দেহের সব জায়গার মেদ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

ওজন কমাতে চিনিযুক্ত খাবার বাদ দেওয়া আর ব্যায়ামের পাশাপাশি কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2022, 12:45 PM
Updated : 26 Nov 2022, 12:45 PM

সহজ ব্যায়াম হল হাঁটা। তবে হাঁটা শেষ করে চিনিযুক্ত ‘লাতে’ কফি গ্রহণ চলবে না।

ওজন কমাতে তিনটি মূল বিষয় অনুসরণ করতে হয়। ওজন কমানোর লক্ষে কাজ করা, নিয়ম অনুযায়ী ধাপগুলো অনুসরণ ও ফলাফল লাভ এবং শেষ ধাপ হল এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।   

সৌখন লাতে গ্রহণ বাদ

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেল্থ কান্যাল’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ বিয়াঙ্কা গার্সিয়া বলেন, “সৌখন কফি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রুত দেহের ওজন কমানো যায়। বিলাসবহুল সৌখিন কফি যেমন- ‘পামকিন স্পাইস লাতে’ প্রচুর চিনি দিয়ে তৈরি করা হয় যা দিয়ে এক বেলার খাবার হয়ে যায়।”

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই পুষ্টিবিদ আরও জানান, সাধারণ লাতে’তে প্রায় ২৪ গ্রাম (৬ চা-চামচ) শর্করা থাকে।

বস্টনের হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ ও ব্রিগাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটালের করা গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাবার যেমন- লাতে, নিয়মিত খাওয়া ওজন বাড়াতে সহায়ক।

চিনি, সিরাপ, দুধ ও হুইপড ক্রিম ছাড়া ‘ব্ল্যাক কফি’ গ্রহণ বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ থেকে বিরত রাখে।

গার্সিয়া বলেন, “যখন অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করা হয় তখন শরীর তা লিভার বা যকৃতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয় ও পরে ব্যবহারের জন্য সঞ্চিত থাকে।”

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার

কিটো, মাংসাশী বা ভেগান- যে যেই খাদ্যাভ্যাসেই অভ্যস্ত হোক না কেনো সবগুলোতেই একটা বিষয় মিল রয়েছে তা হল- ওজন কমাতে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোকে বাদ দিতে হয়।

‘সেল মেটাবলিজম’য়ে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজ’য়ের করা সমীক্ষা অনুসারে- মাংস, পেস্ট্রি, মিষ্টান্ন ও সাদা রুটির মতো খাবারে ক্যালরি ও ক্ষতিকারক উপাদান বেশি থাকে। যা ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

গার্সিয়া বলেন, “অধিকাংশ প্রক্রিয়জাত খাবার অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি সমৃদ্ধ। এগুলো আসক্তিকর উপাদান সমৃদ্ধ, যা বার বার খেতে উৎসাহ জাগায়। দেহের সামগ্রিক চর্বিতে প্রভাব ফেলতে খাবার তালিকা থেকে এগুলো বাদ দেওয়া প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সহায়ক।”

চিনি ও চর্বিবহুল খাবার বাদ দেয়া

‘সুগার ফ্রি’ বা চিনি-মুক্ত খাবার বলে বাজারে যা বিক্রি হয় তা বিজ্ঞাপনের একটা অংশ কেবল।

জন্স হপকিন্স মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে অনুযায়ী, নির্মাতারা এক্ষেত্রে চিনির বদনে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করেন, যা অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানের মতোই দেহের ক্ষতি সাধন করে।

পিএলওএস মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস’ করা সমীক্ষা অনুসারে- অ্যাসপার্টেইম ও এইসালফেম-কে (দুটি বহুল ব্যবহৃত কৃত্রিম সুইটনার) যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কার্ডিও ব্যায়াম মেদ কমায়

ব্যায়াম হৃদস্পন্দন বাড়ায় ফলে তা প্রাকৃতিকভাবেই ওজন কমাতে সাহায্য করে।

অনলাইন সাময়িকী ‘পাবমেড’য়ে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট থমাস, সেন্ট পল, মিনেসোটা’র করা গবেষণায় দেখা গেছে, চর্বি পোড়াতে সাধারণত হৃদগতির হার ৬০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে থাকতে হয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ অনুসারে, ২২০ থেকে বর্তমান বয়স বাদ দিলে নিজের সর্বোচ্চ হৃদগতি বের করা যায়।

গার্সিয়া বলেন, ‘কার্ডিও করলে ঘাম বাড়ে ও ক্যালরি পোড়ায়। এটা খুব বেশি পেশি অর্জনে সহায়তা না করলেও দেহের ওজন কমাতে সহায়তা করে।”

কার্ডিও ব্যায়াম হৃদস্পন্দনকে দীর্ঘস্থায়ী সময়ের জন্য ধরে রাখে। এই ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে- দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, রোয়িং, সাঁতার, দ্রুত হাঁটা ও তীব্র প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।

হাঁটা

হাঁটা এমন একটা কার্ডিও ব্যায়াম, যা সব বয়সের ও যে কোনো ‘ফিটনেস’ স্তরের মানুষের হৃদস্পন্দন বাড়াতে ও ক্যালরি পোড়াতে সহায়তা করে।

চর্বি পোড়ানো ও ওজন কমানো ছাড়াও হাঁটা হৃদরোগ, স্ট্রোক, স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর হাঁটা মানসিক চাপ কমায়, ঘুম ভালো করে, মন ভালো রাখে এবং দীর্ঘায়ুতে সহায়তা করে।  

গার্সিয়া বলেন, “হাঁটা হল কম প্রভাবশালী শারীরিক ব্যায়াম যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক চর্বি কমায়। দিনে কয়েকবার ছোট ছোট বিরতি দিয়ে হাঁটা শরীরের জন্য উপকারী।”

আরও পড়ুন

Also Read: ওজন কমাতে যতটা হাঁটা প্রয়োজন

Also Read: দ্রুত হাঁটবেন নাকি অনেক দূর হাঁটবেন

Also Read: নৈশভোজের পরে হাঁটলে ওজন কমে