Published : 29 Apr 2025, 12:29 AM
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার জেরে নতুন করে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের। এ পরিস্থিতিতে ভারতের আসন্ন হামলার শঙ্কায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ সোমবার বলেছেন, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের সামরিক হামলা আসন্ন।
ইসলামাবাদে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমরা আমাদের বাহিনীগুলোকে নতুন করে তৈরি রাখছি। কারণ এখন এটা (ভারতের হামলা) আসন্ন। সুতরাং, সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই সেইসব সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।”
গত সপ্তাহে ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।
ভারত অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে—যে অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এর আগেও দুবার যুদ্ধ হয়েছে।
গত সপ্তাহে কাশ্মীরে হামলার পর ভারত জানায়, দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি পাকিস্তানি নাগরিক। তবে ইসলামাবাদ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেন, ভারতের উত্তেজনাকর বাগাড়ম্বর বাড়ছে এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সরকারকে ভারতের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে অবহিত করেছে।
তবে কেন আসিফ ভারতের হামলা আসন্ন মনে করছেন, তার কোনও কারণ বিস্তারিতভাবে তিনি ব্যাখ্যা করেননি। ওদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।
আসিফ বলেন, পাকিস্তান উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। তবে তারা পারমাণবিক অস্ত্র কেবল তখনই ব্যবহার করবে, যদি দেশের অস্তিত্বে সরাসরি হুমকি সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তান বন্ধুসুলভ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এবং চীন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
“আমাদের কিছু আরব উপসাগরীয় বন্ধু দেশ দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছে,” বলেন আসিফ। তবে তিনি কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
চীন সোমবার পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে এবং উত্তেজনা প্রশমনের সব পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়াচ্ছে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই তাদের সম্পর্কের সমাধান খুঁজে নেবে।
তবে পরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, তারা দুই পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে এবং সংকটের "দায়িত্বশীল সমাধানের" আহ্বান জানিয়েছে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর দিল্লি ও ইসলামাবাদ একে অপরের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সিন্ধু নদ পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে, যেটি নদীভিত্তিক একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি।
পাকিস্তান ভারতের বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার জন্যও ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। ওই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে বিদেশিরাও ছিলেন। তবে ইসলামাবাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।