দৈনিক ১৮০ মিনিট শারীরিক কার্যক্রমে নিযুক্ত রাখা শিশুদের জন্য উপকারী।
Published : 24 Aug 2023, 12:37 PM
মোবাইল ফোনসহ এই ধরনের যন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকলে শিশুর বিকাশ লাভে দেরি হতে পারে।
আর এই তথ্য উঠে এসেছে জাপানের তহুকু এবং হামামাতসু বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণা থেকে।
গবেষণা পত্র প্রকাশের অনলাইন-ভিত্তিক সাময়িকী ‘জামা পেডিয়াট্রিকস’য়ে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণ-মূলক গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, এক বছর বয়সি শিশুরা লম্বা সময় ‘স্ক্রিন টাইম’ ব্যয় করলে দুই ও চার বছর বয়স পর্যন্ত যোগাযোগ ও বিকাশগত ত্রুটি এবং সমস্যা সমাধানের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
এই গবেষণার তথ্যানুসারে টাইমসঅবইন্ডিয়া ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গবেষণার জন্য সাত হাজারের বেশি শিশুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যাদের মধ্যে বিকাশগত বিলম্বের লক্ষণ যেমন- যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিকতার দক্ষতার বিষয়ে জড়তা ছিল।
স্ক্রিন টাইম বলতে যা বোঝায়
এই গবেষণার বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্ক্রিন টাইম’ হল কোনো ব্যক্তি যে পরিমাণ সময় টেলিভিশন দেখে, ভিডিও গেইম খেলে, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য ‘ডিভাইস’ ব্যবহারে ব্যয় করে থাকে।
এই সময়সীমা শিশুদের মাঝে বেশি হলে নানান রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও স্থূলতার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
‘দ্যা ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেইশন (ডব্লিউএইচও)’ শিশুদের এক ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনের পেছনে ব্যয় না করতে ও অন্যান্য সময় আরামদায়ক কোনো কাজে নিযুক্ত করার পরামর্শ দেয়।
বিকাশের যে পরিমাপকগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়
শিশুর সার্বিক বিকাশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ে কিছু গবেষণা রয়েছে। যোগাযোগ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দক্ষতা, সামাজিকীকরণ, স্থূল ও সূক্ষ্ম উন্নয়নমূলক স্ক্রিনিং পরীক্ষার মোট স্কোর, জ্ঞানীয় বিকাশ, সামাজিক মানসিক বিকাশ, ভাষা, মনোযোগের ও আচরণগত সমস্যা এবং উন্নয়নমূলক ব্যাধি যেমন- ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার’ ইত্যাদি বিকাশের মূল জায়গা।
নতুন গবেষণায় যা পাওয়া গেছে
প্রশ্ন মালার মাধ্যমে গবেষণা চালানো হয় যেখানে এই প্রশ্নগুলো সংযুক্ত ছিল- ‘দিনে সাধারণত কত ঘন্টা শিশুকে টিভি, ডিভিডি, ভিডিও গেইম, ইন্টারনেটে গেইম খেলতে দেওয়া হয়?’ সেখানে পাঁচ ধরনের উত্তর ছিল যেমন- না, একের কম, এক থেকে দুই এর কম, দুই থেকে চারের কম বা চার থেকে বেশি সময়।
দেখা গেছে- দৈনিক চার ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনে ব্যয় করা দুই থেকে চার বছরের শিশুর যোগাযোগ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ধীর করে দেয়।
‘স্ক্রিন টাইম’ কমালে ঘুম উন্নত হয় এবং শিশুর সার্বিক সুস্বাস্থ্যে ভূমিকা রাখে
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিভাবকদের কাছে শিশুর স্ক্রিন টাইম কমানোর জন্য অনুরোধ জানান।
‘আমেরিকান অপ্টোমিট্রিক অ্যাসশিয়েশন’য়ে একটি প্রতিবেদনে ‘ডব্লিউএইচও’র ‘সার্ভেইলেন্স অ্যান্ড পপুলেইশন বেইজড প্রিভেনশন অব ননকমিউনিকেবল ডিজিজ’য়ের পরিচালক ফিওনা বুল বলেন, “শারীরিক কার্যকারিতা বাড়ানো, বসে থাকার সময় কমানো, উন্নত ঘুম নিশ্চিত করা- শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সার্বিক ভালো থাকার ওপর প্রভাব রাখে। এছাড়াও শিশুর স্থূলতা ও ভবিষ্যতে হওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।”
এক থেকে দুই বছরের শিশুদের ১৮০ মিনিট শারীরিক কার্যক্রমে নিযুক্ত রাখা
‘কমিশন অন এন্ডিং চাইল্ডহুড ওবেসিটি’ এবং ‘গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান অন ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি ২০১৮ – ২০৩০’ এর সুপারিশের ভিত্তিতে ‘ডব্লিউএইচও’র নির্দেশিকায় জানানো হয়, এক থেকে দুই বছর বয়সি শিশুদের দৈনিক ১৮০ মিনিট নানান রকম হালকা ও শারীরিক কাজে ব্যস্ত রাখা উপকারী।
এক বছরের শিশুদের অলস ‘স্ক্রিন টাইম’ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুই বছর বয়সি শিশুদের জন্য ‘স্ক্রিন টাইম’ এক ঘণ্টার বেশি নয়, কম হলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন
শিশুর মানসিক উন্নতিতে যা করণীয়