ফোনে সাবিনা ইয়াসমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বেশ ভালো আছি।”
Published : 23 Jan 2025, 12:34 PM
এক বছরের বেশি সময় হল গানের মঞ্চে নেই কিংবদন্তী শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। এই দীর্ঘ সময়ে গায়িকা ব্যস্ত থেকেছেন বিদেশ বিভুঁইয়ে রোগব্যাধি ও চিকিৎসার সঙ্গে। কারণ শরীরে ক্যান্সার ফিরেছিল তার। এরপর নানা ধরনের চিকিৎসা এবং রেডিওথেরাপি শেষে সুস্থ হয়ে অবশেষে গানে ফিরছেন সাবিনা ইয়াসমীন।
শিগগিই ঢাকা এবং চট্টগ্রামে একাধিক অনুষ্ঠানে গাওয়ার তার কথা রয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন এই শিল্পী।
শারীরিক অবস্থার খোঁজ জানতে সাবিনা ইয়াসমিনকে ফোন করা হলে, তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বেশ ভালো আছি।”
মঞ্চে গাইতে আসছেন বলেও সুখবর দিয়েছেন।
কবে, কোথায় হবে গানের অনুষ্ঠান? উত্তরে সাবিনা ইয়াসমিন বলেছেন ৩১ জানুয়ারি এবং পয়লা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুইটি অনুষ্ঠানে এবং পরে চট্টগ্রামেও অনুষ্ঠানে গান করার কথা রয়েছে তার।
কতদিন পর মঞ্চে গান করতে ফিরছেন জানতে চাইলে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “তা এক বছরের বেশিই হবে।”
এখন নিজেকে রেওয়াজ করে অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করছেন তিনি।
প্রথম দফায় ২০০৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এই সংগীতশিল্পী। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে এবং গানেও ফিরেছিলেন। মাঝের বছরগুলোয় কেবল দেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে স্টেজ শো করেছেন ।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের সাবিনার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। দেশের পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছিল এই খবর।
পরে দেশবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন সাবিনা। তিনি বলেছিলেন গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার দাঁতে ছোট একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তারপর পুরোপুরি সুস্থ হতে তাকে অনেকগুলো রেডিওথেরাপি নিতে হয়েছে।
কিছুদিন আগে সাবিনা ফিরে এসেছেন ঢাকায়। এর মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমানের মরদেহ চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে নেওয়া হলে, সেখানে এসেছিলেন সাবিনা।
ছেলেবেলার বান্ধবী অঞ্জনাকে নিয়ে পুরনো স্মৃতি সেদিন সাবিনা তুলে ধরেন সংবাদকর্মীদের সামনে।
সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।
কয়েক বছর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবিনা ইয়াসমিন বলেছিলেন, “ছোট থেকেই গান গাইছি। বাড়িতে একটা সংগীতের পরিবেশ দেখেছি। মা গান গাইছেন, বাবাও খুব ভালো গাইতেন। বোনেরা তো গাইছেন। আম্মার গানের গলা অসম্ভব সুন্দর ছিল এবং তিনি গাইতেনও খুব সুন্দর। এত সুন্দর হারমোনিয়াম বাজাতেন, আমি অবাক হয়ে দেখতাম এবং শুনতাম।“
তার শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি জানিয়ে সাবিনা বলেন, “গানের ব্যাপারটা আমার ভেতরে ছিলই। আমার মা ও নানা একসঙ্গে গান শিখতেন মুর্শিদাবাদে, ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে। তিনি সে সময়ের নামকরা একজন সংগীতজ্ঞ ও ওস্তাদ ছিলেন। সেই সময় মুসলিম নারীদের জন্য গান-বাজনা চর্চা করা সহজ ছিলো না। পরে অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সংসারে ঢুকে গান-বাজনা কিছুই হলো না আম্মার।
“আমার মায়ের মনে জেদ ছিল এজন্য, আমাদের অর্থাৎ তার সন্তানদের গান শেখানোর বিষয়ে। আরেকটা ব্যাপার, আম্মা পড়াশোনাতেও অসম্ভব ভালো ছিলেন, সেটাও চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। এজন্য আমাদের এ দুটি দিকেই সমান মনোযোগী করতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি।”
সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে।
মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের।
ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি।
সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি।
দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
নজরুল ইসলাম বাবুর কথায় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে সাবিনার কণ্ঠে অমর হয়েছে ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’; হাসান মতিউর রহমানের কথা ও মলয় কুমার গাঙ্গুলীর সুরে তার কণ্ঠে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’র মতো গান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।
শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আগের খবর
অনাড়ম্বর জন্মদিন: সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, 'সুস্থ আছি'
অঞ্জনাকে কোনোদিন অসুস্থ দেখিনি, হঠাৎ চলে গেল: সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষের ভালোবাসাই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি: সাবিনা ইয়াসমিন
লতা মঙ্গেশকরের সামনে গাওয়া, জীবনের বড় পাওয়া: সাবিনা ইয়াসমিন