জাভেদপত্নী অভিনেত্রী শাবানা আজমি বলেছেন, ওই ঘটনার তার কোনো দায় নেই।
Published : 07 Jul 2024, 02:33 PM
হিন্দি সিনেমার দুনিয়ায় ‘শোলে’, ‘ডন’ এর মত তুমুল জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেওয়া চিত্রনাট্যকার সেলিম খান ও জাভেদ আখতারের জুটি ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে অভিনেত্রী শাবানা আজমির কথা বলা হয়। চার দশক পর জাভেদপত্নী সরাসরি বলেছেন, ওই ঘটনায় তার কোনো ‘দায় নেই’।
ইন্ডিয়া টুডে লিখেছে, সেলিম খান ও জাভেদ আখতার এক সময় ছিলেন খুবই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী। ১৯৭০ সাল থেকে তারা একসঙ্গে কাজ করেছেন।
‘শোলে’, ‘ইয়াদো কি বরাত’, ‘জঞ্জির’, ‘দিওয়ানা’, ‘ত্রিশূল’, ‘কালা পাথার’, ‘দোস্তানা’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘ডন’ এর মত বলিউডের ২৪টি ক্লাসিক সিনেমার চিত্রনাট্য এই দুজনের লেখা।
বিশেষ করে অমিতাভ বচ্চনের উত্থানের নেপথ্যে এই জুটির অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়। ক্যারিয়ারে দুইজনেই যখন দারুণ কাজ করে চলেছেন, সে সময়ে জাভেদের জীবনে আসেন অভিনেত্রী শাবানা আজমি।
কিছুদিন প্রেমের পর ১৯৮৪ সালে জাভেদকে বিয়ে করেন শাবানা। এরপর ধীরে ধীরে সেলিমের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক আলগা হয় জাভেদের। এক পর্যায়ে এই জুটির কাছ থেকে যৌথ চিত্রনাট্য আসা বন্ধ হয়ে যায়।
শোনা গিয়েছিল, জাভেদ যেহেতু লেখক ও কবি তাই, তার স্বতন্ত্র পেশা এবং পরিচয় তৈরির জন্য উৎসাহ দিতেন শাবানা। তবে দূরত্ব তৈরির কারণ নিয়ে এখন পর্যন্ত সেলিম বা জাভেদের কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সেলিম খানের ছেলে অভিনেতা আরবাজ খান শাবানার সঙ্গে কথায় কথায় ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন।
আরবাজের সরাসরি প্রশ্ন ছিল, জাভেদ আখতারের সঙ্গে তার বাবার সম্পর্ক খারাপের নেপথ্যে কি শাবানা ছিলেন?
তিনি বলেন “জাভেদ আখতারের লেখালেখির ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিতে আপনি তাগাদা দিতেন বলে যে গুঞ্জন আছে, সে কারণেই নাকি এত কিছু ঘটেছে? আমি ওই সময় খুবই ছোট ছিলাম। আপনার সত্যি কি কোনো ভূমিকা ছিল?”
উত্তরে শাবানা বলেন, “তুমি কি বিশ্বাস করবে আমাকে? আমি আজো জানি না, তারা কেন আলাদা হয়ে গিয়েছেন। সেলিম ও জাভেদের ব্যক্তিগত কিছু সিদ্ধান্ত ছিল, তাই এর মধ্যে আমি নিজেকে জড়াইনি।”
শাবানা বলেন, “ওই সময়ে জাভেদ একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি (জাভেদ আখতার) কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। যেন অন্য জগতে প্রবেশ করছিলেন তিনি।
“তাদের মধ্যে ঠিক কী ঘটেছিল সত্যিই জানি না। কিন্তু এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার পরেও জাভেদ শান্ত ছিলেন। তাই আমার দিক থেকে কিছু করার কোনো অবকাশ ছিল না।”
কিছুদিন আগে জাভেদ এক অনুষ্ঠানে সেলিমের সঙ্গে তার কাজ নিয়ে বলেছিলেন, “আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন আমরা আলাদা কিছু ছিলাম না। একসঙ্গে অনেক জায়গায় সময় কাটিয়েছে, সমুদ্রের ধারে বসতাম আমরা। একে অপরের বাড়িতে যেতাম। তারপর আমাদের জীবনে আরো অনেক মানুষের প্রবেশ হল, আমাদের ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছাগুলোরও প্রকাশ হল।”
কিছুদিন আগে খবর এসেছে, এই দুই চিত্রনাট্যকারকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানানো হবে। সেলিমের ছেলে নায়ক সালমান খান এবং জাভেদের ছেলে পরিচালক-অভিনেতা ফারহান আখতার ও মেয়ে যোইয়া আখতার এ তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন।
‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ নামে ওই তথ্যচিত্রে নাকি এমন সব ভিডিও ও ছবি থাকবে, যা আগে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
তাদের লেখালেখির না শোনা গল্প এবং খুঁজে খুঁজে আইকনিক চরিত্র তৈরি করাসহ খুঁটিনাটি আরও অনেক কিছু এই তথ্যচিত্রের একটি অংশ হবে। সাক্ষাত্কার, আর্কাইভ করা ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে তৈরি তথ্যচিত্রে এই দুজনের কর্মজীবনকে প্রকাশ্যে আনবে। কীভাবে তাদের হাত ধরে একের পর এক কালজয়ী ছবি তৈরি হয়েছে, সবকিছুরই বর্ণনা থাকবে তাতে।
এই তথ্যচিত্রটি কেবল কিংবদন্তি জুটিকেই সম্মান জানানোর জন্য তৈরি হচ্ছে না। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্যেও এটি শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক কাজ হবে আশা করা হচ্ছে।
পুরনো খবর: