Published : 05 May 2025, 10:00 AM
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তীব্র বাণিজ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের উপর তিনি ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ট্রাম্পের ভাষ্য, তিনি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে এই শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দিচ্ছেন, কারণ আমেরিকার চলচ্চিত্র শিল্প ‘খুব দ্রুত মৃত্যুর’ দিকে এগোচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, এ পরিস্থিতির জন্য তিনি অন্যান্য দেশগুলোর ‘সমন্বিত প্রচেষ্টা’কে দায়ী করেছেন, যারা চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ফিল্ম স্টুডিওগুলোকে প্রণোদনা দেয়। ট্রাম্পের ভাষায় এ প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশাল প্লাটফর্মে বলেছেন, “সবকিছুর উপরে এটা একটা প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা! আমেরিকায় তৈরি চলচ্চিত্র আমরা আবার চাই।”
গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন।
তার যুক্তি, এই শুল্ক মার্কিন উৎপাদনকারীদের শক্তিশালী করবে এবং কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করবে। কিন্তু তার শুল্কনীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি বিশৃঙ্খল দশায় পড়েছে, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে।
অভিষেকের আগে ট্রাম্প তিন হলিউড তারকা–জন ভোইট, মেল গিবসন এবং সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে বিশেষ দূত নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের দায়িত্ব হল হলিউডের ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা প্রচার করা। এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ‘দুর্দান্ত কিন্তু অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত স্থান’ বলে বর্ণনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প তখন লিখেছিলেন, “তারা আমার বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে; তাদের কাজ হচ্ছে–বিদেশিদের হাত থেকে গত চার বছরে হলিউডের হারানো ব্যবসা ফিরিয়ে আনা; আরও বড়, আরও ভালো এবং আগের চেয়েও শক্তিশালী রূপে!”
মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, “আমরা কাজে লেগে গেছি।”
চলচ্চিত্র শিল্প গবেষণা সংস্থা প্রডপ্রো’র তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকলেও এখনো যুক্তরাষ্ট্রেই চলচ্চিত্র খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়।
তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর দেশটিতে চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তবে এই পরিমাণ ২০২২ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম।
একই সময়ে চলচ্চিত্র খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে।
ট্রাম্পের সবশেষ ঘোষণার আগেই তার বাণিজ্য নীতির খড়্গে ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্প।
চীন গত এপ্রিলে জানায়, তারা আমেরিকান চলচ্চিত্রের আমদানি কোটা কমিয়ে দিচ্ছে।
চায়না ফিল্ম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, “চীনের উপর শুল্ক আরোপের যে ভুল সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিয়েছে, তাতে নিশ্চিতভাবে আমেরিকান চলচ্চিত্রের প্রতি চীনা দর্শকদের আগ্রহ আরও কমবে।
“আমরা বাজারের নিয়ম মেনে চলব, দর্শকদের পছন্দকে সম্মান করব এবং আমেরিকান চলচ্চিত্র আমদানির সংখ্যা পরিমিতভাবে কমিয়ে দেব।”
বিবিসি লিখেছে, ট্রাম্প সবচেয়ে কঠোর শুল্ক নীতি গ্রহণ করেছেন চীনের ওপর, সেখান থেকে আসা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন।
তার প্রশাসন গত মাসে জানিয়েছে, নতুন শুল্ক বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হলে কিছু চীনা পণ্যের উপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
এর জবাবে মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে বেইজিং।
ট্রাম্প নিজের আরোপিত উচ্চতর শুল্কের ওপর জুলাই পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। সে পর্যন্ত অন্যান্য দেশগুলোর ওপর ১০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক থাকছে। তবে চীনকে তিনি রেহাই দেননি।
রোববার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চীনসহ অনেক দেশের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করার বিষয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটন যোগাযোগ করছে বলে খবর প্রকাশিত হলেও ট্রাম্প বলছেন, এই সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার কোনো পরিকল্পনা তার নেই।
চলতি সপ্তাহে কোনো বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, সেটা ‘খুবই সম্ভব’। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এর আগে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি চীনের ওপর শুল্ক কমাতে পারেন।
রোববার এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “একপর্যায়ে আমি এগুলো কমিয়ে দেব, কারণ তা না হলে আপনি কখনোই তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন না, আর তারা ব্যবসা করতে চায়।”