“আমরা ত্রাণ চাই না, আমাদের জন্য যদি বেড়িবাঁধটা টেকসই করে দেয়, তাইলে আর কিছু লাগবে না,” বলেন একজন।
Published : 05 Jun 2024, 10:10 AM
জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় ষাটের দশকে উপকূলে মাটির যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল, তার কার্যকারিতা অনেকখানি হারিয়ে যাওয়ায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জোরাল হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাঁধ দীর্ঘদিন ধরে জোয়ারের ধাক্কায় যেমন ক্ষয়ে গেছে, তেমনই কমেছে উচ্চতাও। তার বিপরীতে বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আবার জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় মাটির বাঁধও ভাঙছে অহরহ।
ফলে রেমালের মত ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত হচ্ছে উপকূল। তাতে লবণাক্ততার বিস্তার হওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
অর্ধশতাব্দীর পুরনো এই বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ঠিকমত হয় না বলে উপকূলের বাসিন্দারা বহু বছর ধরেই বলে আসছেন। এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে যে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে, তাতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামেও।
সেই গ্রামের বাসিন্দা রত্না এমিলিয়া শেখ বলছিলেন, পুরনো এ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ঠিক করা হয়; কিন্তু সেটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর মতো উপযোগী নয়।
“এত বড় ঝড়ে মাটির বেড়িবাঁধ টিকতে পারে না। আমরা ত্রাণ চাই না। আমাদের জন্য যদি বেড়িবাঁধটা টেকসই করে দেয়, তাইলে আর কিছু লাগবে না।”
ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে উপকূলের বেড়িবাঁধের অন্তত ৮৮০টি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই দুর্যোগের সময় সুন্দরবনের কোথাও কোথাও ৬-১০ ফুট উচ্চতায় প্লাবিত হয়। সেখানে গাছগাছালির তেমন ক্ষতি না হলেও হতাহত হয়েছে বন্যপ্রাণী। আর জলোচ্ছ্বাসে লবণাক্ততার বিস্তার ঘটেছে বনের বিভিন্ন অংশে।
রক্ষণাবেক্ষণে নেই মনোযোগ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের সাবেক প্রকৌশলী সাইফুল হোসেন বলেন, “ষাটের দশকের বেড়িবাঁধগুলো মাটির বেড়িবাঁধ। যে বিবেচনায় তখন করা হয়েছিল, সেটা এখন বদলে গেছে। বাঁধের উচ্চতা ২০-২৫ বছর ধরে… এখন আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
“বেড়িবাঁধগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি। বেড়িবাঁধে মানুষ বসবাস করা শুরু করেছে। গরু-ছাগল লালন-পালন থেকে ফসলাদি রাখা হয়েছে। সোজা কথা- বেড়িবাঁধের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪০-৫০ বছরে, সেই পরিমাণে রিপেয়ারিং হয়নি।”
সাইফুল হোসেন বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণে যেভাবে প্রটেকটিভ মেজার নেওয়ার কথা, সেটা সেভাবে পারেনি। মেনটেইনেন্স হয়নি। চিংড়ি ঘেরের প্রভাব তো রয়েছে।”
তিনি জানান, গত কয়েক দশকে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা বেড়েছে। তাতে বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সাইফুল বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। মানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণও দরকার, সেটা হয় না। বাস্তবে রক্ষণাবেক্ষণও সেভাবে হয় না।
“বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে একসময় ৫-৭ কিলোমিটারের জন্য একজন পাহারাদারও ছিল। সে পদও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে পোল্ডার (উপকূলীয় বাঁধের একাংশ) রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে সাইফুল হোসেন বলেন, “বেড়িবাঁধগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের, সরকারের। এ কনসেপ্ট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
“মেইটেইনেন্সটা সরকারই করবে। কিন্তু ওনারশিপ ফিলিং থাকতে হবে, এ বাঁধ আমাকে রক্ষা করতে হবে। এ বাঁধ রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। বাঁধ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে আমাকে রক্ষা করবে, সুতরাং এ বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের করতে হবে।”
>> ডাচ শব্দ পোল্ডার (Polder) অর্থ বন্যা নিরোধের জন্য নির্মিত দীর্ঘ বাঁধ (ডাইক) বেষ্টিত এলাকা।
>> পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৪টি উপকূলীয় জেলায় ১৩৯টি পোল্ডারের সমন্বয়ে ৬ হাজার কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ করে, যা ১২ লাখ হেক্টর কৃষি জমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার কথা।
উপকূলে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণের তাগিদ দিয়ে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “যে বাঁধগুলো আছে, এগুলো এতদিন থাকার ফলে অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোস্টাল এরিয়ার বাঁধগুলো নিচু হয়ে গেছে। বিভিন্ন সাইক্লোনের প্রভাব পড়েছে। অধিকাংশ জায়গায় বাঁধ নাজুক অবস্থায়।
“প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটারের মত বাঁধ আছে, সেই বাঁধগুলোকে এখন শক্তিশালী করা দরকার। বাঁধের সামনে সবুজ বেষ্টনী করা দরকার।”
বাঁধের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “আমাদের ১৩৯টা পোল্ডারের মধ্যে ১০টা উঁচু করা হয়েছে, বাকিগুলোও উঁচু করা উচিত এবং কোয়ালিটি মেনটেইন করতে হবে। মানসম্পন্ন আধুনিক ডিজাইনের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও জলোচ্ছ্বাসের বিষয়টি মাথায় রেখে এগুলো করতে হবে।”
উপকূলে ক্ষতি বারবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোকাদ্দেম হুসাইন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার এলাকার কোনো কোনো জায়গায় পুরোপুরি, কোথাও আংশিকভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। এই বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ বোর্ডের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বলেন, “বারবারই বেড়িবাঁধের এ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, কারণ এখনও আমরা পোল্ডারগুলোকে ওইভাবে ডিজাইন করে গঠন করিনি।
“আর্লি সিক্সটিজে আমরা যখন করেছিলাম, তখন শুধু টাইডাল ফ্লাডিংটাকেই কনসিডার করে ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু এ বেড়িবাঁধগুলো সাইক্লোনিক জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বিবেচনায় বা প্রটেকশনের জন্য করা হয়নি।”
মালিক ফিদা এ খান বলেন, গত কয়েক বছরে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০টির মত পোল্ডারে বেড়িবাঁধের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে।
“এর পেছনে দুটো জিনিস কনসিডার করা হচ্ছে। একটা হল- সি লেভেল রাইজ ও স্টর্ম সার্জের হাইট সমন্বয় করে করা হচ্ছে। এটা হয়ে গেলে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি আর ঢুকবে না।”
এ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রতিটি বেড়িবাঁধের ডিজাইন লাইফ থাকে। তার কিছু অপারেশনাল মেনটেইনেন্স থাকে; অপারেশন ও মেইটেইনেন্স যদি সঠিকভাবে করতে পারতাম, তাহলে হয়ত ক্ষতি অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারতাম।”
সিইজিআইএস নির্বাহী পরিচালক ফিদা বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি- আমাদের ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানে বেড়িবাঁধগুলো, কোস্টাল পোল্ডারগুলোকে হাই প্রায়োরিটি দেওয়া হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের এগিয়ে আসতে বলছি। শুধু ওয়ার্ল্ড ব্যাংক নয়, এশিয়ান ভেডেলপমেন্ট ব্যাংকও এগিয়ে আসবে।
“সি-ফেসিং যতগুলো পোল্ডার রয়েছে, সেগুলোকে আমরা যদি সাইক্লোনিক প্রটেকশন করে ফেলতে পারি- তাহলে এখন যে ধরনের ক্ষতি দেখা যাচ্ছে, তা অনেকখানি কমে যাবে।”
লবণাক্ততার প্রভাব কৃষিতে
মোংলার দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামের শিমুল সরদারের বাড়িও নড়বড়ে করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ফসলি জমি। মাসখানেক আগে বাড়ির পাশেই তিনি সবজি চাষ শুরু করেছিলেন, লোনা পানিতে গাছগুলো মরে গেছে, ভেসে গেছে শাক।
বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৮.৬ লাখ হেক্টর উপকূলীয় এলাকার মধ্যে প্রায় ১০.৫৬ লাখ হেক্টর এলাকা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততা কবলিত।
খুলনার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “প্রতি বছরই একই ঘটনা- বর্ষাকালে কোনো সমস্যা থাকে না। মূলত সমস্যাটা হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চের পরে।
“ওই সময়ে মাটি শোধন করা যায় না; কোনো প্রক্রিয়া করা যায় না। যদি কোনোভাবে মিঠা পানির ব্যবস্থা করতে পারা গেলে তাহলেও এ লবণ মাটিতে ফসল চাষ করা সম্ভব।”
এসআরডিআইএর তথ্য অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ১৮ জেলার ৯৩ উপজেলা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকার বেশিরভাগ জমি পতিত থাকে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও তার প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
লবণাক্ততা বেড়েছে সুন্দরবনেও
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বহু জনপদ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনই সুন্দরবনেও ক্ষতি হয়েছে।
বন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সোমবার পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৩৪টি হরিণ ও চারটি বন্য শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া ১৮টি জীবিত হরিণ ও একটি জীবিত অজগর সাপ উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মিহির জানান, রেমালে প্রাণ হারানো প্রাণীদের মৃতদেহ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে কটকা, কচিখালী, দুবলা, নীলকমল, আলোরকোল, ডিমের চর, পক্ষীরচর, জ্ঞানপাড়া ও শেলার চরে এবং বিভিন্ন নদী ও খালে।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বলেন, “এবারের ক্ষয়ক্ষতিটা ব্যাপকভাবে হওয়ার কথা ছিল; যতটা ব্যাপক ভাবা হয়েছিল, সেভাবে হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল হয়েছে হাই-টাইডে, তখন উইন্ড স্পিডটা কম হয়।
“সুন্দরবনে গাছগাছালির তেমন ক্ষতি এবার হয়নি। জোয়ারের সময় উইন্ড স্পিডে ক্ষতিটা তেমন হয়নি। যেহেতু জোয়ারের সময় ঝড় হয়েছে, সেজন্য জলোচ্ছ্বাসে অনেক ক্ষতি হয়েছে প্রাণীকূলের। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে চেষ্টা করছি কেমন ক্ষতি হয়েছে তা জানার।”
জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনে লবণাক্ততার বিস্তার ঘটেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো।
তিনি বলেন, “পুকুরের লবণাক্ততা দূর করাই এখন সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুকুরগুলো লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় সেগুলো এখন বন্যপ্রাণী, বনজীবী এবং বনকর্মীদের ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”
মিহির বলেন, পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বনের ভেতরে বিভিন্ন ক্যাম্প ও স্টেশনে কর্মরত বনকর্মীরা গত কয়েকদিন ধরে গোসল পর্যন্ত করতে পারছেন না। পুকুরের লবণাক্তটা দূর করার কোনো সহজ উপায় নাই।
“আমরা মেশিন লাগিয়ে সেচ দিয়ে পুকুরগুলোর লবণ পানি বাইরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। পুকুরের সব পানি সেচ দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়ার পর অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী বৃষ্টির জন্য। কাজেই এখন আমাদেরকে প্রকৃতির উপরে নির্ভর করে বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে।”
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, “বেড়িবাঁধ ধীরে ধীরে টেকসই করার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিবছর, গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।”
সবশেষ গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত নদীর পাড় ও বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, “একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। তার আগেই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নদীর পাড় ও বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এস এম অজিয়র রহমান বলেন, “ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতির মাত্রাটা হচ্ছে বিষয়। আমাদের বাঁধগুলো টেকসই করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাঁচ বছর পরে কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন তো নয়, সামান্য ক্ষতি কোথাও কোথাও হতে পারে।
“ভবিষ্যতে পুরনো বাঁধগুলো রিপ্লেস হয়ে গেলে উপকূলবাসীর (কষ্ট লাঘব হবে)… এখন যে তলিয়ে যায় বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে যে জলাবদ্ধতা হয়, সেটা ইনশাল্লাহ হবে না।”
বাঁধের একেক জায়গায় একেক ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা অজিয়র রহমান বলেন, “নদীর গতিপথের কারণে কোথাও রিপ্লেস দরকার, কোথাও সংস্কার। অবস্থা অনুযায়ী সারাদেশের একেক জায়গায় একেক কন্ডিশন। যেখানে যে ধরনের প্রয়োজন, যেখানে রিপ্লেস দরকার, যেখানে সংস্কার দরকার, যেখানে নতুন প্রয়োজন, সেখানে নতুন করা হচ্ছে। এলাকাভেদে ভিন্নতা রয়েছে।”
পুরনো খবর
উপকূলজুড়ে বেড়িবাঁধের জন্য হাহাকার
লবণাক্ততা: সুন্দরীর বনে বাড়ছে কাঁকড়া গাছের প্রতাপ
উপকূলে সুপেয় পানি: তবে তা 'জলের মত' সহজ নয়
পেটের দায় আর লোভে বিষাক্ত হচ্ছে সুন্দরবন
দুর্যোগ মোকাবিলা করে জীবনমান রক্ষা করব: শেখ হাসিনা
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত নদীর তীর ও বাঁধ দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ