সদ্যপ্রয়াত সুরকার, সংগীত পরিচালক আজাদ রহমানের সুরে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণাদায়ী গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’ গাইতে পারাকে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হিসেবে দেখেন সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।
Published : 17 May 2020, 01:19 AM
১৯৬৯ সালে নয়ীম গহরের লেখা কালজয়ী গানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে গীতিকার নয়ীম গহরের মৃত্যুর ৫ বছর পর সুরকার আজাদ রহমানও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রিয় আজাদ ভাইকে স্মরণ করলেন সাবিনা ইয়াসমিন; আজাদ রহমান তাকে ‘গানের পাখি’ বলে ডাকতেন।
শনিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’ গানের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে, কীভাবেই বা গানটি তার ক্যারিয়ারের মাইলফলক হয়ে উঠল।
“১৯৬৯ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সঙ্গে আজাদ রহমান, নয়ীম গহরসহ অনেকে ছিলেন। সেখানেই নয়ীম ভাইয়ের লেখা গানটি আজাদ ভাই সুর করে আমাকে শোনান। গান শুনে বললাম, এত কঠিন! গাইতে পারব কি না চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আজাদ ভাই সাহস দিয়েছিলেন। পরে গানের রেকর্ডিং করলাম।”
করাচি ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস স্টুডিওতে তার সঙ্গে গানে কণ্ঠ দেন নজরুল সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম; নেপথ্য কণ্ঠে ছিলেন আরো কয়েকজন শিল্পী।
রেকর্ডিংয়ের দুই বছরের মাথায় স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলো; যুদ্ধের নয় মাস ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের যে গানগুলো উজ্জীবিত রেখেছে তার মধ্যে অন্যতম এটি।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সাবিনা ইয়াসমিনের একক কণ্ঠে গানটি শ্রোতামহলে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ক্রমেই গানটি তার ক্যারিয়ারের মাইলফলক হয়ে উঠল।
সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, “স্বাধীনতার পর গানটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল। যে কোনো অনুষ্ঠানে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ দিয়েই পরিবেশনা শুরু করি। শুরুতে না গাইলেই দর্শকররা বারবার গানটি গাওয়ার অনুরোধ করেন।
গানটি গাইতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এ গান গাওয়া আমার জীবনের বড় পাওয়া।”
এর আগে ও পরে আজাদ রহমানের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন।
শেষভাগে আজাদ রহমান কাজ কিছু কমিয়ে দিয়েছিলেন; ফলে তার সঙ্গে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে সম্পর্কটা অটুট ছিল। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন আয়োজনে সাক্ষাৎ হত, ফোনে খোঁজখবর রাখতেন।
শনিবার দুপুরেও তাকে মোবাইলে কল দিয়েছিলেন সাবিনা; তবে নম্বর ব্যস্ত থাকায় কথা হয়নি। বিকালে তার মৃত্যু সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
“বেশ কয়েকদিন উনার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। কী মনে করে আজ ফোন দিলাম। এটা সম্ভবত টেলিপ্যাথি। বিকালে মৃত্যুর সংবাদটা শুনে হাউমাউ করে কান্না এসে গেছে। এমন গুণী মানুষকে হারানোর ক্ষতি পূরণ হবে না কখনো।”