সাধারণ কিছু পদক্ষেপ নিলে শিশুকে নিরোগ রাখা সম্ভব হয়।
Published : 30 Oct 2024, 02:08 PM
সন্তানকে রোগ থেকে দূরে রাখতে বাবা-মায়ের চেষ্টার অন্ত থাকে না।
আর এজন্য কোনো জাদুরকাঠি নেই যে, নাড়লেই শিশুর রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বস্টন চিল্ড্রেন হসপিটাল’য়ের শিশুরোগের চিকিৎসক ক্লেয়ার ম্যাককার্থি বলেন, “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমেই শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয়। তবে সেগুলো তেমন কোনো কঠিন বিষয় নয়।”
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো
“স্বাস্থ্যকর খাবার বলতে আমি বুঝাচ্ছি, প্রচুর ফল ও সবজি খাওয়াতে হবে, প্রতিদিন অন্তত পাঁচ বার। আর প্লেটের অর্ধেক এসব খাবারে পূর্ণ থাকতে হবে”- বলেন ডা. ম্যাককার্থি।
বাকি খাবারের মধ্যে থাকবে চর্বিহীন মাংস, পূর্ণ শষ্যের খাবার। এছাড়া ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে দুগ্ধজাতীয় খাবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি, যেমন- উদ্ভিজ্জ তেল গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এড়াতে হবে প্রক্রিয়াজাত, চিনি দেওয়া ও অস্বাস্থ্যকর চর্বির খাবার।
ডা. ম্যাককার্থি বলেন, “তাই বলে শিশুদের মুখরোচক খাবার থেকে বঞ্চিত করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে আইসক্রিম, চকলেট, ক্যান্ডি বা বিস্কুট প্রতিদিন খাওয়ানো যাবে না।”
এছাড়া প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের পরামর্শে নানান রকম ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করা
তরতাজা বোধ করতে সবারই ঘুম প্রয়োজন। শিশুরাও এর থেকে বাদ যায় না। বয়স অনুসারে ঘুমের পরিমাণ নির্ভর করে। ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সিদের আট থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ভালো ঘুমের জন্য ‘স্ক্রিন টাইম’ কমানো, ঘুমাতে যাওয়ার দুয়েক ঘণ্টা আগে কোনো গ্যাজেট ব্যবহার না করা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা জরুরি।
কর্মচঞ্চল রাখা
ব্যায়াম সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে, অসুস্থতার পরিমাণ কমায়। শিশুদের দিনে অন্তত একঘণ্টা শারীরিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রাখতে হবে।
ডা. ম্যাককার্থি বলেন, “এজন্য পয়সা খরচ করে জিমে ভর্তি করানোর দরকার নেই। আশপাশে মাঠে খেলতে নিয়ে যাওয়া বা পার্কে হেঁটে আসাই যথেষ্ট।”
লক্ষ রাখত হবে যে, যেসব শিশু খেলাধুলায় অংশ নেয় তাদের যেন ভালো ঘুম হয়, আর পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খায়।
মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপে থাকলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়, রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শিশুরাও মানসিক চাপে থাকতে পারে।
এজন্য লোকজনদের সঙ্গে মেশার ব্যবস্থা করা, পারিবারিকভাবে আনন্দময় পরিবেশ গড়া, যে কোনো বিষয় নিয়ে বিশেষ করে কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত হলে সেগুলো খোলামেলাভাবে যাতে প্রকাশ করতে পারে- এসবের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন- ডা. ম্যাককার্থি।
আর শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত হবে।
ভ্যাকসিন
ছোটবেলা থেকে যেসব ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি, সেগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া ছয় মাস বয়সের পর থেকে সবাইকে বছরে একবার ‘ফ্লু শট’ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সাধারণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে ভোলা যাবে না
পরিবারের সবাই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস পালন করলে শিশুদের মাঝেও সেসব গড়ে ওঠে।
হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢাকা, বাইরে থেকে এসে বা খাওয়ার আগে নিয়মিত হাত ধোয়া, অসুস্থদের থেকে দূরে রাখা, ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরানোর মতো বিষয়গুলো শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
খেয়াল করতে হবে
কোনো শিশু যদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে, বেশিরভাগ সময় রোগাক্রান্ত হয়- তবে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও পড়ুন
শিশুর মানসিক উন্নতিতে যা করণীয়
যেসব খাবার শিশুর ওপর বাজে প্রভাব ফেলে
শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য জড়িয়ে ধরুন