পরিচর্যার ভুলের কারণেও উজ্জ্বলতা হারাতে পারে ত্বক।
Published : 02 Jun 2024, 05:40 PM
শুষ্ক, আস্তরযুক্ত ত্বক দেখতে ছাই বর্ণের লাগে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘অ্যাশি স্কিন’।
দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ হিসেবে ত্বকের সর্বত্র হয়ত ঠিকমতো যত্ন নেওয়া হয় না। তবে মুখের অংশে অন্তত নজর দেওয়া যেতেই পারে।
খসখসে, শুষ্ক ত্বকের অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘জেরোসিস’।
এই তথ্য জানিয়ে টেক্সাসের ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. ডিয়ান ডেভিস রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন বলেন, “ভাগ্যক্রমে ত্বকের শুষ্কাবস্থা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। সাধারণ কিছু নিয়ম চর্চার মাধ্যমে এই সমস্যা সারানো যায়।”
বিবর্ণ, শুষ্ক, চামড়া ওঠার সমস্যা, রংয়ের অসামাঞ্জস্য- এই ধরনের বিষয়গুলোকে ‘অ্যাশি স্কিন’ হিসেবে ধরা হয়। সাধারণ মুখ, হাত বা পায়ের ত্বকে এরকম হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ভিত্তিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হোম মিশেল এক্ষেত্রে বলেন, “যদি লক্ষ করেন ত্বক মলিন, নিষ্প্রভ বা বিবর্ণ লাগছে তবে আপনি হয়ত ‘অ্যাশি স্কিন’ বা ছাইবর্ণের সমস্যায় ভুগছেন।”
হওয়ার কারণ
ঠিক মতো আর্দ্রতা রক্ষা ও ময়েশ্চারাইজর লোশন ব্যবহার না করা।
গোসলের অভ্যাস থেকেও দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা বজায় থাকতে পারে। বেশিকক্ষণ গরম পানিতে গোসল করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া ওঠার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার ও বারবার পানি ঘাটাঘাটির কারণেও এমনটা হতে পারে।
বেশি ঠাণ্ডা বা গরম আবহাওয়ার কারণেও ত্বক শুষ্ক হতে পারে। এছাড়া আর্দ্রতা কম এমন গরম আবহাওয়া ত্বক খসখসে করে তুলে, চামড়া ওঠার সমস্যা দেখা দেয়।
বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ থেকেও শুষ্ক ত্বকের সমস্যঅ হতে পারে। যেমন- সরায়সেস, কেরাটোসিস পিলারেস (যাকে বলে ‘চিকেন স্কিন’), অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস- এক ধরনের সাধারণ এক্সিমা, ইখতিওসিস (এক ধরনের আঁশ ওঠা রোগ)
পুনরুদ্ধার করতে
ডা. মিশেল বলেন “শুষ্ক ত্বকের সমস্যা সারানোর প্রধান পন্থা হল নিয়মিত আর্দ্রতা রক্ষা ও এক্সফলিয়েট করা।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন অভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে। যেমন- বেশিক্ষণ ধরে গোসল না করা, ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ ‘বডি ওয়াশ’ বা সাধারণ সাবানের পরিবর্তে ক্রিমধর্মী সালফেট মুক্ত সাবান গোসলে ব্যবহার করতে হবে।
গোসলে পরপর ভেজা শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখা এক্ষেত্রে উপকারী হবে। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে বেশিক্ষণ। গ্লিসারিন ও হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো হয়। এই উপাদানগুলো ত্বকে এক ধরনের সুরক্ষার স্তর তৈরি করে যা আর্দ্র উবে যেতে দেয় না।
যত্নের সাথে এক্সফলিয়েট করতে হবে। মানে ত্বক পরিচর্যায় বেশি জোরে ঘষামাজা করা যাবে না।
“হালকাভাবে এক্সফলিয়েট করলে ত্বকে আলাদা উজ্জ্বলতা এমনিতেই আসে” মন্তব্য করেন ডা. মিশেল।
মৃদু স্ক্রাব বা ‘আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড’য়ের মধ্যে ‘গ্লাইকোলিক ও ল্যাক্টিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ রাসায়নিক এক্সফলিয়েন্ট মৃতকোষ ওঠাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দেয় উজ্জ্বল কোমল ত্বক।
“শুষ্ক ত্বকে ভাপ নিলেও বেশ উপকার হয়। বিশেষ করে শুষ্ক আবহাওয়াতে”- বলেন ডা. মিশেল।
প্রতিরোধ করতে
যদি অন্য কোনো না সমস্যা থাকে তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে ত্বকে বিবর্ণ হওয়া রোধ করা যায়।
এক্ষেত্রে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি।
ডা. ডেভিস বলেন, “নিয়ম করে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার মেখে আর্দ্রতা রক্ষা করতে হবে। পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ব্যবহার কতে হবে মৃদু ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ বডি ওয়াশ।”
আর সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোড় দেন এই ত্বক বিশেজ্ঞরা। প্রতিনিয়ত সানস্ক্রিন ব্যবহারে ত্বক সূর্যালোকের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়।
এছাড়া নিয়মিত ত্বক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. মিশেল বলেন, “সঠিক যত্নে ত্বকের চামড়া ওঠা, শুষ্কতা ও বিবর্ণতা দূর কর যায়। তবে দেহের ভেতরে কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।”
আর মনে রাখতে হবে একেকজনের ত্বক একেক রকম। তাই কোনো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ছবির মডেল: আরিয়ানা জামান এলমা। ছবি সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।
আরও পড়ুন