Published : 27 Dec 2023, 12:01 PM
উদ্ভিজ্জ খাবার যে উপকারী, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
তবে এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস থেকে উপকার তখনই মিলবে যখন সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত ও মিষ্টি খাবার কম খাওয়া হবে।
সাম্প্রতিক এক পর্যবেক্ষণে এরকম ফলাফলের কথা জানিয়েছে নর্দান আয়ারল্যান্ডের ‘কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট’য়ের গবেষকরা।
ইউকে বায়োব্যাংক গবেষণার ১ লাখ ১৩ হাজার অংশগ্রহণকারীর ১২ বছরের খাদ্যাভ্যাস ও ২০৬ ধরনের বিভিন্ন খাবারের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে তারা জানায়, ডায়াবেটিস রোধে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার উপকারী।
তবে অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত ও মিষ্টি খাবার খাদ্যতালিকায় থাকলে এই উপকার মিলবে না।
‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিজম’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণের ফলাফলে জানানো হয়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের খাদ্য তালিকায় পূর্ণ শষ্য, টাটকা সবজি ও ফল ছিল আর অস্বাস্থ্যকর খাবার কম খেয়েছেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমেছে ২৪ শতাংশ।
পাশাপাশি তাদের ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স’ ও কোমরের পরিধিও কম।
গবেষণায় আরও বলা হয়, যারা বংশানুক্রমিকভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের শারীরিক সমস্যা দূরে রাখা সম্ভব হবে।
গবেষণার প্রধান ও পিএইচডি শিক্ষার্থী অ্যালিশা থম্পসন এক বিবৃতিতে জানান, “এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে যারা মনে করেন টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ আমাদের পাওয়া তথ্যানুসারে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস এই ঝুঁকি কমাতে পারে।”
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিবৃতি অনুসারে আরও জানানো হয়, তবে যারা উদ্ভিজ্জ খাবার কম গ্রহণ করেছেন তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছিল ৩৭ শতাংশ। সেই সাথে ছিল কোমরের অতিরিক্ত পরিধি ও উচ্চ মাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইডস।
গবেষণার সহ-লেখক, কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট’য়ের ‘ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি’র প্রভাষক টিলমান খুউন বলেন, “বিষয় হল স্থূলতা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি অস্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার থেকেও একই ফলাফল মিলবে।”
যেভাবে কাজ করে
খুউন বলেন, “রক্তের শর্করা, লিপিড ও দেহের সার্বিক চর্বির মাত্রা কম রাখার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।”
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বৃক্ক ও যকৃতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা- বলেন এই গবেষণার আরেক লেখক ‘কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট’স ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবার সিকিউরিটির অধ্যাপক এইডিন ক্যাসিডি।
তিনি আরও বলেন, “এই প্রথমবারের মতো আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস বিপাকক্রিয়ার পাশাপাশি যকৃত ও বৃক্কের কার্যকারিতা উন্নয়নে সাহায্য করে। আর এই কারণেই হয়ত টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।”
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম’য়ে অবস্থিত ‘অ্যাস্টোন মেডিকেল স্কুল’য়ের জ্যেষ্ঠ সহ-অধ্যাপক ও নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ডুয়েন মেলর লন্ডনের ‘সায়েন্স মিডিয়া সেন্টার’য়ের এক বিবৃতিতে বলেন, “যদিও এই পর্যবেক্ষণে শুধু সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে, সরাসরি কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়নি। তারপরও ফলাফলটা গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে কীভাবে যকৃত ও অন্যান্য প্রদাহজনক বিষয়গুলোর সঙ্গে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকির সাথে সম্পৃক্ত।”
এই গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও তিনি মন্তব্য করেন, “টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস কত রকমভাবে সাহায্য করতে পারে সেই বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় এই বিশ্লেষণ।”
আরও পড়ুন