উদ্ভিদ থেকেও মিলবে প্রোটিন

মাছ, মাংস, ডিম খেতে পারেন না, তবে প্রোটিনের চাহিদা বেছে নিতে পারেন উদ্ভিজ্জ খাবার।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2021, 12:11 PM
Updated : 28 August 2021, 12:11 PM

শাকাহারী খাদ্যাভ্যাস যারা বেছে নেন তাদের অন্যতম দুশ্চিন্তা হলো পর্যাপ্ত প্রোটিন শরীরে যাচ্ছে কি-না।

সনদস্বীকৃত খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং ‘দ্য প্লান্ট বেইজড বেবি অ্যান্ড টডলার’ বইয়ের রচয়িতা হুইটনি ইংলিশ বলেন, “সকল সম্পূর্ণ উদ্ভিজ্জ খাবারে প্রোটিন থাকে, এমনকি কফিতেও। তাই বীজ, সয়া, বাদাম, সীম ও শষ্য-জাতীয় খাবার থেকে সহজেই একজন মানুষ দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারেন অনায়াসে।”

রিয়েল সিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন খুব বেশি প্রোটিন যে দরকার তাও কিন্তু নয়। গড়পড়তা ওজনের একজন নারীর দৈনিক প্রোটিন প্রয়োজন মাত্র ৪৬ গ্রাম। আর ‍উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য শাকাহারী হতে হবে তাও নয়। বরং সব ধরনের খাবার কীভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে খাওয়া যায় তা বুঝতেও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎসগুলো চিনে রাখা উচিত।” 

নর্থ ক্যারোলাইনা’র নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ক্লেয়ার কার্লটন বলেন, “আমি পরামর্শ দেব প্রোটিনের উৎস হিসেবে ‘হোল ফুড’-জাতীয় উৎস বেছে নেওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে যাওয়া। এমনকি উদ্ভিজ্জ মাংস ও প্রোটিন পাউডার ইত্যাদিও এড়িয়ে যাওয়া উচিত।”

মাংসের বিকল্প কালেভদ্রে খাওয়াই শ্রেয়। তবে মনে রাখতে হবে এতে ভোজ্য আঁশ, ভিটামিন, খনিজ উপাদান ইত্যাদি কমই পাওয়া যাবে।

সীমজাতীয় খাবার

কার্লটন বলেন, “উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে খাবারের মধ্যে লতানো উদ্ভিদ থেকে আসা খাবারে পুষ্টি উপাদানের ঘনত্ব থাকে সবচাইতে বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভোজ্য আঁশ আর বি ভিটামিন। যেমন- মশুর ডালের প্রতি কাপে থাকে ১৮ গ্রাম। আবার কালো সীমের বীজের প্রতি কাপে প্রোটিন মিলবে ১৫ গ্রাম। আর দুটোই খাওয়া যায় সুপ, সালাদ ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে।

সয়া

সয়াবিন ও অন্যান্য সয়া খাবার নিয়ে মানুষের মাঝে নানা মত প্রচলিত। প্রাকৃতিকভাবে সয়া অত্যন্ত পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার, প্রোটিনের মাত্রাও এতে অনন্য। প্রতিকাপ সয়া থেকে মিলতে পারে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন। সিদ্ধ মটরশুঁটি, ‘শেলড বিনস’, ‘টফু’, সয়াবিন ইত্যাদি সবগুলো থেকেই প্রোটিন মিলবে। সঙ্গে আরও মিলবে ওমেগা থ্রিএস, লৌহ, বি ভিটামিন এবং ‘ফাইটোকেমিকেলস’ নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

বীজজাতীয় খাবার

আকারে ছোট হলেও প্রোটিন কম নয় বীজজাতীয় খাবারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার পুষ্টিবিদ ভিকি পিটারসেন বলেন, “ওটমিল, স্মুদি, সুপ ইত্যাদি খাবারে সহজেই বীজজাতীয় খাবার যোগ করা যায়। প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ‘হেম্প সিড’। মাত্র দুই টেবিল চামচেই পেতে পারেন ছয় গ্রাম প্রোটিন। একে বলা যায় ‘কমপ্লিট প্রোটিন’।”

“কারণ তা থেকে পাওয়া যায় ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় ‘অ্যামিনো অ্যাসিড’, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ‘ওমেগা থ্রিএস’ ইত্যাদি। কুমড়ার বীজ আর ‘শিয়া সিড’য়েও প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এই দুই বীজ মাত্র দুই টেবিল-চামচেই যোগান দিতে পারে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন।”

বাদাম

কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট সবগুলোই প্রোটিনের আদর্শ উৎস। এক কাপ কাঁচা-বাদাম দিতে পারে চার থেকে ১০ গ্রাম প্রোটিন। এর মধ্যে এক কাপ চিনাবাদামে থাকে সাড়ে নয় গ্রাম প্রোটিন। আবার বাদামের মাখন বা পিনাট বাটার যোগাতে পারে সাত থেকে আট গ্রাম প্রোটিন, তাও শুধু দুই টেবিল-চামচেই।

শষ্যজাতীয় খাবার

“হোল গ্রেইন’ বা শষ্যজাতীয় খাবার হলো স্বাস্থ্যকর ‘কার্বোহাইড্রেট’। যেমন- ওটমিল বা ওটসের প্রতি কাপে যোগায় ১২ গ্রাম প্রোটিন, যা প্রায় দুটি ডিমের সমান। সেই ওটমিলের সঙ্গে যদি যোগ করা হয় সয়া মিল্ক আর পিনাট বাটার, তবে দিনের শুরুতেই পেয়ে গেলেন ২০ গ্রাম প্রোটিন”, বলেন পিটারসেন।

গমের আটার প্রতি কাপে মেলে ১১ গ্রাম প্রোটিন। গমের ময়দার প্রতি কাপে ২৫ গ্রাম প্রোটিন। এক কাপ ‘কিনোয়া’ থেকে পেতে পারেন আট গ্রাম প্রোটিন।

সবজি

হ্যাঁ সবজি থেকেও প্রোটিন মেলে। প্রতি কাপ ‘গ্রিন পিজ’ বা মটর থেকে পাওয়া যায় ৯ গ্রাম প্রোটিন। সঙ্গে আছে ভোজ্য আঁশ ও ভিটামিন।

একটি আস্ত আলু প্রায় সাত গ্রাম প্রোটিন যোগান দেয়। পালংশাকের প্রতি কাপে আছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন-