বয়সের সঙ্গে ভিটামিন ডি’র চাহিদায় পরিবর্তন

আবহাওয়া যেমনই হোক না কেনো মানুষের ভিটামিন ডি’র অভাব থাকা সম্ভব।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2022, 12:33 PM
Updated : 23 June 2022, 12:33 PM

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টিগ্রেটিভ ফিজিশিয়ান অ্যান্ড ইন্টার্নিস্ট স্ভেটলানা কোগান ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আমার কাছে আসা ১শ’ জন রোগীর মধ্যে ৮০ জনেরই মারাত্মক মাত্রায় ভিটামিন ডি’র অভাব দেখেছি। ভিটামিন ডি’কে বলা হয় পুষ্টিগুণের ‘পাওয়া হাউস’। প্রজনন, মানসিক, হাড়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সবগুলোরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। আর এত মানুষের মাঝে এই ভিটামিনের অভাব থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

নিউ ইয়র্কের আরেক সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ ট্রেসি লকউড-বেকারম্যান যোগ করেন, “ভিটামিন ডি’র পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এর অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, মন মেজাজ খিটখিটে থাকে, অবসাদ ঘিরে রাখে। বিশ্ব জনগোষ্ঠীর মাঝে ভিটামিন ডি’য়ের অভাবকে বিশেষজ্ঞরা আখ্যা দেন অবহেলিত ‘এপিডেমিক’ হিসেবে।”

আর বয়স যত বাড়ে পরিস্থিতি ততই জটিল হতে থাকে। 

যুক্তরাষ্ট্রের “ফাংশনাল মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ ও ‘নিউরোফ্যাটিক’ চিকিৎসক লানা অলিভিয়া বলেন, “বয়স যত বাড়ে, মানুষের হাড় ততই ভঙ্গুর হতে থাকে। বয়সের সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম কমতে থাকে আবার গায়ে রোদ লাগার মাত্রাও কমতে থাকে। এর সবগুলোই ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। অথচ এই বয়সে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত মাত্রায় পেলে বয়ষ্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার শক্তি বজায় রাখা সম্ভব হত।”

কতটুকু আর কী পরিবর্তন দরকার

প্রতিটি মানুষের শরীরভেদে চাহিদা ভিন্ন। ভিটামিন ডি’র চাহিদার মাত্রা মানুষের বয়স ও শরীরের আকৃতিভেদে পরিবর্তনশীল।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’স অফিস অফ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট (ওডিএস)’য়ের মতে, “১২ মাস পর্যন্ত বয়সে শিশুদের দৈনিক ৪০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন। ১ বছর থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সেই চাহিদা ৬০০ ইউনিট আর বয়স তারও বেশি হলে প্রয়োজন ৮০০ ইউনিট।”

সংস্থাটি আরও জানায়, ভিটামিন ডি’র ঘাটতি আছে কি-না তা জানতে পরীক্ষা করাতে হবে। শরীরে ভিটামিন ডি’য়ের মাত্রা যদি ৫০ এনএমওএল/এল বা ২০ এনজি/এমএল বা তার বেশি হয় তবে তা হল যথেষ্ট।

তবে ওয়াশিংটনের ‘এন্ডোক্রাইন সোসাইটি’ বলছে ৭৫ এনএমওএল/এল বা ৩০ এনজি/এমএল হলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা, হাড় ও পেশির ওপর ভিটামিন ডি’র সর্বোচ্চ প্রভাব পড়বে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড (এফএনবি) জানায়, শরীরে ভিটামিন ডি’র মাত্রা বা ‘সেরাম কনসেন্ট্রেশন’ ১২৫ এনএমওএল/এল বা ৫০ এনজি/এমএল বা তার বেশি হলে তা হবে ক্ষতিকর।”

ডা. লানা বলেন, “ভিটামিন ডি’র অভাব পূরণের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্ধারণ করতে হবে। বেশি গ্রহণ করলে তা শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।”

উচ্চ রক্তচাপ, পানিশূন্যতা, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, শারীরিক ভারসাম্যহীনতা, বমিভাব ও বমি এই বিষক্রিয়ার লক্ষণ।

কাদের মাঝে ভিটামিন ডি’র অভাব বেশি দেখা যায় এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা ভারোত্তলন ধরনের ব্যায়াম করেন না তাদের এই ভিটামিনের অভাব হয়। হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর ব্যায়াম পদ্ধতি এই ভারোত্তলন।”

শরীরের পেশিগুলোকে যদি কেউ ব্যবহার না করে তবে তার ‘অস্টিপোরোসিস’ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যাদের গায়ে সরাসরি রোদ কম লাগে তাদের ভিটামিন ডি’র অভাব থাকবে। তাই তাদের উচিত ভোজ্য উৎস থেকে এর যোগান নিশ্চিত করা।

গর্ভবতী অবস্থায় গর্ভের শিশুর হাড় ও দাঁত গজাতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন ডি। তাই এসময় যোগান হতে হবে বেশি অন্যথায় মায়ের শরীরেই অভাব দেখা দেবে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

“দৈনিক ভিটামিন ডি’র চাহিদার ১০ শতাংশ মিলতে পারে একটি ডিমের কুসুম থেকে”, বলেন লকউড-বেকারম্যান।

তিনি আরও বলেন, “তিন আউন্স স্যামন মাছ দৈনিক ভিটামিন ডি’র চাহিদার ৭৮ শতাংশ পূরণ করতে পারে। যা প্রায় ৫৫০ থেকে ৯০০ ইউনিট। টুনা মাছেও এই ভিটামিন মেলে প্রচুর। ৩.৫ আউন্স টুনা মাছ যোগাবে দৈনিক চাহিদার ৩৮ শতাংশ।”

উদ্ভিজ্জ উৎসের বিবেচনায় সবচাইতে বেশি ভিটামিন ডি যোগায় মাশরুম। এক কাপই দৈনিক চাহিদার ৪৬ শতাংশ পূরণ করবে।

আরও পড়ুন