বৃহস্পতিবার কলকাতায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাদা অনির্বাণের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন অরিন্দম।
Published : 16 Nov 2023, 09:00 PM
নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের সুর বিকৃত করা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই বিদ্রোহী কবির নাতি কাজী অরিন্দম নতুন অভিযোগ এনে হাজির করেছেন। অরিন্দমের দাবি, তার বড়দা কাজী অনির্বাণ নাকি দাদার জাতীয় পুরস্কার বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন।
আনন্দবাজার বলছে, বৃহস্পতিবার কলকাতায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন নজরুলের দুই ছেলে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধের দুই ছেলেমেয়ে খিলখিল কাজী ও কাজী অরিন্দম।
সেদিন দাদা অনির্বাণের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে অরিন্দম বলেন, “আমার মা কল্যাণী কাজীর ৮৬ বছর বয়স ছিল। দাদাকেই বৈষয়িক দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দাদা যে এমন ঘটাবে সেটা হয়ত মা আশাও করেননি।
“আমি শুনেছি, দাদুর (কাজী নজরুল ইসলাম) পাওয়া সরকারি পুরস্কারও নাকি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন আমার দাদা। উনি নিজেকে নজরুলের একমাত্র উত্তরসূরি হিসেবে দাবি করেছিলেন। আমি রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, অবিলম্বে নজরুলের একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক। দাদা অনির্বাণ এবং রায় কাপুর ফিল্মসের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে শিগগিরই।”
অরিন্দম আরও বলেন, “আমি চুক্তি সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমরা সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু কথা বলতে চাই। এর ফলে অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’”
‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এর স্বত্ব হস্তান্তর নিয়ে কবে প্রথম জানতে পারেন- এই প্রশ্নে খিলখিল বলেন, “আমার কিছু জানা ছিল না। আমি তো গত ১০ নভেম্বর প্রথম ব্যাপারটা জানতে পারি এবং পরের দিন কলকাতায় এসেছি।
“চুক্তিপত্রে নাকি লেখা রয়েছে কল্যাণী কাজী এবং অনির্বাণ নজরুলের একমাত্র উত্তরসূরি! তা হলে আমরা কারা? অনির্বাণের সঙ্গে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছে। যা ক্ষতি হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে ওকে তার দায় নিতেই হবে।”
প্রযোজনা সংস্থা রায় কাপুর ফিল্মসের লিখিত ‘ক্ষমা প্রার্থনায়’ সন্তুষ্ট নন খিলখিল। কেবল একটি বিবৃতি দেওয়াকে ‘দায় সারা’ হিসেবে দেখছেন নজরুল পৌত্রী।
“এইভাবে তো দায় সারা যায় না। রহমানের কোনো গান নিয়ে কেউ এ রকম করলে উনি কি এত সহজে ছেড়ে দিতেন? আমরা চাই, হয় গানটিকে ছবি থেকে মুছে দেওয়া হোক, আর যদি রাখতেই হয়, তা হলে মূল সুরকে অনুসরণ করে গানটিকে তৈরি করা হোক,” বলেন খিলখিল।
এদিকে কাজী অনির্বাণ আনন্দবাজারকে বলেছেন, তার ভাই অরিন্দম এবং চাচাত বোন খিলখিলের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
এর আগে গান প্রকাশের পর গানটি বিকৃত করার অভিযোগ এনে গানের ক্রেডিট থেকে তার পরিবারের নাম মুছে ফেলার দাবি তুলেছিলেন অনির্বাণ।
অনির্বাণের ভাষ্য ছিল, “আমরা বুঝতে পারিনি যে রহমানের মত একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারে; গানটিকে হত্যা করতে পারে। প্রতিবাদ হিসেবে, আমি চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইনে 'বিশেষ ধন্যবাদ' এ আমাদের পরিবারের নাম চাই না।”
তিনি বলেন, ২০২১ সালে তার মায়ের (কল্যাণী কাজী) মৃত্যুর আগে তিনি সুর-কথা না বদলে গানটি ‘রিক্রিয়েট’ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। সে সময় পিপ্পা টিম গানটিকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করার ইচ্ছার কথা জানায়। তাই গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতে বলেছিলেন তার মা। কিন্তু তারা কিছুই শোনায়নি।
এর আগে গানের চুক্তিপত্র দেখে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করার পক্ষে কথা বলেছিলেন কাজী অনিরুদ্ধের মেয়ে অনিন্দিতা কাজীও।
নজরুলের পুত্রবধূ প্রয়াত সংগীত শিল্পী কল্যাণী কাজী ২০২১ সালে গানটি অবিকৃত রেখে ‘পিপ্পা’ টিমকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন, সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে কাজী অনির্বাণ। সেই অনুমতি কেবল মৌখিক ছিল না। ‘যাবতীয় নিয়ম মেনে’ করা সেই চুক্তিপত্র অনির্বাণের কাছে বলে দাবি করেছেন তার বোন অনিন্দিতা।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে অনুপ্রেরণা যোগানো শতবর্ষী গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ নিয়ে এ বিতর্কের সূচনা সোশাল মিডিয়ায় 'পিপ্পা'র গানটি প্রকাশের পর থেকে।
রাজাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক হিন্দি সিনেমা ‘পিপ্পা’র জন্য নজরুলের ওই গানটির নতুন কম্পোজিশন করেন অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।
কিন্তু শ্রোতাদের অনেকের অভিযোগ, এ আর রহমানের হাতে পড়ে গানটি থেকে বিদ্রোহই হারিয়ে গেছে। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মহলের মানুষেরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, সমালোচনায় সরব হয়েছেন সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। কবি পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি।
সমালোচনা-বিদ্রুপের মুখে ক্ষমাও চেয়েছে গানটি ব্যবহার করা সিনেমা 'পিপ্পা'র নির্মাতা-প্রযোজকরা। সোমবার এক বিবৃতিতে প্রযোজনা সংস্থা রায় কাপুর ফিল্মস দাবি করেছে, তারা কবির পুত্রবধূ প্রয়াত কল্যাণী কাজী ও তার পুত্র কাজী অনির্বাণের কাছ থেকে গানের স্বত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় নিয়ম মেনেছেন। লিখিত চুক্তি করে এবং চুক্তি মেনে তারা গানটি ব্যবহার করেছেন।
১৯২১ সালে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল, যা পরের বছরের ২০ জুন ‘ভাঙার গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গলার কথা’ পত্রিকায়।
ওই পত্রিকার সম্পাদক ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশ যখন কারারুদ্ধ হন, তখন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে বাংলার মানুষকে নিয়ে কবিতা হিসেবে সেটি লিখেছিলেন জাতীয় কবি। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে গিরীন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল।
নজরুলের গান বিতর্কে পিপ্পা নির্মাতাদের ‘ক্ষমা’ প্রার্থনা
এ আর রহমান ‘গর্হিত অপরাধ’ করেছেন: খিলখিল কাজী
‘লৌহ কপাট’: এবার চুক্তিপত্র নিয়ে প্রশ্ন কবির পৌত্রীর
‘কারার ওই লৌহ কপাট’: এ রহমানের সমালোচনায় হৈমন্তী, অজয় ও অনির্বাণ