পেশির জোর ও ভর হাড়ের জোড়ে সুরক্ষক হিসেবে কাজ করে।
Published : 13 Aug 2024, 01:36 PM
হাঁটুতে ব্যথা বা ‘অস্টিওআর্থারাইটিস’ হলে দেখা দেয় ব্যথা, ফোলাভাব। হারায় হাঁটার ক্ষমতা।
এই ধরনের সমস্যা সাধারণত বয়স্ক, নারী, দৌড়বিদ, ফুটবল খেলোয়াড় এবং যারা বেশি ভার বহন করেন তাদের মধ্যে দেখা দেয়। এছাড়া বংশগতি এবং আগে আঘাত পেয়ে থাকলেও পরে হাঁটুতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বলছে হাঁটুতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায় পেশি শক্তিশালী করার মাধ্যমে।
অনলাইন ভিত্তিক প্রকাশনা ‘জামা নেটওয়ার্ক ওপেন’য়ে প্রকাশিত নেদারল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার রোটারড্যাম’য়ের ‘এপিডেমিওলজি’ বিভাগের গবেষকরা ৫ হাজার ৩শ’ অংশগ্রহণকারীর তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য দেন।
পেশির ভর গুরুত্বপূর্ণ
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- যারা ভারবহন ধরনের ব্যায়াম করেনি যেমন সাঁতার এবং সাইকেল চালনা, তাদের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে যারা ভারবহন ধরনের ব্যায়াম করেছেন যেমন- দৌড় এবং হাঁটা তাদের হাঁটুতে বাতের ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নেদারল্যান্ডের ‘এরাসমাস মেডিকেল সেন্টার’য়ের চিকিৎসক এবং এই গবেষণার সহকারী ডা. জয়েস ভ্যান মার্চ সিএনএন ডটকম’য়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “শুধু ভারবহন ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হওয়ার কারণ নির্ণয়ের পর আমরা নজর দেই, হাঁটুর আশপাশের পেশির ওপর।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ধারণা করেছিলাম যাদের হাঁটুতে পেশির ভর বেশি তাদের এই সমস্যা হবে না। পর্যালোচনাতেও সেটাই দেখা গেছে।”
পেশির বিস্তৃতি ও ভর বেশি থাকলে হাঁটুর ভেতরের কার্যক্রম বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা পায়।
এই বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে একই প্রতিবেদনে ম্যাডিসন’য়ে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন স্কুল অফ মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ’য়ের ডা. ক্যাথরিন মিলার বলেন, “আমরা সবসময় ধারণা করতাম পেশির ভরই হাড়ের জোরগুলো রক্ষা করতে সাহয্য করে।”
এ গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকেও তিনি মন্তব্য করেন, “এখন নতুন ধারণা পাওয়া গেল যে, দৈহিক কর্মকাণ্ডের জন্য পেশির ভর গুরুত্বপূর্ণ আর ‘অস্টিওআর্থারাইটিস’য়ের ঝুঁকি কমাতে প্রভাব রাখে।”
এছাড়াও গবেষণায় উঠে এসেছে, দেহের অতিরিক্ত ওজন হাঁটুতে চাপ বাড়ায়। আর সেখান থেকেও বাতের ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
নিরাপদে নড়াচড়া করার পন্থা
গবেষণার ফলাফল থেকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
“কোনো ভারবহন ধরনের ব্যায়াম বা কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার আগে পায়ের পেশির জোর বাড়াতে হবে”- বলেন ভ্যান মার্স।
যদি দৌড়াতে চান তবে শুরু করতে হবে ধীরে। না হলে পেশিসহ দেহের নিচের অংশ টান খাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে।
মিলার বলেন, “যদি বুঝতে পারেন ‘ওস্টিওআর্থারাইটিস’ হতে পারে তারপরও ব্যায়াম থামানো যাবে না। যারা অলস জীবনযাপন করেন তাদের কোমর থেকে দেহের নিম্নাংশে পেশির ভর কমতে থাকে ফলে হাড়ে বাতের ব্যথা হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।”
তাই হাঁটা, দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসার ভঙ্গিতে ব্যায়াম করা বা হাতের সাহায্য ছাড়া চেয়ার থেকে ১০ বার ওঠ-বস করা উপকারী প্রভাব ফেলবে।
মিলার আরও বলেন, “অস্টিওআর্থারাইটিস’ বা বাতের ব্যথায় ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে আমাদের নিয়ম হল- হালকা অস্বস্তি নিয়ে দৈহিক ব্যায়াম করার পর যদি ব্যথা দ্রুত সেরে যায় তবে সেটা ঠিকাছে। তবে ব্যায়াম করার পরও যদি ব্যথা বাড়ে এবং পরের দিনও ঠিক না হয় তবে সেই ব্যায়াম হয়ত বেশি মাত্রায় হয়ে যাচ্ছে। এরজন্য মাত্রা কমাতে হবে।”
আরও পড়ুন