রাতে প্রস্রাবের বেগ পাওয়ার কারণ

শুধু ডায়াবেটিস হলেই রাতে বার বার মূত্র ত্যাগের বেগ পায় না।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2023, 07:54 AM
Updated : 31 Jan 2023, 07:54 AM

রাতে বার বার বাথরুমে যাওয়ার নানান শারীরিক কারণ থাকতে পারে।

প্রস্রাবের বেগের কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া বেশ বিরক্তিকর। তবে প্রতি রাতে একবার টয়লেটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘ফিউশন ওয়েলনেস অ্যান্ড ফেমিনা ফিজাক্যাল থেরাপি’র চিকিৎসক হিথার জেফকোট এই ব্যাপারে বলেন, “শুয়ে থাকা অবস্থায় মূত্রের বেগ আসতেই পারে। তবে মূত্র বৃদ্ধিকারক কোনো ওষুধ গ্রহণ না করে থাকলে আর প্রস্রাবের কারণে ঘুম ভেঙে গেলে শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি জানান, প্রস্রাবের কারণে বার বার ঘুম ভাঙার অবস্থাকে বলে ‘নাকটোরিয়া’।

ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘ইউরোলজি ক্যান্সার স্পেশালিস্ট’য়ের ইউরোলজিস্ট এস.অ্যাডাম রামিন একই প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বলেন, “যারা এই সমস্যায় ভোগেন রাতে তাদের একের অধিকবার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।”

‘নাকটোরিয়া’র ক্ষেত্রে একবার টয়লেটে যাওয়া স্বাভাবিক। বয়স পঁয়তাল্লিশের বেশি হলে এই পরিস্থিতিকে জীবনের একটি অংশ হিসেবেই ধরে নিতে হবে।

এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে- মূত্রথলির পেশির কার্যকারিতা, প্রসবোত্তর জীবনের পরিবর্তন, হৃদসংক্রান্ত স্বাস্থ্য, স্নায়ুগত সমস্যা।

ডা. রামিন বলেন, “একজন মানুষ প্রতিরাতে যতবার মূত্র ত্যাগের জন্য বিছানা ছাড়বেন, সেই মাত্রায় ‘নাকটোরিয়া’র সমস্যা গণনা করা হবে।”

“মূত্রথলি প্রায় ভর্তি হয়ে গেলে মূত্রত্যাগের অনুভূতি জাগে। এটাই মূত্রথলির পেশির স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। আর বাথরুমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ত্যাগ করা যাবে না, এই প্রশিক্ষণটা ছোটবেলা থেকেই আমাদের মস্তিষ্ক পেয়ে থাকে”, বলেন ডা. রামিন।

‘নাকটোরিয়া’ তৈরি হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে।

ডা. জেফকোট এই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, “আমি দেখেছি যে মায়েরা শিশুকে বোতলে খাওয়াতে বা স্তন্যদান করতে রাতে উঠতো তাদের মধ্যে এই সমস্যা তৈরি হয়ে গেছে। রাতের ঘুমের মাঝে এই বিরতি অভ্যস্ততায় পরিণত হয়ে যায় স্তন্যদান করা শেষ হলেও। ফলে মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠেও বাথরুমে যাওয়ার ব্যাপারটা থেকে যায়।”

আরেকটি কারণ হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য, জানান ডা. জেফকোট।

তিনি বলেন, “সারাদিনে পেট পরিষ্কার ঠিক মতো না হলে, রাতের বেলা চাপ পড়তেই পারে। আর মলাশয়ের চাপ মূত্রথলিতে পড়লে রাতে প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হবে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে, সমস্যা দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”

রাতের বেলা প্রায়ই প্রস্রাবের বেগ পাওয়ার আরও কারণ সম্পর্কে ডা. জেফকোট বলেন, “হতে পারে মূত্রথলির পেশির কার্যকারিতা কমা বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, শ্রোণীদেশের সমস্যা, স্নায়ূতন্ত্র ও হৃদসংক্রান্ত জটিলতা। আর এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।”

তবে হৃদসংক্রান্ত জটিলতার কারণে যদি রাতে বার বার বাথরুমে যাওয়া লাগে সেক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেবে। যেমন- দেহের বিভিন্ন জায়গা ফুলে ওঠা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, দুর্বলতা, দেহে পানি জমা। এই ক্ষেত্রে ‘নাকটোরিয়া’ নয়, দেহের এসব জটিল সমস্যা সারানোই হবে তখন প্রধান লক্ষ্য।

আর অন্যান্য সব কিছুর মতো মস্তিষ্ক যেহেতু মূত্রথলিও নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু কিছু স্নায়ূগত রোগের দিকেও খেয়াল দিতে হবে। সেটা হতে পারে ‘ডিমেনশা’ বা স্মৃতিভ্রংশ, পার্কিনসন’স রোগ, মস্তিষ্কে আঘাত ইত্যাদি।

তবে মনে রাখতে হবে, এসব রোগের ক্ষেত্রে ‘নাকটোরিয়া’ প্রাথমিক লক্ষণ নয়।

নাকটোরিয়া হলে যা করা উচিত

জটিল কোনো সমস্যা না থাকলে প্রতিদিনের অভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ একেকজন একেকভাবে মূত্রত্যাগের ব্যাপারে অভ্যস্ত হন।

রাতে কয়েকবার প্রস্রাব পেলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে পানি গ্রহণের পরিমাণ কমানো যেতে পারে। হতে পারে কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এছাড়া রাতে চা পানের অভ্যাস থেকে বার বার প্রস্রাব পেতে পারে।

তাই ডা. জেফকোট এবং ডা. রামিন’য়ের পরামর্শ হল- পরিস্থিতি বুঝতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাই হবে শ্রেয়। আর টয়লেট করে এসে ঘুমাতে যাওয়া এবং রাতে শোয়ার আগে পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

Also Read: হঠাৎ তলপেটে ব্যথা, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ নয় তো?

Also Read: মূত্রত্যাগের বেগ চেপে রাখার পরিণতি

Also Read: যে জন্য শীতে ‘ছোট কাজ’য়ের বেগ বেশি পায়