কাজী পরিবারের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে সমালোচনা।
Published : 11 Nov 2023, 08:22 PM
‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এর সুর বিকৃত করা নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা খ্যাতনামা সুরকার এ আর রহমানের কাজে হতাশা প্রকাশ করেছেন দুই প্রবীণ শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও হৈমন্তী শুক্লা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক ‘পিপ্পা’ নামের একটি হিন্দি সিনেমার জন্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানটি তৈরি করেন অস্কারজয়ী এ আর রহমান। এটি সামনে এলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালিরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন। কাজী পরিবারের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে সমালোচনা।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা বলেছে, সম্প্রতি নজরুলের নাতি অনির্বাণ কাজী গানটি বিকৃত করার অভিযোগ এনেছেন; গানের ক্রেডিট থেকে তার পরিবারের নাম মুছে ফেলারও দাবি জানিয়েছেন।
অনির্বাণের ভাষ্য, “আমরা বুঝতে পারিনি যে রহমানের মতো একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারে; গানটিকে হত্যা করতে পারে। প্রতিবাদ হিসেবে, আমি চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইনে 'বিশেষ ধন্যবাদ'-এ আমাদের পরিবারের নাম চাই না।”
তিনি বলেন, ২০২১ সালে তার মায়ের মৃত্যুর আগে তিনি সুর-কথা না বদলে গানটি রিক্রিয়েট করার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই সময় তারা গানটিকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করার ইচ্ছার কথা জানায়। তাই গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতে বলেছিলেন তার মা। কিন্তু তারা কিছুই শোনায়নি।
“রহমানকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই জানতে চাই, তাকে কে অধিকার দিল গানটি বিকৃত করার। স্বত্ব দেওয়ার সময় তো সুর বদলের কথা বলা হয়নি। কী রকম একটা করে দিয়েছে গানটাকে! একটা গ্রামীণ সংগীতের মতো, ভাটিয়ালির মতো করে দিয়েছে। অনেক সস্তা করে দিয়েছে।”
রাজাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি সিনেমা ‘পিপ্পা’য় ব্যবহার করা হয়েছে নজরুলের লেখা ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি। কিন্তু সুর নিজের মতো করে বদলে নিয়েছেন অস্কারজয়ী রহমান; যাতে দুই বাংলার বহু মানুষই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
এদিকে রহমানের এই সৃষ্টি দেখে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে হতাশা উগড়ে দিয়েছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও হৈমন্তী শুক্লাও।
নজরে আসার পর গানটির কিছু অংশ শুনে ভালো লাগেনি বলে জানিয়েছেন অজয় চক্রবর্তী।
তার কথায়, “তার মতো অত্যন্ত সুপরিচিত সুরকারের কাছে আমরা এটা আশা করি না। এরজন্য সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন। লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানো উচিত।’’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলনায় কাজী নজরুল ইসলামের পরিচিতি কম হয়ে থাকার নেপথ্যের দায় বাঙালি জাতির বলেও মন্তব্য করেন প্রবীণ এ শিল্পী।
তার কথায়, ‘‘আমরা তার সম্পর্কে ততটা জানি না। কিন্তু সংগীতের বহু ক্ষেত্রে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের তুলনায় নজরুল ইসলামের অবদান বেশি।’’
এ আর রহমান প্রসঙ্গে অজয় বলেন, ‘‘রহমানের কাছে নিশ্চয়ই তথ্য ছিল বলেই ও সাহস পেয়েছে। আসলে আমাদেরও প্রচুর ত্রুটি রয়েছে। এই ধরনের গান বাঙালিদের মনে একটা অন্য অর্থ বহন করে। সেখানে নাড়া দিলে তো ভাল লাগবে না। তার আরও গবেষণা করে কাজটায় হাত দেওয়া উচিত ছিল।’’
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বর্ষীয়ান সংগীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লাকে।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলার সংগীত নিয়ে যে তার কোনও ধারণা নেই, সেটাই বুঝতে পারলাম। বাঙালি সংস্কৃতিকে এরা ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে।’’
কথা প্রসঙ্গেই অরিজিৎ সিং এর প্রসঙ্গ তুলে এ গায়িকা বলেছেন, ‘‘অরিজিৎ যখন ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’ গাইল, তখন দেখলাম সমালোচনার ঝড় উঠল। কিন্তু ও তো ভাল গেয়েছে। যে কাজ ভাল তার প্রশংসা করতেই হয়। একই ভাবে কোনও খারাপ কাজের সমালোচনাও করা উচিত। রহমান কী ভাবে এই সাহস অর্জন করলেন, তা ভেবে অবাক হয়ে গিয়েছি।’’
রহমানের ‘জয় হো’ গানটিও পছন্দ হয়নি বলে জানান হৈমন্তী। এ নিয়ে একবার তিনি মান্না দে সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। মান্না দেও সেসময় সমালোচনা করেছিলেন গানটির।
১৯২১ সালে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল, যা পরের বছরের ২০ জুন ‘ভাঙার গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গলার কথা’ পত্রিকায়।
ওই পত্রিকার সম্পাদক ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশ যখন কারারুদ্ধ হন, তখন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে বাংলার মানুষকে নিয়ে কবিতা হিসেবে সেটি লিখেছিলেন জাতীয় কবি। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে গিরীন চক্রবর্তীর কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করা হয়েছিল।