‘বদলে যাওয়া’ চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী দেবেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ রূপরেখা

চট্টগ্রামবাসীও অপেক্ষায়, নির্বাচনের এক বছর আগে পলোগ্রাউন্ডের জনসভা থেকে নতুন কী প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীচট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 03:46 AM
Updated : 4 Dec 2022, 03:46 AM

এক দশক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার যখন চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় আসছেন, সরকারের তিন মেয়াদে নেওয়া প্রায় সব বড় প্রকল্প বাস্তব রূপ পাওয়ায় ততদিনে পাল্টে গেছে বন্দরনগরীর চেহারা।

নগরী একাধিক ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রিং রোড, লিংক রোড, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল– এ সবই এখন বাস্তবতা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘বদলে যাওয়া’ এই নগরীতে রোববার অনুষ্ঠেয় জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনের ওয়াদা হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর রূপরেখা ঘোষণা করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি দেবেন ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা।

আর চট্টগ্রামবাসী অপেক্ষায় আছে, হয়ত নতুন আরও কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা আসতে পারে এ জনসভা থেকেই। 

নতুন চট্টগ্রাম

গত এক দশকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নগরীর ভেতরে এবং নগরীর সাথে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ চিত্র পাল্টে দিয়েছে এসব অবকাঠামো।  

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৮ সালে চট্টগ্রামে নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। গত ১৩ বছরে যা হয়েছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন। এর সবই উনার অবদান।

“দীর্ঘ ১০ বছর পর তিনি পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় আসছেন। চট্টগ্রামবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।” 

Also Read: নবরূপে ফিরছে সেই লালদিঘী ময়দান

Also Read: চট্টগ্রামে 'স্মরণকালের সর্ববৃহৎ' সমাবেশ হবে: কাদের

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বন্দরনগরীতে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প নিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সবার আগে ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। নগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারমুখী সড়কের সংযোগ ঘটিয়েছে এই ফ্লাইওভার।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র নিজস্ব অর্থায়নে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়।

বটতলী স্টেশন থেকে ডিটি রোডের ধনিয়ালাপাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে জুলাইয়ে। ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ফ্লাইওভার দিয়ে ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর যান চলাচল শুরু হয়।

২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

৬৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার এ ফ্লাইওভারটির মূল অংশ ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়। কয়েক ধাপে নকশা ও ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

এর অর্ধেকের বেশি অংশে আগামী বছরের শুরুর দিকে যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ।

পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধের ওপর ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড নির্মাণে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। চার লেইনের ৮৪ ফুট চওড়া সড়কটি গিয়ে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলের সাথে।

কর্ণফুলীর দুই তীরকে জুড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প ২০১৫ সালে অনুমোদনের পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়।

ইতোমধ্যে টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে দক্ষিণ টিউবের কাজ শেষ হওয়ায় ২৬ নভেম্বর তা উদযাপন করা হয়।

বাকি টিউবটির কাজ শেষে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম টানেলটি খুলে দেওয়া হতে পারে বলে শনিবার রাতে জানিয়েছেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ টানেল ধরে আনোয়ারা, বাঁশখালী হয়ে যাওয়া যাবে কক্সবাজার পর্যন্ত। টানেলের চট্টগ্রাম নগরী প্রান্তে যুক্ত আউটার রিং রোডটির সাগরিকা প্রান্ত টোল রোড হয়ে ফৌজদারহাট অংশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে।

Also Read: চট্টগ্রামের জনসভায় প্রতি উপজেলা থেকে ২০০ বাস ভরে আনার লক্ষ্য আওয়ামী লীগের

Also Read: চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভার মঞ্চ হবে নৌকার আদলে

নগরীর মধ্যভাগ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছানোর বিকল্প আরেকটি সড়ক হল বায়েজিদ লিংক রোড। 

২০১৬ সালে শুরু হওয়া ছয় লেইনের সড়কটি ৩২০ কোটি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এই সড়ক ধরে কাপ্তাই, রাঙামাটি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা যানবাহন নগরীতে প্রবেশ না করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারছে।

সড়ক অবকাঠামোর পাশাপাশি বন্দর নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। আর চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে গতমাসে।  

সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। এর সুফলও পেতে মানুষ শুরু করেছে। কিছু প্রকল্প শেষের পথে। এটা শুধু চট্টগ্রামের উন্নয়ন নয়, সারাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণী।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীর আধুনিক সড়ক অবকাঠামো, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম এমনকি কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ি পর্যন্ত বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। এই বদলে যাওয়া চট্টগ্রামের রূপকার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”   

নতুন রূপরেখা

পলোগ্রাউন্ড মাঠে যে মঞ্চ থেকে রোববার প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন, সেটি তৈরি হয়েছে নৌকার আদলে। আর মঞ্চের সামনে বড় গোল আকৃতির বোর্ডে লেখা ‘নৌকায় ভোট দিন’।

শনিবার রাতে মাঠের প্রস্তুতি দেখতে এসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আগামী দিন নিয়ে নেত্রী তার ইচ্ছা ব্যক্ত করবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা। আমাদের এবারকার নির্বাচনী ওয়াদা স্মার্ট বাংলাদেশ। এবং এ সম্পর্কে তিনি কী করতে চান, তা বলবেন।

“ভবিষ্যত করণীয় বলবেন। আজ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী শক্তির যে উত্থান, এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির বৃহত্তর ঐক্য সম্পর্কেও কথা বলবেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির যে উত্থান বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায়, এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ স্বাধীনতার আদর্শে যারা বিশ্বাস করে, আজ তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবং এবারে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংকট বিষয়ে বলবেন।”

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বলছেন, এটা তাদের দলের নির্বাচনী জনসভা। তাই দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন তাদের নেত্রী।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে কখনোই কিছু চাইতে হয় না। তিনি ভিশনারি সব প্রকল্প নিজে থেকেই দিয়েছেন। হয়ত কালও সেরকম কিছু চমক দিতে পারেন। যা আমরা কেউ ভাবিইনি।

“আর যেহেতু আগামী বছর নির্বাচন, তাই আগামীকাল অবশ্যই দলীয় নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেবেন নেত্রী। আমাদের কর্তব্য উনার নির্দেশনা অনুসারে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়া।”

এত প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার হিসাব নিকাশের মাঝে এখনো আক্ষেপ হয়ে আছে কালুরঘাটে নতুন রেল কাম সড়ক সেতুর দাবিটি। আর সিআরবি রক্ষায় আন্দোলনকারীরা চান জনসভা থেকেই ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’ রক্ষায় সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্পটি বাতিলের ঘোষণা আসুক।