“এবারের বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। তবে স্মার্ট মানুষ যদি নীতিহীন হয় তা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে।”
Published : 10 Jun 2024, 06:48 PM
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের ব্যাংক হিসাবে বিশাল অঙ্কের অর্থ রাখার বিষয়টি রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করতে পারল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা মিলনায়তনে এক আলোচনায় এই অর্থনীতিবিদের বক্তব্যে অনিয়ম দুর্নীতি, ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বেনজীর প্রসঙ্গও উঠে আসে।
সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ৩টি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক।
দুদকের আবেদনে এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। সব ধরনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশনাও এসেছে।
তবে, আদালতের ওই আদেশ বাস্তবায়নের আগেই ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিয়ে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বেনজীর সস্ত্রীক দেশ ছাড়েন বলে সংবাদমাদ্যমে খবর এসেছে।
বেনজীরের প্রসঙ্গ টেনে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “ব্যাংকে এত অর্থ কীভাবে রাখলেন তিনি? ব্যাংকে টাকা রাখতে হলে অনেক নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। নিয়ম তার বেলায় কী হলো? টাকা রাখলেন, আবার সেই টাকা তুলেও নিলেন। কেউ জানেন না, এসব পরিষ্কার হওয়া জরুরি।
“ব্যাংকে দশ লাখ টাকা রাখলেই কত সংস্থা খোঁজ নেয়। তার বেলায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ভূমিকা রাখল না, তা কীভাবে হয়?”
‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ র্শীষক আলোচনা সভাটির আয়োজক ছিল সম্পাদক পরিষদ ও নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-নোয়াব।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন অংশ নেন।
দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন দেখা ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন হচ্ছে কি না তা তদারকির একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় আছে মন্তব্য করে ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, “আগামী বাজেট যেন হাত-পা বাঁধা বলির পশুর মত হলো, যেন তার কিছু করার নেই। সরকার বিদেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বাড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয়। এতে সামনে বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন।
‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামের আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে, বাড়ছে ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলতা। এমন বাস্তবতায় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে বাজেট সংকোচনের বিকল্প নেই।”
অবৈধ টাকার ব্যবহার, পাচার আগেও ছিল মন্তব্য করে ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, “অর্থনীতির এই সমস্যাগুলো হজম করার মত শক্তি ছিল বাংলাদেশের। সমস্যা এতো বেড়েছে যে, হজম করার শক্তি আর নাই। এতে সমস্যা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।”
সমস্যা সামাল দিতে বাজেটে দৃঢ় পথ নির্দেশনা রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, “প্রশাসনের সর্বস্তরে অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যয়ে প্রচুর অপচয় হয়েছে। অর্থনীতিতে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়নি। অবাধে কালো টাকার সঞ্চালন ও পুঁজিপাচার হচ্ছে। দেশ একটি নৈতিকতাহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
“এবারের বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। তবে স্মার্ট মানুষ যদি নীতিহীন হয় তা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে।”
দীর্ঘদিন ধরে ভুল নীতির কারণে অর্থনীতির মৌলিক অনেক সূচকে দূর্বলতা এসেছে; নীতির অভাবে অর্থপাচার, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন, রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে জানিয়ে ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, মৌলিক নীতিগত পরিবর্তন না আনলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।