চট্টগ্রামের জনসভায় প্রতি উপজেলা থেকে ২০০ বাস ভরে আনার লক্ষ্য আওয়ামী লীগের

ব্যাপক সমাগম ঘটিয়ে দৃশ্যত বিএনপির সমাবেশের জবাব দিতে চাইছে ক্ষমতাসীন দলটি।

মিঠুন চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2022, 03:14 AM
Updated : 1 Dec 2022, 03:14 AM

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতির উপস্থিতিতে হতে চলা জনসভার এক বছর পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন; দলের নেতাকর্মীরা তাই এটাকে দেখছেন নির্বাচনী জনসভা হিসেবে।

আগামী ৪ ডিসেম্বর মহানগরীর পাশাপাশি ১৫টি উপজেলা থেকেও নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম ঘটিয়ে দৃশ্যত বিএনপির সমাবেশের জবাব দিতে চাইছে ক্ষমতাসীন দলটি।

স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকেও নির্দেশনা আছে লোক সমাগম যেন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কত লোক আনতে হবে, তা জনপ্রতিনিধিদের বেঁধেও দেওয়া হয়। দূরত্ব বিবেচনায় প্রতিটি সংসদীয় আসনের ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষকে জনসভায় সমবেত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই লক্ষ্য ধরে ৪ ডিসেম্বর লোকজন আনতে উপজেলাগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি বুকিং দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গেছে। তবে অত বেশি সংখ্যায় গাড়ি মিলছে না বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। তাই সভার আগের দিনই বিভিন্ন উপজেলা থেকে নগরীতে লোকজন নিয়ে আসতেও রয়েছে নির্দেশনা।

আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি সভাও হয়েছে। এসব সভা থেকে নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তৃণমূলে জনসভার প্রচারণা চালাতে।

এদিকে সভা উপলক্ষে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব সড়কই ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এসব পোস্টারে নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ প্রত্যাশীদের আধিক্য দেখা গেছে; জনসভা সফল করতে ঘোড়ার গাড়ির র‌্যালি, মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার চলছে পুরোদমে।

আগামী ১৮ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। আর যুবলীগের সম্মেলন শেষে কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় আছে।

কমিটি ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিজেদের শক্তি’ জানান দিতে এই জনসভাকে বেছে নিয়েছেন; আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন ধরে রাখা বা নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও তাই নেমেছেন জোরেশোরে।

জনসভার প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার যৌথ উদ্যোগে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে সভা করে নেতাকর্মীদের জনসভার বিষয়ে জানানো হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন। পাশাপাশি এলাকার জনগণকেও জনসভায় আনতে কাজ চলছে।

“সব এলাকার এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ভাইস চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সকল জনপ্রতিনিধিরা কাজ করছেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আসবেন।”

সাবেক এ মেয়র বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রচুর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান আছে। যার সুফল মানুষ পাচ্ছে। তাই প্রচারণায় উন্নয়নের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে।

“নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জনসভার প্রধান অতিথি। আশা করি উনার বক্তব্যে নির্বাচন ঘিরে দিক-নির্দেশনা থাকবে।”

Also Read: চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভার মঞ্চ হবে নৌকার আদলে

Also Read: চট্টগ্রামে ‘জনসমুদ্র’ দেখানোর লক্ষ্য আওয়ামী লীগের

দলীয় সভানেত্রীর আগমন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে নাছির বলেন, “আপনারা দেখছেন, পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে মানুষের মধ্যে সাজ সাজ রব। শান্তিপূর্ণ সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে এই জনসভা করতে চাই।”

স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড়, সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন জনসভা আয়োজনের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাছের উপজেলাগুলো থেকে ২০ হাজার করে এবং দূরের উপজেলা থেকে ১০ হাজার করে লোক সমাগমের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

“প্রতিটি উপজেলা থেকে গড়ে ২০০-৩০০ করে বাস, মিনিবাস, জিপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ভাড়া করা হচ্ছে জনসভায় আগতদের পরিবহনের জন্য।”

তিনি বলেন, “যত মানুষ আসবে তার জন্য অনেক যানবাহন প্রয়োজন। অত সংখ্যক যানবাহনও মিলছে না। তাই দূরবর্তীদের আগের দিন নগরীতে এসে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মফিজুর রহমান বলেন, “আগামী বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হতে পারে। তাই এই জনসভাকে ঘিরে নির্বাচনী আমেজ ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। আশাকরি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও দলে দলে জনসভায় যোগ দেবেন।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “বেশিরভাগ সংসদ সদস্যই কয়েক মেয়াদ ধরে পদে আছেন। তাই লোক সমাগম করতে তাদের টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। লোকজনের আসা-যাওয়ার পরিবহন খরচ, খাবার এবং অন্যান্যা খরচ এমপি, থানা আওয়ামী লীগ, স্বচ্ছল নেতা এবং দলের প্রতি সহানুভূতিশীল সম্পদশালীরা দেবেন। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে।

“১০ ডিসেম্বর ঘিরে বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন ধরণের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আরও বেশি করে মাঠে আছে। আশাকরি ৪ ডিসেম্বরের জনসভা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।”

এদিকে মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুবলীগের নগর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি বলেন, “নগর যুবলীগ এক লাখ এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগকে আরও ১ লাখ সমাগমের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আমরা সেই জমায়েতের লক্ষ্যে কাজ করছি।

“নেতাকর্মীরা জনসভা উপলক্ষে উজ্জীবিত। আশাকরি জনতার বাধ ভাঙা জোয়ারে সমাবেশ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

শ্রমিক জমায়েত বিষয়ে নগর শ্রমিক লীগ নেতা আবুল হোসেন আবু বলেন, “আওয়ামী লীগ সবসময় মেহনতী মানুষের সাথে ছিল, আছে এবং থাকবে। নগরীর সাতটি সেক্টরের সিবিএ’র অধীনে ১০ হাজার শ্রমিক নিয়ে আমরা জনসভায় যোগ দেব।”

পুরো জেলা থেকে বিভিন্ন খাতের প্রায় এক লাখ শ্রমিক জনসভায় আসতে পারে বলেও জানান তিনি।

এদিকে জনসভা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ও আয়োজন বিষয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির।

২০১৮ সালের ২১ মার্চে পটিয়ায় সবশেষ হওয়া জনসভায় অংশ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আর এবারের সমাবেশের এই পলোগ্রাউন্ডে সবশেষ ২০১২ সালের ২৮ মার্চ ১৪ দলের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।