হতে পারে মূত্রনালীর সংক্রমণ কিংবা বৃক্কের ক্যান্সার।
Published : 16 Dec 2024, 02:49 PM
মাঝে মধ্যে চেপে রাখা যেতে পারে। তবে নিয়মিত প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস থাকলে দেখা দিতে পারে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা।
তারমধ্যে একটি হল মূত্রনালীতে সংক্রমণ।
এই সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক’য়ের লং আইল্যান্ড’য়ের ‘স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি’র ‘রেনেসাঁ স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেসন কিম বলেন, “প্রস্রাব কার্যকলাপটি পরিচালিত হয় জটিল স্নায়ুবিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘উইমেন’স পেলভিক হেল্থ অ্যান্ড কন্টিনেন্স সেন্টার’ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিচালক ব্যাখ্যা করেন, “কিডনি অর্থাৎ বৃক্ক প্রস্রাব তৈরি করে যা মূত্রনালীর মাধ্যমে মূত্রথলিতে যায়। আর মূত্রথলির সাধারণ ধারণ ক্ষমতা ৪০০ থেকে ৬০০ কিউবিক সেন্টিমিটার্স।”
যখন মূত্রথলি পূর্ণ হয়ে যায় তখন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রস্রাব করার সংকেত যায়। আর মস্তিষ্ক মূত্রথলিকে জানান দেয় সমাজবান্ধব পরিস্থিতি না পাওয়া পর্যন্ত চেপে রাখতে। আর সঠিক পরিবেশ পেলে মস্তিষ্ক মূত্রনালীর ‘স্ফিংক্টার’ পেশিকে শিথিল হতে এবং মূত্রথলি সংকুচিত হয়ে প্রস্রাব বের হয়ে যাওয়ার সংকেত প্রদান করে।
নিউ ইয়র্ক সিটি’র ‘এনওয়াই ইউরোলজি’র ইউরোলজিস্ট ডা. ডেভিড শাস্টারম্যান একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন, “আমরা আসলে এভাবেই তৈরি হয়েছি যাতে যত্রতত্র প্রস্রাব না করে ফেলি। এই তরল আসলে ঘনীভূত দুষিত পদার্থ, যে কারণে শরীর সেটা বের করে দিতে চায়।”
তবে দুষিত পদার্থ সময় মতো বের করে না দিলেই ঘটবে বিপত্তি।
সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি
“প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে ‘ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন’ মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়া ঝুঁকি বাড়ে”- বলেন ‘অর্লান্ডো হেল্থ’য়ের ইউরোলজিস্ট ডা. জামিন ব্রাক্ষ্মভাট।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “প্রস্রাব বের করে দিলে যেমন বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়, তেমনি চেপে রাখলে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হয়।”
এই কারণে যৌনকার্যের পর সবাইকে বিশেষ করে নারীদের প্রস্রাবের পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে কোনো প্রকার সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায় মূতনালী।
“মূত্রনালীর সংক্রমণে ঠিক মতো চিকিৎসা না নিলে হতে পারে বৃক্কের নানান রোগ। রোগের মাত্রা বাড়লে প্রস্রাবের সাথে রক্তও পড়তে পারে” – বলেন ডা. কিম।
এছাড়া প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস থেকে মূত্রথলির পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যে কারণে মূত্রথলি পুরোপুরি খালি হতে পারে না। এরফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ে।
আর সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায় হিসেবে হতে পারে বৃক্কে ক্যান্সার।
যা করা উচিত
প্রকৃতির ডাক যত দ্রুত সাড়া দেওয়া যাবে ততই মঙ্গল- মতামত দেন এই বিশেষজ্ঞারা।
সাধারণ সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ সপ্তাহে কয়েকবার অল্প কয়েক ঘণ্টা প্রস্রাব চেপে রাখতে পারে, পরিস্থিতি বিবেচনায়। তবে সপ্তাহে নিয়মিত করে মূত্রথলি ও বৃক্কে অযাচিত চাপ ফেলার কোনো মানে হয় না।
“যারা বৃদ্ধ তাদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বয়স বাড়লে পুরুষদের ‘প্রোস্টেট’ বড় হয়ে যায়, নারীদের মূত্রনালী আঁটসাঁট হতে থাকে। তাই বয়স বাড়লে এমনিতেই প্রস্রাবের বেগের পরিমাণ কমে”- বলেন ডা. শাস্টারম্যান।
গর্ভবতীদের এই বিষয়ে আরও সাবধান হতে হবে। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে দেরি করা যাবে না।
যারা একবার হলেও মূত্রনালীর সংক্রমণে ভুগেছেন তাদের অবশ্যই আরও সাবধান হতে হবে।
ডা. শাস্টারম্যান আরও পরামর্শ দেন, “ধূমপানের অভ্যাস বা দুষিত পরিবেশে কাজ করলে বৃক্কের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমন মানুষদের নিয়মিত প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।”
যদি বারবার প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে যাওয়ার বিরক্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্রাব চেপে রাখতে হয়, তবে এই লক্ষণ হতে পারে ‘ওভারঅ্যাক্টিভ ব্লাডার সিন্ড্রম’ বা মূত্রথলির অতিসক্রিয়তার রোগ, ডায়াবেটিস বা মূত্রনালীর সংক্রমণ।
এই ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত ‘ইউরোলস্টি’য়ের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন
শীতকালে যে কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে