বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হলে ওজন ঝরাতে সমস্যা হয়।
Published : 12 Sep 2024, 04:21 PM
দেহের কোষ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। একেই বলে মেটাবলিজম বা দেহের বিপাক ক্রিয়া।
নড়াচড়া, চিন্তাভাবনা, বেড়ে ওঠা- মানে দেহের সার্বিক ক্রিয়া পরিচালনার জন্য শক্তির প্রয়োজন। আর নির্দিষ্ট প্রোটিন বিপাক ক্রিয়ার রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নার্স এডুকেটর ব্রিজিট এনপি, এই তথ্য জানিয়ে বডিনেটওয়ার্ট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যদি বিপাক প্রক্রিয়া ঠিকমতো সচল না থাকে তবে ওজন কমানো কঠিন হয়ে যায়।”
অনেকের প্রচুর খেয়েও ওজন বাড়ে না। তাদের বিপাক প্রক্রিয়া যথেষ্ট সক্রিয়। তবে সবার ক্ষেত্রে সেটা হয় না।
তাই বিপাকীয় গতি ঠিক আছে কিনা সেটা বোঝার জন্য প্রথমে পদক্ষেপ নিতে হবে- পরামর্শ দেন এই ‘ফ্যামিলি মেডিসিন’য়ের এই চিকিৎসক।
বছরে একবার পরীক্ষা করানো
দেহের কী পরিবর্তন হল বা হল না- সেটা বোঝার জন্য বছরে একবার পুরো দেহ পরীক্ষা করানো উচিত। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্রিজিট বলেন, “হাইপোথাইরয়ডিজম’য়ের কারণে থায়রয়েড গ্রন্থির ধীর গতি বা অতি সক্রিয়তার প্রভাব পড়ে বিপাক ক্রিয়াতে। আর এই সমস্যা একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই চিহ্নিত করা সম্ভব।”
থাইরয়েডের সমস্যা
“এই গ্রন্থির সমস্যা চিহ্নিত করা গেলে ওষুধের মাধ্যমে সারানো যায়”- বলেন ব্রিজিট।
তবে পরীক্ষা ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণে থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা চিহ্নিত করা যায়। যেমন- প্রায় সময় অবসাদ এবং শীত অনুভূত হওয়া।
আর থায়রয়েডের সমস্যা না থাকলে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধির অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করা যায়।
বিপাকের গতি
বিশ্রামে থাকা অবস্থায় কী পরিমাণ ক্যালরি খরচ হচ্ছে- সেটাই হল দেহের মৌলিক বিপাকীয় হার বা ‘বিএমআর’।
ব্রিজিট বলেন, “অনেকের প্রচুর খেয়েও ওজন বাড়ে না। কারণ তাদের বিএমআর বা বিপাকীয় হার বেশি।”
প্রাকৃতিকভাবে এই হার বেশি না হলে কয়েকটি পন্থা অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ: প্রথম শর্ত হল খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ব্রিজিট বলেন, “প্রতিবেলার খাবারে চর্বিহীন প্রোটিন গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। কারণ প্রোটিন গ্রহণের পর প্রাথমিকভাবে বিপাকের গতি ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।”
পাশাপাশি প্রোটিন পেটভরা অনুভূতি দেয় অনেকক্ষণ। ফলে খাই-খাইভাব কমে। এক্ষেত্রে মুরগির মাংস, মাছ চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস। আর উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে রয়েছে ডাল ও মটর।
কোমল পানীয় বাদ
যে কোনো ধরনের সোডা বা কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে।
ব্রিজিট পরামর্শ দেন, “বিপকা পদ্ধতি বাড়ানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে চাইলে বুদবুদ ওঠা সোডা এবং কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে। কারণ এসবে প্রচুর চিনি থাকে। যা বিপাকীয় পদ্ধতি ধীর করে আর ওজন বাড়ায়।”
পানি পান: এই অভ্যাস শুধু বিপাক প্রক্রিয়ার গতি বাড়ায় না, পাশাপাশি ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণও কমায়।
মাত্রা আধা লিটার পানি পানে ধীর হওয়া বিপাক প্রক্রিয়াকে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। আর ঠাণ্ডা পানি পানে বেশি ক্যালরি পোড়ে।
ব্যায়াম করা: শুধু হাঁটাতে তেমন কাজ হয় না। সাথে করতে হবে ব্যায়াম। বিশেষ করে যে শরীরচর্চায় হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায় সেগুলো।
তাই ব্রিজিট বলেন, “আমি বলছি না হাঁটা খারাপ। তবে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধির জন্য হাঁটার সাথে একটু দৌড়ানো এবং অন্যান্য ব্যায়াম করা জরুরি।”
ওজন ওঠানো: ব্যায়ামের মধ্যে ওজন ওঠানো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। কারণ পেশির নড়াচড়ায় বেশি ক্যালরি ও চর্বি খরচ হয়। তাই পেশির ভার যত বাড়বে বিপাক ক্রিয়াও বৃদ্ধি পাবে।
আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজ’য়ের তথ্যানুসারে- এক পাউন্ড পেশির ওজনে দৈনিক সাত থেকে ১০ ক্যালরি খরচ হয়।
পরিবর্তনের জন্য শরীরচর্চা: এমন না যে, খুব ভারী ভারোত্তলণ করতে হবে।
ব্রিজিট বলেন, “অল্প ওজনের ভারোত্তলন কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে দেহ একহারা হয়, ধীর বিপাক ক্রিয়ার গতি বাড়ে।”
আনন্দ খুঁজে নেওয়া: যে কোনো শরীরচর্চায় আনন্দ না পেলে কয়দিন পরেই সেটা আর করা হয় না। তাই যেটা করতে আনন্দ লাগবে সেটা বেছে নিতে হবে।
একা একা হাঁটা বা দৌড়ানো একঘেয়ে লাগতে পারে একসময়। তাই ব্যায়ামাগার বা জিম’য়ে যেয়ে দলবল মিলে আড্ডা দিতে দিতে ব্যায়াম করা বা নাচের ক্লাস করার মাধ্যমে আনন্দ নিয়ে ব্যায়াম করলে ক্যালরি খরচ যেমন হবে তেমনি বাড়বে বিপাক ক্রিয়া।
ইয়োগা এবং স্ট্রেচিং: এই শরীরচর্চাগুলো দেহের ভারসাম্য বাড়ানোর পাশাপাশি দেহে আন্তঃ আঘাত বা পেশিতে পড়ার সম্ভাবনা কমায়।
আরও পড়ুন