শিশুর মেধা বিকাশে অন্তরায় রাসায়নিক উপাদান

মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর মেধা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের সংস্পর্শ।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2019, 08:23 AM
Updated : 26 Oct 2019, 08:26 AM

আর এই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলো নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য, প্লাস্টিকের পাত্রে প্রায়শই উপস্থিত থাকে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাইতে অবস্থিত ‘আইকান স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের গবেষকরা। 

‘এনভাইরোনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো মায়ের গর্ভে শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের সঙ্গে ‘এন্ডোক্রাইন’ হরমোনের মাত্রায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদানের সম্পর্ক নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের সংস্পর্শে আসার কারণে শিশুর ৭ বছর বয়সের মধ্যে ‘আইকিউ’য়ের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাইতে অবস্থিত ‘আইকান স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের গবেষকরা ৭১৮ জন গর্ভবতী মায়ের গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের রক্ত ও মূত্রে মোট ২৬টি রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা পরিমাপ করেন। সব মায়েরাই ছিলেন সুইডেনের।

পরিমাপ করা রাসায়নিক উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল ‘বিফেনল এ (বিপিএ)’, যা পাওয়া যায় খাবার ও পানীয়ের প্লাস্টিকের পাত্রে। এছাড়াও বিভিন্ন নিত্যভোগ্য পণ্যে থাকে কীটনাশক, ‘থ্যালেটস’ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান।

এই ২৬টি রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে কয়েকটি ‘এন্ডোক্রাইন’ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য কুখ্যাত। অন্যান্য উপাদানগুলো এখন পর্যন্ত শুধু সন্দেহভাজন, কারণ তাদের বৈশিষ্ট্য একই রকম।

গবেষকরা পরবর্তী সময়ে ওই মায়েরদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদের ‘আইকিউ’ পরীক্ষা করেন। দেখা যায় গর্ভাবস্থায় যেসব মায়ের শরীরে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলোর মাত্রা বেশি ছিল তাদের সন্তানদের ‘আইকিউ’য়ের মাত্রা কম, বিশেষ করে ছেলে সন্তানদের।

এই ২৬টি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে ‘বিসফেনল এফ (বিপিএফ)’ শিশুদের ‘আইকিউ’য়ের মাত্রা কমাতে সবার শীর্ষে। যা ব্যবহার হয় আরেক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ‘বিপিএ’য়ের বিকল্প হিসেবে।

গবেষকরা বলেন, “এ থেকে বোঝা যায় ‘বিপিএফ’ মোটেও ‘বিপিএ’য়ের তুলনায় নিরাপদ নয়।”

দুশ্চিন্তাজনক রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে আরও আছে ‘ক্লোরোপাইরিফস’, ‘পলিফ্লুরোফাইসিস’ ইত্যাদি কীটনাষক যা পরিষ্কারক পণ্যে মেলে। ব্যাক্টেরিয়ানাশক সাবানে থাকে ‘ট্রিকলোসান’ নামক একটি রাসায়নিক উপাদান। আর ‘থ্যালেটস’ নামক রাসায়নিক উপাদান মেলে প্লাস্টিক পণ্য ও প্রসাধনীতে।

এই উপাদানগুলো শরীরে বেশি সময় থাকে না। অর্থাৎ কম সময়ে এদের সামান্য পরিমাণ উপস্থিতিও মারাত্বক। তাই গর্ভবতী এবং গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন নারীদের এসব থেকে দুরে থাকতে হবে।

আইকান স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের গবেষক ইভা ট্যানার বলেন, “আমাদের গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হল বেশিরভাগ গবেষণা একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক উপাদান নিয়ে কাজ করে। তবে মানুষ একসঙ্গে অগনিত রাসায়নিক উপাদানের সংস্পর্শে আসে আর এদের মাত্রা কম হলেও একাধিকবার তাদের সংস্পর্শে আসার কারণে ক্ষতির মাত্রা তীব্র হতে পারে।”

ট্যানার আরও বলেন, “‘থ্যালেটস’ এবং ‘বিপিএ’ একাধিক গবেষণায় শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের পথে অন্তরায় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আর এই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানগুলোর ভ্রূণকে আক্রমণ করে এবং মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে নিরাময়ের অযোগ্য ক্ষতিসাধন করে।”

আরও পড়ুন-