বকের বিভিন্ন রোগ, মদ্যপানে আসক্তি, অ্যালার্জি, চুল পড়া, হাঁপানি, যকৃতের বিভিন্ন রোগ, ‘কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম, ফুসফুসের সমস্যা, ‘কোলাইটিস’, খুশকি, হতাশা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অনেক রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়া।

আরও পড়ুন

Also Read: রূপচর্চায় ভিটামিন সি সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা

Also Read: ভিটামিন ই’র অভাব বোঝার উপায়

Also Read: যেসব ভিটামিন খাওয়ার মানে অর্থের অপচয়

Also Read: বয়সের সঙ্গে ভিটামিন ডি’র চাহিদায় পরিবর্তন

Also Read: ভিটামিন ই’র অভাব বোঝার উপায়