চট্টগ্রামে ‘জনসমুদ্র’ দেখানোর লক্ষ্য আওয়ামী লীগের

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চট্টগ্রামে জনসভা হবে ‘বিশাল’।

মিঠুন চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2022, 06:38 AM
Updated : 4 Nov 2022, 06:38 AM

জাতীয় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিএনপির পর সমাবেশ করতে চলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে সেখানে দলের শক্তি আর জনসমর্থনের প্রমাণ দেখাতে চায় ক্ষমতাসীনরা।

বিজয়ের মাসে আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে এ জনসমাবেশ হবে; চট্টগ্রামে সাড়ে চার বছর আগে এক সমাবেশের পর নগরীতে ফের কোনো দলীয় সভায় অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ড মাঠেই জনসভা করে বিভাগীয় রাজনৈতিক সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। সেখানে বিএনপির লোকসমাগম নিয়ে উভয় দলের নেতারা বাকযুদ্ধে নামেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে ‘জনসমুদ্র’ দেখাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘দাওয়াত’ও দেন সে সময়।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পাল্টায় এই জনসভা কিনা- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আলম মাহমুদ স্বপন বলেন, “একটি জেলার এই জনসভা বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি নয়।

“যেহেতু রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে, সেহেতু এর আকার বিশাল হবে। বিপুল জনসমাগম হবে, উৎসবমুখর হবে।

তিনি জানান, এই জনসভার প্রস্তুতিতে আগামী ৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে মহানগর ও দুই সাংগঠনিক জেলা আওয়ামী লীগের যৌথ প্রতিনিধি সভা হবে।

“ওই সভায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জনসভা সফল করতে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”

চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সমাবেশ আয়োজন করবে। চট্টগ্রামের তিন দিন পর ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু চট্টগ্রাম একটি প্রশাসনিক জেলার মধ্যে আমাদের তিনটি সাংগঠনিক জেলা; সুতরাং চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই জনসভার আয়োজন করবে।

“৪ ডিসেম্বরের এই জনসভার পরপরই ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনসভা করবেন। দীর্ঘ কোভিডের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে দেশব্যাপী সরকারি সফর করবেন। ‍উনার সরকারি সফরের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ জনসভা আয়োজন করবে। তিনি শিগগিরই আরও অনেক জেলায় জনসভায় যোগ দেবেন।”

চট্টগ্রামে এর আগে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তারও আগে ২০১৬ সালে বন্দর নগরীতে জনসভা করেছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনার আগে সেটাই ছিল নেত্রীর চট্টগ্রামে করা সবশেষ জনসভা। এর আগেও বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি ও বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রাম থেকেই নেত্রী বারবার নির্বাচনী রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছেন। এবারও চট্টগ্রামের পর তিনি কক্সবাজার এবং বিভিন্ন জেলায় জনসভা করবেন। আশা করি ৪ ডিসেম্বরের জনসভায় নেতাকর্মীদের ‍উদ্দেশ্যে তিনি নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক নির্দেশনা দেবেন।”

পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির সমাবেশের প্রসঙ্গ ধরে মফিজুর রহমান বলেন, “ওই মাঠে কত মানুষ ধারণের ক্ষমতা আছে সে বিষয়ে বিএনপির ধারণা নেই। তারা মাঠের ৪০ শতাংশ বাদ দিয়ে স্টেজ করেছিল। এরপরও সামনের দিকে ছিল খালি।

“তারপর তারা একবার বলে মানুষ হয়েছে ৫০ হাজার। আবার কখনও বলে ১ লাখ আর কখনও বলে ৫ লাখ। আমরা সংখ্যা বলছি না। তবে আমাদের জনসভা হবে স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পরিচ্ছন্ন জনসভা।”

শেখ হাসিনার জনসভা সামনে রেখে ৯ নভেম্বর বন্দরনগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দেড় হাজার প্রতিনিধিকে নিয়ে যৌথ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান মফিজুর রহমান।

সব সাংগঠনিক ইউনিটের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলার সব দলীয় জনপ্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত থাকবেন।

চট্টগ্রাম নগর ও দক্ষিণের সম্মেলন পিছিয়েছে

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১ ডিসেম্বর এবং নগরের সম্মেলন ৪ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৪ ডিসেম্বরের জনসভার কারণে এই দুই সম্মেলন কয়েকদিন পিছিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন বলেন,“দক্ষিণ জেলার সম্মেলন হবে ১২ ডিসেম্বর। আর নগর কমিটির সম্মেলন কখন হবে সে বিষয়ে ৯ নভেম্বর সিদ্ধান্ত হবে।”

নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, নগর কমিটির সম্মেলন ১০ অথবা ১৪ ‍ডিসেম্বর হতে পারে। ৯ নভেম্বর প্রতিনিধি সভায় অংশ নিতে আসা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

এবার দক্ষিণ জেলা ও নগর কমিটির সম্মেলন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বা আউটার স্টেডিয়াম মাঠে অথবা সেরকম কোনো খোলা ময়দানে হতে পারে বলছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

আরও খবর:

Also Read: ‘জনসমুদ্র’ দেখাতে চট্টগ্রামে ফখরুলকে ‘দাওয়াত’ কাদেরের

Also Read: আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর

Also Read: ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ চট্টগ্রাম থেকে বিএনপির আন্দোলন শুরু: ফখরুল

Also Read: পটিয়ায় জনসভা মঞ্চে শেখ হাসিনা