যুদ্ধের কারণে সামনে এসে পড়া অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চাওয়া সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে প্রাথমিকভাবে দেড় বিলিয়ন ডলার পেতে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
চলতি অর্থবছরেই এ পরিমাণ অর্থ ছাড় পেতে ওয়াশিংটনে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
একই সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে গভর্নর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার জন্য আলোচনা করেছেন।
বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভার বাইরে শেষ দিনে সাইডলাইনে আন্তর্জাতিক এ দুই সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর।
এসব বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় রোববার রউফ তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, বাজেট সাপোর্টের জন্য সংস্থাটির কাছে আগের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া সংস্থাটির কাছে নতুন একটি বাজেট সহায়তা চেয়েছেন বলেও জানান তিনি। এটি গ্রিন রেসিলিয়ান্স ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট বা গ্রিড নামে পরিচিত কর্মসূচি, যার আওতায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়ার কথা বলেন গভর্নর।
"মোট এই এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে,’’ যোগ করেন তিনি।
এছাড়া আইএফএমের কাছ থেকে রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) কর্মসূচি থেকে ঋণ চাওয়ার কথাও জানান তিনি।
ওয়াশিংটনে গত ১০ অক্টোবর থেকে শুরু এবারের সপ্তাহব্যাপী সাধারণ সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বদলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গর্ভনর।
আইএমএফর নিয়ম অনুযায়ী, কোনো একটা ফ্যাসিলিটি থেকে ঋণ নিলে তাদের ইসিএফ ও ইএফএফ থেকেও ঋণ নিতে হয়। এটির কম্বিনেশন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একটি দেশ আইএমএফ থেকে কতটুকু ঋণ নিতে পারবে তার একটি কোটাও নির্ধারণ করা আছে।
গর্ভনর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সাত বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে আইএমএফ এর কোটা অনুযায়ী। তারমধ্যে সাড়ে চার বিলিয়ন ঋণ নিতে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিন ধাপে সংস্থাটি এই ঋণ দেবে বাংলাদেশকে। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরে দেড় বিলিয়ন এবং পরের দুই অর্থবছরে সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করবে তারা।
সাধারণত বাজেট সহায়তার মাধ্যমে নেওয়া ঋণ একসঙ্গে ছাড় করা হয়ে থাকে। আর প্রকল্পের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের অর্থ ধীরে ধীরে ছাড় করা হয়।
অর্থ দ্রুত পেতে বাজেট সহায়তার ঋণের আবেদন করেছে বাংলাদেশ বলেও জানিয়েছেন রউফ তালুকদার।
আইএমএফ এর ঋণ পেলে চলমান ডলার সংকট অনেকটা কাটবে বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলের চলতি সপ্তাহে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এ ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে নিয়মিত কোটার আওতায় পুরো অর্থ এবং রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) প্রোগ্রাম থেকে ঋণ চেয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এ ঋণের বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য আইএমএফ প্রস্তুত জানিয়ে সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান-মারি গুলদে-উলফ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী সপ্তাহেই এই আলোচনা শুরু হচ্ছে।”
সদস্য দেশগুলোর আইএমএফের কাছ থেকে তিনটি কর্মসূচি থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত কর্মসূচিগুলো হচ্ছে এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটিজ (ইসিএফ), এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য গঠিত আরএসটি।