Published : 31 Oct 2022, 03:14 PM
প্রদাহ যদি দীর্ঘ দিনের হয় তবে তা বিভিন্নভাবে শরীরের গুরুতর ক্ষতি করে।
প্রথমত, এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। যে কারণে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি দূরারোগ্য ব্যধির বিরুদ্ধে শরীরের কোনো সুরক্ষা থাকে না।
প্রদাহ থেকে বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখতে হবে। এরমধ্যে থাকবে ঘুমকে প্রাধান্য দেওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপমুক্ত থাকা, প্রদাহনাশক খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা শরীরচর্চার মাধ্যমে।
এই যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট অ্যান্ড নিউট্রিশন সাইন্টিটিস্ট’ স্টেসি টি. সিম্স ‘রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “শরীরচর্চা করলে শরীরে প্রদাহ তৈরি হয় মৃদুমাত্রায়, যা শরীর সামাল দেয়। এরফলে দীর্ঘমেয়াদে শরীর প্রদাহ সামাল দিতে শিখে যায়। এই কারণেই একজন মানুষ যত বেশি স্বাস্থ্যবান সে ততই কার্যকরভাবে প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।”
‘ফ্রন্টিয়ারস ইন ফিজিওলজি’তে প্রকাশিত পুর্তুগালের ‘ইউনিভার্সিটি অফ বায়েরা’র করা গবেষণা এই তথ্যকে সমর্থন করে।
ফলাফলে দাবি করা হয় মৃদু ও ভারি ব্যায়াম দুটোই শরীরে প্রদাহের বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়া পদ্ধতি সৃষ্টি করে। তবে ভারি ব্যায়াম সামান্য বিরতিতে করলে তার কারণে শরীরের যে প্রদাহ তৈরি হয় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
এজন্য ব্যায়ামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও জরুরি।
হাঁটাহাঁটি: স্বাস্থ্যের জন্য সবচাইতে ভালো একটি কাজ হলো হাঁটা। এতে কোনো পয়সা খরচ হয় না, যে কেউ করতে পারে। আর হাঁটার কারণে বাড়বে কর্মশক্তি, স্মৃতিশক্তি, কমবে মানসিক চাপ ও প্রদাহ।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যায়ামাগার ‘ফিটিং সেন্টার’য়ের প্রশিক্ষক কার্লোস দাভিলা বলেন, “শরীরচর্চার সময় শরীরের যে জৈব রাসায়নিক উপাদানগুলো নিঃসৃত হয়, শরীরে প্রদাহ হলে তা সামাল দিতেও একই উপাদান নিঃসৃত হয়। মাত্র ২০ মিনিট জগিং বা দ্রুত গতিতে হাঁটলে তা শরীরের প্রদাহ কমাতে অনেক উপকার করবে।”
স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং: ভারোত্তোলন একটি দারুণ উপায় শরীরকে প্রদাহ থেকে বাঁচানোর।
ডা. সিম্স বলেন, “স্ট্রেংথ ট্রেইনিং’ করার পর শরীরে প্রদাহনাশক কার্যাবলী শুরু হয়। পেশি শক্তিশালী করার সকল কর্মকাণ্ড মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় ১০ থেকে ১৭ শতাংশ। যার মধ্যে আছে হৃদরোগ, সব ধরনের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
যোগ ব্যায়াম: যুক্তরাষ্ট্রের যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক কিমবার্লে কোপল্যান্ড বলেন, “যোগব্যায়াম শরীরের সঙ্গে এমনভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে যে মনের জমে থাকা আবেগগুলো শরীরচর্চার মাধ্যমে বের করে দেওয়া যায়।”
‘বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ফর নার্সিং’য়ে জানা যায়, শরীরকে বিভিন্নভাবে বাঁকিয়ে এই যে যোগব্যায়াম করা হয় তা শরীরের প্রদাহ কমাতে অনেক উপকারী। যার প্রেক্ষিতে উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ, হৃদরোগ, আথ্রাইটিস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমে।
রিবাউন্ডিং: শরীরচর্চার একটি মজার কৌশল এই ‘রিবাউন্ডিং’, যা প্রধানত ‘ট্রাম্পোলিন’য়ের বিভিন্ন ভঙিতে লাফানো।
যুক্তরাষ্ট্রের শরীরচর্চা প্রশিক্ষক এবং ‘ট্রাম্পোলিন ট্রিম’য়ের প্রশিক্ষক টিফানি ম্যারি বলেন, “এই ব্যায়াম শরীরের ‘লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম’কে নিংড়ে দেয়, যার সঙ্গে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যায়, কমে প্রদাহ। পাশাপাশি এতে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে, শরীরের ভারসাম্য আরও স্থিতিশীল হয়, ব্যথার তীব্রতা কমে।”
আরও পড়ুন