Published : 18 Mar 2024, 03:33 PM
সারাদিন না খেয়ে থাকার পর মুখরোচক খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কাজ করে।
তবে সংযোমের মাসে জিহ্বার সংযোমও জরুরি। কারণ অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার পর পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য দরকার পুষ্টিকর খাবার। আর সেজন্য বেশি ও দামি খাবারের প্রয়োজন নেই।
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক প্রশ্নের উত্তরে মরক্কো বংশোদ্ভূত মার্কিন পুষ্টিবিদ রাহাফ আল বুচি বলেন, “মহানবীর সময়ের ঐহিত্য অনুসারে খেজুর ও পানি দিয়ে রোজা খোলার প্রচলন রয়েছে। দ্রুত শক্তি যোগানোর ক্ষেত্রে খেজুরে থাকা শর্করা খুব ভালো কাজ করে। আরও রয়েছে সামান্য পরিমাণে আঁশ। প্রোটিন-ধর্মী খাবার, যেমন- বাদামের সাথে এই ফল খাওয়া হলে রক্তে দ্রুত চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া রোধ করে।”
“তবে বেশি নয়, দুয়েকটা খেজুর খাওয়াই যথেষ্ট”- পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
তিনি আরও বলেন, “রোজার খোলার পর নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে না। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করা যেতে পারে, এই ফাঁকে প্রার্থণা শেষে খাবারের টেবিলে ফিরে নিজের ক্ষুধার পরিমাপ বুঝতে হবে। আর খেতে হবে ধীরে চিবিয়ে। তাহলে বেশি খাওয়া হবে না। আবার খাবারও হজম হবে ভালোভাবে।”
ইফতকারে যে ধরনের খাবার রাখা উচিত
জটিল ও আঁশ সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেইট, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন ভিত্তিক খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন, আল বুচি।
তার কথায়, “মনে করুন একটি প্লেটের অর্ধেক থাকতে হবে সবজি ও সালাদ। বাকি অর্ধেক প্লেটের অর্ধেকটা জুড়ে থাকবে আঁশ সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেইট যেমন- আলু। এই অংশে ফলও থাকতে পারে। আর বাকিভাগে থাকবে প্রোটিন, যেমন- মুরগি বা গরুর মাংস।”
সারাদিন না খেয়ে, ইফতারে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হল- এগুলো ধীরে হজম হয়। আর সারাদিনের ঘাটতি মিটিয়ে শক্তি যোগায়। ডিম, ওটস, টকদই, মটর, ছোলা খাওয়া এক্ষেত্রে উপকারী।
“অনেকেই ভাত, মুরগির মাংস, সালাদ ও সুপ খান রাতের খাবারে। এসব খাবার ইফতারির আয়োজনে রাখাও স্বাস্থ্যকর। এক্ষেত্রে রাতের খাবার না খেয়ে, একেবারে সেহরি করাই হবে উত্তম কাজ”- মন্তব্য করেন ‘অলিভ ট্রি নিউট্রিশন এলএলসি’র এই প্রতিষ্ঠাতা।
যেসব খাবার এড়ানো উচিত
“সত্যি বলতে আমি কখনও কোনো খাবার বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেই না”- বলেন আল বুচি।
তবে কিছু খাবার পরিমিত খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যেমন- মিষ্টি কোমল পানীয় ও ভাজা খাবার।
আর্দ্র থাকতে যেসব বিষয় নজর দিতে হবে
ওয়াশিংটন নিবাসী এই পুষ্টিবিদ বলেন, “যে সময়টা রোজা থাকা হয় না তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্র থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা হতে পারে রোজা খোলার পরে কিংবা সন্ধ্যায় প্রার্থণা করতে মসজিদে গেলে পানির বোতল সঙ্গে রাখা।”
চা, সুপ ও তরমুজ খাওয়া দেহের পানির চাহিদা মেটাতে কাজ করে।
“আর্দ্র থাকার আরেকটি ভালো পন্থা হল পানিতে ইলেক্ট্রোলাইটস যোগ করা”- পরামর্শ দেন আল বুচি।
তার কথায়, “ইলেক্ট্রোলাইটস যেমন- পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও ভিটামিন সি যুক্ত পানীয় পান করলে দেহে পানি শোষিত হয় ভালো মতো। এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইটস সমৃদ্ধ পাউডার বা গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে গ্রহণ করা যায়। এছাড়া ডাবের পানি ইলেক্ট্রোলাইটস’য়ের ভালো উৎস।”
চা কফি পানিশূন্যতা তৈরি করে কী?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আল বুচি বলেন, “এটা আসলে যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ যদি চা কফিতে অভ্যস্ত হয় আর রমজান মাসে গ্রহণ করা বাদ রাখে তবে তার মাথাব্যথা হতে পারে। অনেকে দুধ মিশিয়ে এসব পানীয় গ্রহণ করেন, যা আর্দ্র থাকতে ও প্রোটিনের উৎস হিসেবে ভালো কাজ করে।”
তাই রোজার মাসে পুষ্টিকর খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। খেতে হবে সুষম খাবার। প্লেটের হিসাবটা মনে রাখতে হবে। পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি।
আরও পড়ুন